ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খুলনার ফুলতলায় বিএনপি নেতা মিঠুর হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়নি

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৬ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনার ফুলতলায় বিএনপি নেতা মিঠুর হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : খুলনার ফুলতলা উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর (৪৫) হত্যাকারীরা শনাক্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলতলা উপজেলার নতুনহাট এলাকার নিজ বাসভবনসংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিঠু এন্টারপ্রাইজে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।


এ সময় তার দেহরক্ষী নওশের গাজীও (৪২) গুলিবিদ্ধ হন। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এ ছাড়া অপর দেহরক্ষী সিরাজুল ইসলাম (৪৫) এবং মিঠুর শ্বশুর সৈয়দ সেলিমও আহত হন।

সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ফুলতলা উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। সর্বশেষ তিনি খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে মিঠুর বাবা দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রাক্তন চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেম (ছোট কাশেম) এবং বড় ভাই একই ইউপির চেয়ারম্যান সরদার আবু সাইদ বাদলকেও দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, রাতে সরদার আলাউদ্দিন মিঠু, তার শ্বশুর সৈয়দ সেলিম ও দেহরক্ষী নওশের গাজীসহ কয়েকজন মেসার্স মিঠু এন্টারপ্রাইজে বসে ছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সশস্ত্র ৫/৬ জন যুবক মিঠুর অফিসে প্রবেশ করে। অফিসে ঢুকেই তারা মিঠুকে লক্ষ্য করে গুলি করে। মিঠুর মাথার বাম পাশে এবং বুকে গুলি লাগে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তার শ্বশুর সৈয়দ সেলিম এবং দেহরক্ষী নওশের গাজী ও সিরাজুল ইসলামও গুলিবিদ্ধ হন। পরে সন্ত্রাসীরা অফিস ভবনের সার্টারে এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে সেখান থেকে সরে যায় এবং মোটরসাইকেলযোগে ফুলতলার দিকে চলে যায়। এ হত্যা মিশনে পিস্তল, রিভলবার ও শটগান ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানায়।

মিঠুর দেহরক্ষী নওশের গাজীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেয়ার পর তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে আইসিইউতে রাখা হয়। রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান। খুমেক হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-১ এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পলাশ কুমার দে রাত সোয়া ১২টার দিকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর লাশ রাতে ঘটনাস্থলেই ছিল। পুলিশ লাশসহ অফিসটি ঘিরে রাখে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, সিআইডি পুলিশ এবং জেলা ও খুলনা মহানগর বিএনপির নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা মিঠুর পরিবারের শোকাহত সদস্যদের শান্তনা দেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ব্যক্তিগত জীবনে মিঠু এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার পুত্র জুবায়ের সরদার সামির (১৬) অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। কন্যা উম্মে ফাতেমা সিমি (১২) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তার প্রথম স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। সম্প্রতি তিনি উপজেলার প্রিন্স ব্রিক্সের মালিক সৈয়দ সেলিমের কন্যাকে বিয়ে করেন।

এর আগে ১৯৯৮ সালের ৬ মার্চ মিঠুর পিতা দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেমকে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট তার বড় ভাই একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদলকেও দুর্বৃত্তরা ফুলতলা উপজেলা পরিষদসংলগ্ন দামোদর উত্তরপাড়ার সফেদাতলায় যশোর-খুলনা সড়কে গুলি করে হত্যা করে। মিঠু ছিলেন ভাইদের মধ্যে মেঝ। সেলিম সরদার এবং রাজ সরদার নামে তার আরো দুই ভাই রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ৬ মার্চ সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর ওপর বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সে যাত্রায় তিনি আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।

এদিকে খুলনা মহানগর বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এর আগে তাকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তার পিতা ও বড় ভাইকেও হত্যা করা হয়েছে।’



রাইজিংবিডি/খুলনা/২৬ মে ২০১৭/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/এসএন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়