ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘নিরাপত্তার নামে যেন জনবিচ্ছিন্ন না হই’

মুশফিকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১৫ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নিরাপত্তার নামে যেন জনবিচ্ছিন্ন না হই’

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকেই তার মূল শক্তি এবং অনুপ্রেরণার উৎস্য উল্লেখ করে নিরাপত্তার নামে তাকে যেন জনবিচ্ছিন্ন করা না হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকার জন্য এসএসএফ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শনিবার স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দরবারে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে তাদের এটুকুই বলব- মানুষ নিয়েই আমাদের কাজ। সেই মানুষ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই সে দিকটায় একটু ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আর আমাদের যদি জনগণ থেকে আলাদা করে ফেলা হয় তাহলে জলের মাছকে ডাঙ্গায় তুললে যেমন তারা মরে যায়। আমাদের অবস্থাও কিন্তু সে রকম হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫-এ বাবা-মা-ভাইদের হারিয়ে যখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ি তখন এই জনগণের ভালবাসাই আমাকে শক্তি যুগিয়ে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দেয়। এটা সব সময় কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন এসএসএফের মহাপরিচালক মো. শফিকুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্স নামে ১৯৮৬ সালে বর্তমানের এসএসএফ গঠিত হয়। সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা বিধানই এই বাহিনীর দায়িত্ব। পরে এই বাহিনীর নাম হয় এসএসএফ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের জন্যই কিন্তু কাজ করি। আমার ওপর যখন গ্রেনেড হামলা হয়েছে আমার সঙ্গে থাকা মানুষগুলো মানবঢাল রচনা করেই কিন্তু আমাকে রক্ষা করেছে। তবে, আমি সব সময় এটাই বিশ্বাস করেছি, আল্লাহ মানুষকে সবসময় কিছু কাজ দেন সেই কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বোধ হয় আল্লাহই রক্ষা করে যান। একবার দুবার নয়, বারবার আমি মৃত্যুর মখোমুখি হয়েছি। আমার গাড়ির ওপর বোমা মারা হয়েছে। আর গ্রেনেড হামলাতো প্রকাশ্য দিবালোকে হয়েছে, সবাই দেখেছে। ট্রেনে গেছি সেখানে হামলা এবং গুলি, এমনকি পাথর পর্যন্ত ছুঁড়ে মারা হয়েছে। এভাবে বহুবার বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে। আল্লাহ যেভাবেই হোক প্রতিবার আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।



এজন্য আমার নিজের জন্য যতটা না চিন্তা হয়, আমার নিরাপত্তার জন্য যারা থাকেন তাদের জন্য সব থেকে বেশি চিন্তা হয়। যে কারণে আমি প্রতিদিন প্রতিবার নামাজ পড়ে আমার ছেলে-মেয়ে-সন্তানের জন্য যেমন দোয়া করি, দেশবাসীর জন্য দোয়া করি, সেই সঙ্গে আমার জন্য যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের জন্যও আমি সব থেকে বেশি দোয়া করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এটুকুই চাই এই ক্ষমতাটা আমার ভোগের নয়, ক্ষমতাটা হলো দেশের কাজের। আমি যেন সঠিকভাবে সঠিক চিন্তা করে দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে পারি। খোদা যেন আমাকে সেই শক্তি দেন। শুধু আমার নিরাপত্তার জন্য নয়, আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন সবাইকে যেন আল্লাহ হেফাজত করেন, সবাইকে যেন নিরাপদ রাখেন এবং সবাইকে যেন সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ দেন এবং সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা যেন পূরণ হয়- এই দোয়া আমি প্রতিদিন করে থাকি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি তখন সংবিধানকে অনুসরণ করেই আমরা সরকার পরিচালনা করি। যার শুভ ফলটা দেশের মানুষ ও জনগণ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ওয়াদাবদ্ধ জনগণের কাছে, আমাদের দায়িত্ব রয়েছে- এদেশের মানুষের কাছে, আমাদের রাজনীতিটাই এদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা, উন্নত জীবন দেওয়া।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেই জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি এদেশের মানুষের দুর্দশা নিজের চোখে দেখে সংগঠন করে চাল ভিক্ষা করেও এ দেশের মানুষের অন্ন যোগানোর চেষ্টা করেছেন। নিজের গোলার ধান, পরনের কাপড়, বই-খাতা তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘নির্বাচন ঠেকানোর নামে যে জঘন্য কাজ বিএনপি-জামায়াত করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একজন জীবন্ত মানুষকে কীভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘যে মানুষের জন্য আমরা কাজ করি সেই মানুষ পুড়িয়ে মারাই নাকি তাদের আন্দোলন। এরকম আন্দোলন আমি জীবনে কখনও দেখিনি। তবে জনগণই এটা প্রতিরোধ করেছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে শুরু করে প্রত্যেক সংস্থা কাজ করেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেটা প্রতিহত করেছে। পাঁচ শতাধিক মানুষ মুত্যুবরণ করে, ২৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে তারা হত্যা করে। হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়েছে। আহত বহু মানুষ এখনও মৃত্যুবরণ করছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের মতো গাড়ি, রেল ও রেললাইন তারা ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার গাছ কেটেছে। লঞ্চ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি মালিক এবং পরিবারকে আমরা সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনা আর ঘটুক। ভোটের মালিক জনগণ তারা ভোট দেবে তাদের ইচ্ছেমতো। যাকে তারা চাইবে তাকেই তারা পাবে (ক্ষমতায়)। তাই আমার একটাই লক্ষ্য, যতটুকু সময় পাই দেশের উন্নয়নটা যেন করে যেতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০০১ সালে সরকার গঠন করতে না পারার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন দেখেছি ২০০৫-০৬ সালে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়। আমরা ধারাবাহিক সরকার গঠনের ফলে আমাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে পারায় আজকে আমরা ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দিতে পেরেছি। ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। আর সবার বেতন ১২২ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি। যেটা পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো সরকার কখনও করতে পারেনি। যে কারণে আজ সব শ্রেণি-পেশার মানুষই কিছু না কিছু তার শুভ ফল পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় পদ্মা সেতু নিয়ে তার এবং পরিবারের সদস্য এবং মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়াতেই তারা এটা প্রমাণ করতে পারেনি বরং কানাডার আদালতে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম এখানে জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৪ সালে তিনি মন্ত্রীর মেয়ে ছিলেন। তার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলেন; তিনি নিজে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন- কাজেই দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়ার থাকলে বহু আগেই করতে পারেতেন। যা তিনি করেননি।

তিনি বলেন, ‘অন্তত বাংলাদেশের মানুষের মাথা হেঁট করিনি। এটুকু অন্তত গর্বভরে বলতে পারি। বরং মাথা উঁচু হয়েছে। বাংলাদেশ আজকে সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। যারা বাংলাদেশকে এক সময় অবহেলার চোখে দেখত তারাও এখন বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। এটাই বাঙালির প্রাপ্য ছিল যেটা আমরা জন্য অর্জন করতে পেরেছি।’

সূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুলাই ২০১৭/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়