ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে ব্যাংকারদের অনাগ্রহ

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে ব্যাংকারদের অনাগ্রহ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে কর্মরত কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে আগ্রহ খুব কম। ১০০ জন ব্যাংকারের মধ্যে ৪০ জন নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় না।

অনাগ্রহী এসব ব্যাংকার মনে করেন, নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করলে তুলনামূলক সময় দিতে হবে বেশি। ফলে পরিবারের সদস্যদের সাথে বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হবে না। অন্যদিকে, মাত্র ১৯ শতাংশের প্রথম পছন্দ নিরীক্ষা বিভাগ। আগ্রহী ব্যাংকাররা মনে করেন, শাখা পর্যায়ে কাজ করলে টার্গেট পূরণের অস্বাভাবিক চাপ রয়েছে। এজন্য অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করলে চাপমুক্ত থাকা যাবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ইন্টারন্যাল অডিট অ্যান্ড পারফরমেন্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য এবং বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম মোহাম্মদ কিবরিয়া। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মহব্বত হোসেন, বিআইবিএমের প্রভাষক মাকসুদা খাতুন এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের প্রধান কামাল হোসেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও কমপ্লায়েন্স বিভাগে (আইসিসিডি) জনবল সংকট প্রকট। এ কারণে এ বিভাগের কর্মীদের ওপর চাপ বেশি থাকে। মোট কর্মীর মাত্র ১ দশমিক ৫২ শতাংশ আইসিসিডি বিভাগে কর্মরত। একজন কর্মীর ওপর চারটির বেশি শাখা নিরীক্ষার দায়িত্ব থাকে। আর ২২টির মতো শাখার দায়িত্ব থাকে একটি অডিট টিমের ওপর।

‘ইন্টারন্যাল অডিট অ্যান্ড পারফরমেন্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার জন্য ব্যাংকিং খাতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৮৯ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকের টপ ম্যানেমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে এ প্রতিবেদন করেছে বিআইবিএম।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইসিসিডির জন্য আলাদা গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা সঠিকভাবে হলে জনগণের আমানতের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এতে ব্যাংকে ঋণ সংক্রান্ত ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যেক ব্যাংকের শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার জন্য অডিট বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তা চায় না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বড় ঋণ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণে ১ শতাংশ বোনাসের ঘোষণাও দেন যা সঠিক নয়।

পূবালী ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা আরো শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। এ বিভাগের কর্মীদের আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ব্যাংকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এসব উদ্যোগ নিতে হবে। নিরীক্ষা বিভাগের কর্মীদের আরো দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। এতে ব্যাংকগুলো অনেক অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি-বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অডিটের বিষয়ে অনেক ছাড় দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাংকিং খাতের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, কোনো অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই সফলতা অর্জন করতে পারে না। অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকের নিরীক্ষা আরো জোরদার করা উচিত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ আগস্ট ২০১৮/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়