‘পরমুখাপেক্ষী হয়ে নয়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে’
নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।
তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কাছে মাথা নিচু করে চলব না, মাথা উঁচু করে চলব। তাই পরমুখাপেক্ষী হয়ে নয়, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’
রোববার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক রোধে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে মাদকাসক্তিতে না জড়ায়, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে না জড়ায়; সে জন্য আপনাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতসনতা সৃষ্টি করা এবং এটা প্রতিরোধ করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় বিশেষ ভূমিকা আপনারা রাখবেন, সেটাই আমরা চাই।’
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এই উন্নয়নে আনসার ভিডিপির ভূমিকা প্রশংসনীয়। কুটির শিল্প থেকে সার্বিক তৎপরতায় তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।’
কর্মমুখী ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবসম্পদকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলাকে এই বাহিনীর একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ হিসাবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ বাহিনীর সদস্যরা বর্তমানে যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানসম্মত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বর্তমানে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে এ বাহিনী সারাদেশে এক বিশাল পরিবর্তন সূচনা করেছে।
আনসার-ভিডিপিকে ‘মাটি ও মানুষের বাহিনী’ হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে সরকারের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এ বাহিনী বার বার উৎকৃষ্ট প্রমাণ রেখেছে।’
দেশে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা প্রতিরোধে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যরা ‘বিরাট’ ভূমিকা পালন করেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে অপারেশন রেলরক্ষা; এটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শিল্প কারখানা, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, কূটনৈতিক পাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের ভূমিকার কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও ঋণ গ্রহণের সম্মিলনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে এ ব্যাংক কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে আনসার-ভিডিপিকে সম্পৃক্ত করতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আনসার একাডেমিতে পৌঁছার পর বাহিনীর কুচকাওয়াজে সালাম ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় সরকারপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান এবং প্যারেড কমান্ডান্ট আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ।
এরপর প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য আনসার সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, খুলনা ও রাঙ্গামাটিসহ পাঁচ জেলায় আনসার ব্যাটিলিয়ন সদর দপ্তরের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের নির্মিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের স্টলও পরিদর্শন করেন।
রাইজিংবিডি/গাজীপুর/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ইভা/এসএন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন