ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৫, ২ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ

কেএমএ হাসনাত: স্বল্পন্নত দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের গত দশ বছরের অন্যতম অর্জন। আয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশকে চার ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও উচ্চ আয়ের দেশ। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছে।

অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে; স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুযোগ তৈরি হলো যা ২০২১ সালের মধ্যে উত্তরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার পর এই প্রথম অর্থনৈতিক উন্নতির বড় ধরনের স্বীকৃতি পেল। স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের মর্যাদা আন্তর্জাতিক পরিম-লে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে  আন্তর্জাতিক ঋণ প্রাপ্তি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আসার পথ আরও সুগম হবে।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের শর্ত হিসেবে তিনটি সূচক অর্থাৎ মাথা পিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে নির্ধারিত মান অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এই মান ২০২১ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হলে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের সুপারিশ করবে।

পরবর্তী সময়ে চুড়ান্ত সুপারিশ ও জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০২৪ সালের মধ্য আয়ের একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ২০২৪ সালে উত্তরণ ঘটলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা থাকবে বিধায় আগামী ৯ বছরেও অর্থনীতিতে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে পরবর্তী সময়গুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা আদায়, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) সম্পাদন, দ্বি-পাক্ষিক কিংবা আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়ন, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো ও দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।

এছাড়াও ২০২১ সালে উন্নয়নশীল এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

১৯৯৬ সালে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে জাতির পিতার উন্নয়নের নীতিকে এগিয়ে নেওয়ার সাহসী যাত্রা শুরু করেন শেখ হাসিনা। দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ২০০১ সালে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে উন্নয়নের যাত্রায় ছন্দপতন ঘটে। কিন্তু সাহসী জাতি আবারো ২০০৮ সালে তাকে জাতির অগ্রযাত্রার নেতৃত্বে আসীন করে। এরপর তিনি ২০০৯ সালে জাতিকে উপহার দিয়েছেন যুগান্তকারী ‘রূপকল্প-২০২১’। আর এই রূপকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। সব সূচকে যোগ্যতা অর্জনের কারণে জাতিসংঘ ২০১৮ সালের মার্চে বাংলাদেশকে প্রাথমিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এ ধারা বজায় থাকলে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে চুড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করবে।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ যোগদান করেছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে- যা এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। দীর্ঘ পথ চলায় প্রতিবেশী দুটি দেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের স্থল ও জল সীমার নিস্পত্তি ছিল বর্তমান সরকারের বিশাল কূটনৈতিক সফলতা। স্থল সীমান্ত চুক্তির আওতায় ২০১৬ সালে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল সমস্যার সমাধান ও প্রতিবেশী দেশ দুটোর সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তি শেষে অর্জিত হয় বাংলাদেশের আয়তনের ৮৩ ভাগের সমান বিশাল সমুদ্র অঞ্চল। এ বিজয় বর্তমান সরকারের তথা আপামর জনসাধারনের ঐতিহাসিক বিজয়।

বিশাল সমুদ্রসীমা উদ্ধারের ফলে সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলনের মাধ্যমে ব্লু ইকোনোমি বিকাশের এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পাশাপাশি মানবতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মিয়ানমারে অমানবিক নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়ে জতিসংঘসহ বিশ্ব সমাজে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে এবং এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্র্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

**




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়