ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ধন্যবাদ মাশরাফি

রাব্বি খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২২, ৬ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধন্যবাদ মাশরাফি

রাব্বি খান : বাংলাদেশের সমর্থকদের তো বটেই ক্রিকেটবিশ্বের অনেকের মনোযোগের কেন্দ্রে এখন মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিজের বিদায়ী টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নড়াইল এক্সপ্রেস কেমন করেন সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কমতি ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট তার দখলে। প্রথম ম্যাচে দল হারলেও জোড়া আঘাত হেনে দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি জিতে, বিজয়ের গল্প লিখে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানালেন নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি বিন মর্তুজা। 

কত খেলোয়াড় এসেছে, কেউ খেলে গেছেন অনেকদিন। কেউবা হারিয়ে গেছেন কালের আবর্তে। কেউ নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন চোটের কাছে। কেউ বদলে গেছেন স্টারডামে, যেখানে সরলতাকে চুষে নিয়েছে তারকা খ্যাতি। একজন ১৬ বছর ধরে বদলাননি একেবারেই। হয়েছেন নিজেও পরিণত। করেছেন অন্যদেরও। তবে মানুষটা রয়ে গেছেন সাধাসিধে, ভেজালহীন, খাঁটি। 

তাইতো তার চার ছক্কার ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণাতে শুধু দর্শক নয়, চোখের কোণা ভিজেছে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে সাংবাদকর্মীদেরও। তিনি থাকবেন না শুনেই কাজ করছে এক বিশাল শূন্যতা।

অনেকেই ভেবে রেখেছিল মাশরাফি ২০১৯ বিশ্বকাপের পর সব ধরণের ক্রিকেটকেই বিদায় বলবেন। বা হয়তো খুব জলদি হলেও ২০১৭ এর জুনে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর শেষ বলবেন। কিন্তু শুধু টি-টোয়েন্টি যে তিনি এভাবে ছাড়বেন তা ভাবেননি অনেকেই। কারণ, তিনি তো ২০ ওভারের ক্রিকেটকেও সেভাবে আলাদা করে দেখেন না। যদিও ফরম্যাটটাকে যে খুব বেশি ভালোবাসেন না অন্য দুইফরম্যাটের মতো তা নিজেই বলেন। কিন্তু খেলতে নামলে সব সমান। দেন জান-প্রাণ উজাড় করে।

২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের হয়ে অভিষেক হয় নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি বিন মর্তুজার। অভিষেকের পর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ৩৬ টেস্ট, ১৭২ ওয়ানডে ও ৫৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন টাইগার অধিনায়ক। টেস্ট ক্রিকেটে ৩৬টি ম্যাচে ১ বার ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৭২টি ম্যাচে সর্বমোট ১১ বার ম্যাচসেরার পুরস্কার অর্জন করেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫৩টি ম্যাচে মোট ২ বার ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন।

২০০৭ সালে টেস্টে ভারতের সাথে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন। মাশরাফি তার ৪১তম ওডিআই ম্যাচে কেনিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট শিকার করেন ২৬ রানের বিনিময়ে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩৮ রান খরচ করে ৩টি উইকেট তুলে বাংলাদেশকে এনে দেন ৫ উইকেটের জয়। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের সাথে বল হাতে ৪ উইকেট আর ব্যাটিংয়ে ২৯ বলে ৪৪ রান করে হন ম্যাচসেরা। আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৩ বলে দুর্দান্ত ৩০ রান আর ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট অর্জন করেন।

তবে নড়াইল এক্সপ্রেস এমন এক ক্রিকেটার পরিসংখ্যান দিয়ে তার অবদান কোনভাবেই মাপা যাবে না। মাশরাফি মাঠে থাকা মানেই যেন বাড়তি কিছু। সে ম্যাশই আর টি-টোয়েন্টিতে নামবেন না লাল সবুজের জার্সি পড়ে। এটাই এখন নির্মম বাস্তবতা।

বাংলাদেশের গর্ব, বাংলাদেশ দলের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যার পা দুটো বেইমানি করলেও ঘাড়ের রগ বাঁকা করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন প্রতিপক্ষ দলগুলোকে। আমরা সবাই কমবেশি জানি, মাশরাফিকে এখনও মাঠে নামার আগে আধঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে হাঁটুতে ব্যান্ডেজ বাঁধতে হয়। মাশরাফি নিজ হাতে সিরিঞ্জ দিয়ে টেনে বের করেন তাঁর হাঁটুতে জমে থাকা পানি। তবুও দেশের টানে খেলে গেছেন এতোটা বছর। তার অসাধারণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এত দূরে আসতে পেরেছে। 

সেই ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে আমরা বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে দেখতে পেরেছি ওয়ানডেতে। কিন্তু এই বদলে যাওয়ার পেছনের নায়কটির কষ্টের অবদানটা হয়তো আমাদের চোখে খুব কমই পরেছে। প্রত্যেকটি খেলা শেষে যখন দলের খেলোয়াড়রা জয়ে উল্লাশ করতে থাকেন তখন আমাদের চোখের মনি মাশরাফি ড্রেসিং রুমে বসে সিরিঞ্জ দিয়ে টেনে বের করেন তার হাঁটুতে জমে থাকা পানি।

কিন্তু তখন জয়ের পেছনের নায়কের কষ্ট আমরা কেউই মনে রাখি না। এই আমাদের মাশরাফি, যিনি দেশের জন্য অনবরত খেলে যাচ্ছেন নিজেকে উজাড় করে। যিনি নিজেও জানেন আর একবার হাঁটুর ইনজুরিতে পড়লে তিনি আর দাঁড়াতে পারবেন না। ছোট-বড় মিলিয়ে তার হাঁটুতে অন্তত ১১ বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবুও  খেলে গেছেন বাংলাদেশ দলের এই রঙ্গিন জার্সির অধিনায়ক।

ধন্যবাদ মাশরাফি বিন মর্তুজা আপনাকে, আজ আপনার হাত ধরে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ এপ্রিল ২০১৭/রাব্বি খান/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ