ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘নারীদের জন্য ভ্রমণ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছি’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নারীদের জন্য ভ্রমণ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছি’

সাকিয়া হক

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাকিয়া হক। তিনি ও তার বান্ধবী মানসী সাহা গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের নারীদের প্রথম ভ্রমণ গ্রুপ ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ’। নারীদের ভ্রমণের জন্য কাজ করছেন সাকিয়া ও তার বন্ধুরা। অলাভজনক অনলাইন ভ্রমণ গ্রুপ হিসেবে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনও পেয়েছে সংগঠনটি। নারীদের ভ্রমণ ও নানা প্রসঙ্গ নিয়ে রাইজিংবিডির মুখোমুখি হয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি সাকিয়া হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ছাইফুল ইসলাম মাছুম।

মাছুম : আপনি নারী ভ্রমণকারী হিসেবে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করছেন। ইতিমধ্যে বেশ পরিচিতিও পেয়েছেন। ভ্রমণের প্রতি আপনার আগ্রহ জন্মালো কীভাবে?
সাকিয়া হক : পরিবারের রক্ষণশীল গণ্ডির মধ্যে বড় হয়েছি। ইচ্ছে ছিল দেশ দেখার, বিশ্ব দেখার কিন্তু কখনো সুযোগ পাইনি। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর যখন হোস্টেলে উঠলাম, তখন মনে হলো এই বুঝি সুযোগ পেলাম। পরিবার ছাড়া ২০১৪ সালে আমার প্রথম ট্যুর ছিল কক্সবাজারে, ঢামেক পড়ুয়া নেপালী ও মালশিয়ান দুই বান্ধবীকে নিয়ে। পরে অন্য ভ্রমণ গ্রুপের সঙ্গে অনেক ঘুরেছি।

মাছুম : আপনি তো বাংলাদেশের নারীদের নিয়ে ভ্রমণ সংগঠন গড়ে তুলেছেন। শুরুর গল্পটা কেমন ছিল?
সাকিয়া হক : ভ্রমণ ও ফটোগ্রাফি নিয়ে দারুণ আগ্রহ আমার। ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশের নারী ভ্রমণকারীদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এক্সিবিশন করার। কিন্তু তেমন কোনো নারী ভ্রমণকারীর সাড়া পেলাম না। নারী ভ্রমণকারীদের নিয়ে কোনো সংগঠনও নেই। তখন ভাবলাম এদের নিয়ে একটা ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করি। ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর মাত্র ৫০ জন সদস্য নিয়ে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ নামে গ্রুপটির যাত্রা শুরু। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল, গ্রুপটি তিন দিনব্যাপী প্রথম ফটো এক্সিবিশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। ততদিনে ফেসবুক গ্রুপ মেম্বার ছয় হাজার। বর্তমানে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের ফেসবুক গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি।

(গ্রুপ লিংক-www.facebook.com/groups/1138612086175048)।

মাছুম: আপনাদের গ্রুপের একটি ইভেন্ট রয়েছে ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’। যেখানে স্কুটি নিয়ে আপনারা সারা দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্কুটি নিয়ে বেড়ানোর ভাবনাটা কীভাবে এলো?
সাকিয়া হক :
আগে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতাম। দেশের বাইরে গিয়ে দেখি অনেক মেয়ে স্কুটি চালায়। আমরা বাংলাদেশের মেয়েরা কেন চালাতে পারবো না? তখন ভাবলাম আমরা স্কুটি নিয়ে সারা দেশ ভ্রমণ করবো, পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় একটি করে বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন করবো। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ ইভেন্ট শুরু করি। এখানে চারটি ধাপে আমরা ২০টি জেলায় ঘুরেছি। যেখানেই গিয়েছি, সেখানকার বালিকা বিদ্যালয়গুলোতে পর্যটন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাস্থ্য সচেতনতা, বয়সন্ধিকাল, বাল্যবিবাহ ও আত্মরক্ষা বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছি।

 


মাছুম : একজন নারী ভ্রমণকারী হিসেবে কেমন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়?
সাকিয়া হক :
আমরা যখন স্কুটি চালিয়ে যাই, তখন রাস্তার দুইপাশের মানুষ অবাক হয়ে দেখে, কটু কথা ছুড়ে দেয়। বলে ‘দেশ রসাতলে গেছে, মেয়েরা বাইক চালায়’। একবার মাগুরা থেকে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার সময়, কিছু বখাটে অন্য বাইকে আমাদের বিরক্ত করার চেষ্টা করেছিল। তবে এমন প্রতিকূলতার চেয়ে মানুষের সহযোগিতা বেশি পেয়েছি। অবশ্য আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীদের সব সময় দমিয়ে রাখতে চায়। সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। গোঁড়ামি দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে সুশিক্ষার বিকল্প নেই।

মাছুম : আপনি প্রথমে বলেছিলেন পারিবারিক রক্ষণশীল গণ্ডির মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। এখন নারীদের নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে আপনার পরিবারের মনোভাব কেমন?
সাকিয়া হক : আম্মু প্রথমে জানতো না আমি ভ্রমণ করি। পরে যখন শুনেছে শুধু নারীদের নিয়ে ঘুরতে যাই, তখন স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে।

মাছুম : আপনি বিদেশেও ভ্রমণ করেছেন। সেখানে স্কুটি চালানোর অভিজ্ঞতা কেমন?
সাকিয়া হক :
এখন পর্যন্ত দুটি দেশে ভ্রমণ করেছি। মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার। মালয়েশিয়ার লাংকাওয়ি ও পেনাং সমুদ্র সৈকতে ভাড়া করে স্কুটি চালিয়েছি। মিয়ানমারেও স্কুটি চালিয়েছি। বিদেশীরা যখন শুনেছে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি তারা অবাক হয়েছে।

 


মাছুম : পড়ছেন ঢাকা মেডিকেলে, পেশায় চিকিৎসক। কিন্তু আগ্রহের বিষয় ভ্রমণ। চিকিৎসা সেবা ও ভ্রমণ দুটিকে একসঙ্গে কীভাবে দেখছেন?
সাকিয়া হক :
স্বাস্থ্যের সঙ্গে ভ্রমণের গভীর সম্পর্ক আছে। কারণ ভ্রমণ মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। মনের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে শরীরের স্বাস্থ্যও ঠিক থাকে। মেডিকেলের শিক্ষার্থী হিসেবে সারা বছর খুব চাপের মধ্যে থাকতে হয়, তাই আমরা ভ্রমণে গিয়ে খুব মজা করি। চাপমুক্ত হই। মানসিক প্রশান্তি আসে। আর আমাদের গ্রুপে বেশ কয়েকজন যেহেতু চিকিৎসা সেবার সঙ্গে যুক্ত, তাই ভবিষ্যতে প্রতিটি ভ্রমণে মেডিক্যাল ক্যাম্প করার চিন্তা আছে।

মাছুম : ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলুন।
সাকিয়া হক :
নারীদের ব্যতিক্রমধর্মী ভ্রমণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই সংগঠন গড়ে তুলেছি। এর কার্যক্রম আমরা বৃহত্তর পরিসরে নিয়ে যেতে চাই। এখন আমরা নারীর চোখে বাংলাদেশ ইভেন্ট পরিচালনা করছি। পরবর্তীতে ‘নারীর চোখে বিশ্ব’ ইভেন্ট করার পরিকল্পনা আছে।
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়