ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নোয়াখালী পৌর শহরে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে বাসিন্দারা

মাওলা সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২৩ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নোয়াখালী পৌর শহরে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে বাসিন্দারা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী পৌর শহরের প্রায় সবগুলো এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক বাসিন্দা। সড়কগুলোতে তৈরি হয়েছে খানাখন্দের। এতে যান চলাচলেও দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন বাসিন্দারা।

শহরের প্রধান সড়ক, জজ কোর্ট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জামে মসজিদ সড়ক ছাড়া প্রায় সবগুলো সড়কেই পানি জমে গেছে। এতে সড়কে খানাখন্দ তৈরি হয়ে যান চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। শুধু সড়ক নয় পাড়া-মহল্লায় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এতে করে বাসিন্দারা ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।

নোয়াখালী পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, হাটু পানিতে ডুবে রয়েছে এলাকাগুলো। শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, কাজী কলোনি, ল’ইয়ার্স কলোনি, সরকারি আবাসিক এলাকা (ফ্ল্যাট), ফকিরপুর, উত্তর ফকিরপুর, নতুন বাসস্ট্যান্ডের পূর্বের কলেজ রোড, জজকোর্টের উকিল চেম্বারের সামনের সড়ক, শিল্পকলা, নাপিতের পুল, মাস্টারপাড়া, হরিনারায়ণপুরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রায়সবগুলো পাড়া-মহল্লায় পানি উঠেছে। এতে ঘরবন্দি হয়ে স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে বাসিন্দাদের।

লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, মোক্তার মসজিদ থেকে দক্ষিণ দিকে দরগা বাড়ি পর্যন্ত পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে একই অবস্থা। পানি কোথাও সরছে না। এমনিতে শহরের প্রায় সব সড়কের অবস্থা বেহাল। তার ওপর গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে চরম আকার ধারণ করেছে। এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে পড়ে যাওয়ায় খানাখন্দের মধ্য দিয়ে রিকশাসহ হালকা যান চললেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

হরিনারায়ণপুরের বাসিন্দা পলাশ বলেন, মহিলা কলেজ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র রতন কৃষ্ণ পালের বাসার সামনের সড়কটি কয়েক যুগ ধরে খানাখন্দে ভরা। বর্তমান পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়কটির খানাখন্দে কংক্রিট দিয়ে ভরাট করায় কিছুটা চলাচলের উপযোগী হয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পুরো সড়ক এক হাটু পানির নিচে চলে যায়। এতে কংক্রিটগুলো ধুয়ে গিয়ে পুনরায় চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

শহরের বাসিন্দাদের দাবি, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ এবং শহরের পুকুর, দীঘি ও ডোবা-নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

অনেকে জানিয়েছেন, শহরের বেশ কয়েকটি ছোট, মাঝারি পুকুর ও বড় দীঘি ভরাট করে সেগুলোতে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ হয়েছে। আবার আশপাশের খাল-নালাগুলো দখল করে সেখানেও দোকান-মার্কেট গড়ে ওঠেছে। এসবই জলাবদ্ধতার এক একটা বড় কারণ বলে মনে করেন বাসিন্দারা। তাদের মতে এসব কারণেই যুগের পর যুগ পৌর নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গত কয়েকদিন জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় শহরে নৌকায় যাতায়াতের উপক্রম হয়েছে। এজন্য তারা পৌর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন।

শহরে জলাবন্ধতা ও সড়কগুলোর বেহাল দশার কথা স্বীকার করেন নোয়াখালী পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলর। তারা বলেন, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বিগত কয়েক যুগই পৌর শহরের বাসিন্দারা দুর্ভোগ সহ্য করে আসছেন। বর্তমান পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর শহরের বেশিরভাগ বেহাল সড়কে কংক্রিট দিয়ে যাতায়াতের উপযোগী করেছে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের বড় মাধ্যম ছাগলমারা খালটির কিছু অংশ পরিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। এতে অল্প বৃষ্টিতে পানি জমছে না। তবে গত কয়েকদিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে পুনরায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত আর্থিক ব্যবস্থা না থাকায় ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও পৌর পরিষদ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছে না।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পৌর মেয়র শহিদ উল্যাহ্ খাঁন সোহেল জলাবদ্ধতা ও সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রধান মাধ্যম নোয়াখালী খালসহ আশপাশের খালগুলো ভরাট ও অবৈধ দখল হওয়ার কারণে পানি সরছে না। বর্তমান পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর শহরের ড্রেন ও ছোট-খাট খালগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে পুরো আষাঢ় মাস জুড়ে বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। তবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

তিনিসহ পরিষদের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা শহর পরিদর্শন করে  জলাবদ্ধতার কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা না থাকায় দ্রুত কোনো ভালো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। বেশ কয়েকটি প্রকল্প সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পগুলো পাশ হলে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সড়ক উন্নয়নে কাজ শুরু হবে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির দিকে কিছু কাজ হাতে নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।



রাইজিংবিডি/নোয়াখালী/২৩ জুলাই ২০১৭/মাওলা সুজন/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়