ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘নদ-নদী রক্ষায় আপোশ নাই’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২২ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নদ-নদী রক্ষায় আপোশ নাই’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বুড়িগঙ্গাসহ সব নদ-নদী রক্ষায় আপোশ নাই। দখলদার যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কারো সঙ্গেই এ ব্যাপারে আপোশ করা হবে না, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নদীদূষণ রোধ ও নাব্যতা ও স্বাভাবিক গতি প্রবাহ অব্যাহত রাখা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা শেষে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আদি বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী রক্ষায় নদীর তীরে ২৮০ কিলোমিটার হাঁটারাস্তা নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছি। ১৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। ঢাকার চারটি নদীর উভয়পাড়ে ২৮০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে করতে হবে। এটা করতে পারলে কেউ নদী দখল করতে পারবে না।’

‘মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরের পাশাপাশি দরবার শরীফও নদীর জায়গা দখল হয়েছে। আমরা সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছিলাম। তারা একমত হয়েছেন, স্থানান্তরের জন্য জায়গা দরকার। আমরা যদি তাদের জায়গা দিতে পারি তাহলে সেগুলো তারা স্থানান্তর করে নেবেন। এজন্য খাস বা সরকারি জমি দেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, জানান নৌমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকাকে ঘিরে থাকা নদীগুলোর পূর্ণ জরিপ শেষ করে নদীর সীমানা পিলার বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকার আশপাশে ৯৪৭৭টি সীমানা পিলার বসানো হয়েছে। যে পিলারগুলো নিয়ে আপত্তি ছিল, সেগুলো যাচাই করে পুনঃস্থাপন করা হবে। জরিপ কাজ অব্যাহত থাকবে। জরিপ না থাকায় অনেক জায়গা অনেকে দখল করেছে। জরিপ কাজ শেষ হলে সারা দেশে নদ নদীর সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ শুরু করবো।’

‘নদীগুলোতে বসানো ৯৪৭৭টি সীমানা পিলার স্থাপন করার সময় অর্ধেক পিলার নিয়ে আপত্তি ছিল। ২০ শতাংশ আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকিগুলোও নিষ্পত্তি করা হবে। একটু সময় দরকার বললেন মন্ত্রী।

শাজাহান খান বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান বা কর্মকর্তারা যখন মাঠে যান তাদের ওপর নানা ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করা হয়, এজন্য একটু বিলম্ব হয়। তবে আমরা সব ধরনের প্রভাবমুক্ত হয়ে সীমানা পিলার স্থাপন এবং যেখানে আপত্তি আছে সেখানে পুনঃস্থাপন করব। এ ব্যাপারে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা কিন্তু নদীর সীমানা নির্ধারণ করে স্থাপনাগুলো অপসারণ করব এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।

সীমানা পিলার উচ্ছেদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, সীমানা পিলার অনেকে উচ্ছেদ করায় আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি ওই সব জায়গায় খুব শক্তিশালী পিলার স্থাপন করতে হবে। যারা পিলার অপসারণ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং উদ্ধারকৃত জায়গা সংরক্ষণ করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যেন নিয়মিত কাজ করেন সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও স্থায়ী সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুন কর্মকর্তা পেলে ইছামতী নদী উদ্ধারের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

সাভারের ট্যানারি থেকে নদী দূষিত হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো ট্যানারি থেকে যেন নদী দূষণ না হয় সেই ব্যবস্থা তারা নেবেন। ট্যানারি থেকে যেন নদী দূষণ না হতে পারে প্রয়োজনে সেখানে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে। কাজটি করবে শিল্প মন্ত্রণালয়। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি বলেছি।’

নদী দূষণরোধে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি চালু রাখার আহ্বান জানান নৌমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি থাকলেও তারা চালু রাখে না। পরিবেশের লোক গেলে তারা চালু করে। লোকজন গেলে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইটিপি চালু না থাকায় অনেক নদী দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দূষণ করছে তাদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। তালিকা হাতে আসলে আমরা জড়িতদের বিরেুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

বৈঠকে ঢাকার আরো ১১টি খাল উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, ঢাকার আরো ১১টি খাল উদ্ধারের জন্য কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। রামচন্দ্রপুর খাল এবং কল্যাণপুর খাল উদ্ধার করে এর উভয়পাশে  ওয়াকওয়ে করেছি। খাল দুটি যাতে পুনর্দখল করতে না পারে সেজন্য ওয়াসাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদসহ টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ নভেম্বর ২০১৭/নঈমুদ্দীন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়