না ঘুমিয়ে কতক্ষণ থাকতে পারবেন?
প্রতীকী ছবি
এস এম গল্প ইকবাল : আপনি সম্ভবত জানেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন প্রতিরাতে প্রায় ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে পরামর্শ দিয়েছে। আপনি হয়তো এটাও জানেন যে, মানব শরীরের নিয়মিত ঘুম প্রয়োজন যেন এটি গুরুত্বপূর্ণ শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে, যেমন- মাংসপেশী/টিস্যু মেরামত, মেমোরি কনসলিডেশন (অর্জিত স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে কনভার্ট হওয়ার প্রক্রিয়া) এবং হরমোন সিন্থেসিস।
কিন্তু সত্য এই যে, মাঝেমাঝে আপনার দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকার প্রয়োজন হয়, কারণ আপনার সামনে পরীক্ষা অথবা অন্যকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিংবা কাজের ডেডলাইন আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মানুষ ঘুম ছাড়া কতক্ষণ শারীরিকভাবে চলতে সক্ষম?
১৯৬৩ সালে ১৭ বছরের এক বালক রেন্ডি গার্ডনার টানা ১১ দিন ২৫ মিনিট ঘুম না গিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন। দ্য স্লিপ সল্যুশনের লেখক ডব্লিউ. ক্রিস্টোফার উইন্টার ম্যানসহেলথ ডটকমকে বলেন, ‘এই রেকর্ড নিয়ে সংশয় রয়েছে: তদন্তকারীরা অকপটে স্বীকার করেছেন যে, গার্ডনার এই পরীক্ষার সময় প্রতিনিয়ত ‘মাইক্রোস্লিপ’ (খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের ঘুম যা মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়) নিয়েছেন।
যদি কেউ না ঘুমিয়ে টানা কয়েকদিন জেগে থাকে, এটি তার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৯ সালে পিটার ট্রিপ নামের একজন রেডিও উপস্থাপক টানা ২০১ ঘণ্টা জেগে থেকে তার শো ব্রডকাস্ট করে একটি শিশু ফাউন্ডেশনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনদিনের মধ্যে ট্রিপ বাজে আচরণ ও গালিগালাজ শুরু করলেন এবং তার স্পাইডার হ্যালুসিনেশন হতে লাগল। যদিও তিনি কাজটি শেষ করতে পেরেছিলেন এবং এরপর দ্রুত সুস্থ হোন, কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন যে এরপর থেকে তিনি আগের মতো ছিলেন না।
ইন্টারনেটে অনেক ভাইরাল গল্প আছে যেখানে লোকজন দাবি করছে যে, তারা মোটেই ঘুমান না অথবা প্রতিরাতে মাত্র এক ঘণ্টা ঘুমান। কিন্তু উইন্টারের মতে, এসব গল্প মিথ্যে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। উইন্টার বলেন, ‘অনেকে ভাবে যে তারা ঘুমাচ্ছে না এবং তারা তাদের চিকিৎসক অথবা ফিটবিটসকে বিশ্বাস করে না (চিকিৎসক বা ফিটবিটস বলে যে তারা ঘুমিয়েছেন)।’ অন্যকথায়, লোকজন ভাবতে পারেন যে তারা প্রতিরাতে মাত্র এক ঘণ্টা ঘুমাচ্ছেন, কিন্তু তারা তাদের অজান্তেই কিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়েন, এমনকি কয়েক মিনিটের জন্য হলেও।
টানা কয়েকদিন জেগে থাকা শারীরিকভাবে প্রায় অসম্ভব, কারণ আপনার মস্তিষ্ক ঘুমানোর জন্য আপনাকে চাপ দেয়। উইন্টারের মতে, আপনি জেগে থাকার যত চেষ্টাই করেন না কেন, শেষপর্যন্ত আপনার মস্তিষ্ক মাইক্রোস্লিপে মগ্ন হয়ে পড়ে এবং এটি ছাড়া কোনো উপায়ও নেই।
দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাবের সঙ্গে অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। ঘুম বিশেষজ্ঞ এবং স্লিপ ডক্টর নামক ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল জে. ব্রুস বলেন, ‘ঘুমের অভাবের সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি, যৌনোত্তেজনা কমে যাওয়া এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের সম্পর্ক রয়েছে।’ আপনার অ্যাকসিডেন্ট করার প্রবণতা বেড়ে যাবে, বিশেষ করে যদি আপনি গাড়ি চালান।
যেহেতু একজন মানুষ কতক্ষণ জেগে থাকতে পারে তার কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, তাই দীর্ঘক্ষণ ঘুম না গিয়ে কাজ করা উচিত নয়, বলেন উইন্টার। তিনি বলেন, ‘আমি একবার ৪৮ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ছিলাম এবং এর ফলে আমার হ্যালুসিনেট হয়েছিল।’
না ঘুমিয়ে কতক্ষণ থাকতে পারবেন? এর উত্তর খুঁজতে যাবেন না। কেননা ঘুমহীনতা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তথ্যসূত্র : ম্যান’স হেলথ
পড়ুন :
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন