ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পর্যটকের ঢল সুন্দরবনে, কিন্তু সুবিধা অপর্যাপ্ত

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১৯ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পর্যটকের ঢল সুন্দরবনে, কিন্তু সুবিধা অপর্যাপ্ত

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : ডাঙায় বাঘ, আর জলে কুমির। মিলবে  মায়াবী হরিণের দেখা। সঙ্গে সাগরের আছড়েপড়া উত্তাল ঢেউ, নির্মল হাওয়া এবং ঝোপ-জঙ্গলের রহস্য- এক মনোরম দৃশ্য আনবে আপনার সামনে। বলছি, বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের কথা।

গা ছমছম করা ভয়ে বনের এই দৃশ্য উপভোগ করতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রেকর্ড সংখ্যক ভ্রমণ পিপাসু সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়ার্স) সভাপতি জি এম কচি জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সালে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার পর এবার-ই (২০১৭-১৮) সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। এটি গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশেরও বেশি। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৪৫টি ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকবাহী লঞ্চ মালিকরা খুশি। তিনি জানান, প্রতি বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে চলে সুন্দরবনে পর্যটক মৌসুম। এবার মৌসুমে সুন্দরবনের করমজল ও হারবাড়িয়ায় পর্যটক এসেছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার। আর কটকা ও কচিখালীর মতো অভায়রণ্যে ভ্রমণরত পর্যটকের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ হাজার। এত সংখ্যক পর্যটক কোনো বছরে ইতোপূর্বে সুন্দরবন ভ্রমণে আসেনি।
 


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটক আগমনের অন্যতম কারণ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকায় রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করার কারণে সেখানে পর্যটকরা ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনি। এ কারণে পর্যটককরা সুন্দরবন ভ্রমণকে বেছে নিয়েছেন।

তবে সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব ও সুন্দরবন বন বিভাগের অসহযোগিতা- এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের জন্য বড় বাধা বলে অভিযোগ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের। কটকা-কচিখালীতে পর্যটকদের জন্য জরাজীর্ণ জেটি মরণ ফাঁদের মতো। দীর্ঘ দিন যাবৎ তা মেরামত করা হয় না। সুন্দরবনের অভায়ারণ্য দুবলারচর, আলোরকোল, কোকিলমুনি, হিরণপয়েন্টে আগত পর্যটকদের জন্য লঞ্চ থেকে ওঠা-নামার ব্যবস্থা বন বিভাগ করেনি। কটকার জামতলার সি বিচে বাঘের চলাফেরা দেখতে বন বিভাগের ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, যেটি আরো মজবুত করা প্রয়োজন। বিভিন্ন পর্যটক পয়েন্টে সেখানকার বন ও বাঘ, হরিণের বিষয়ে পর্যটকরা সরাসরি বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু পর্যটকরা কখনো তাদের সাক্ষাৎ পান না।

মংলার অদূরে করমজলে স্বল্প সময়ে সুন্দরবন ভ্রমণ সহজ হওয়ার কারণে পর্যটক আনাগোনা হয় অনেক বেশি। সেখানে বন বিভাগের ওয়াকওয়ের রেলিং না থাকায় আগত পর্যটকেরা ঠিকমত ওঠা-নামা করতে পারেন না। এখানে আগত পর্যটকদের হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে। এ বছর আড়াইশত যাত্রী নিয়ে অনিবন্ধিত বেশ কয়েকটি লঞ্চ সুন্দরবন ভ্রমণ করেছে। এ সব যাত্রীবাহী লঞ্চের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
 


সম্প্রতি সুন্দরবন ভ্রমণ করা খুলনা ও ঢাকার একদল পর্যটক কে এম জিয়াউস সাদাত, এহতেশামুল হক শাওন, ডি এম রেজা সোহাগ, মাহবুবা তিন্নি ও জি এম রাসেল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা তিন দিনের সফরে সুন্দরবন ভ্রমণে যান। ইচ্ছা ছিল সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখবেন। কিন্তু উঠার সিঁড়ি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় তারা কোকিলমুনি এলাকায় যেতে পারেননি। বনের বিভিন্ন স্থানে ওয়াকওয়ে এবং ওয়াচ টাওয়ার জরাজীর্ণ থাকায় ভ্রমণ উপভোগ্য হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এ বিষয়গুলোর দিকে নজর দিলে সুন্দরবন ভ্রমণ আরো উপভোগ্য হবে বলে মনে করেন তারা।

গত ২-৪ মার্চ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের একটি টিম সুন্দরবনের পর্যটক আগমনের স্থানগুলো পরিদর্শন করেন। টিমটি সুন্দরবনের ৮/৯টি পয়েন্টে জেটি ও পন্টুন নির্মাণ প্রয়োজন বলে মনে করেন। এ বিষয়ে বনবিভাগ ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৫ মার্চ বৈঠক করেন তারা। কিন্তু বনবিভাগ এর  বিরোধিতা করায় এ বিষয়ে আর অগ্রগতি হয়নি। ট্যুর অপারেটরদের ক্ষোভ, বনবিভাগ সুন্দরবনের পর্যটক আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়ন করে না বরং বিরোধিতা করে।

ট্যুর অপারেটস অ্যাসোসিয়েশন সুন্দরবন (টোয়ার্স) এর কর্মকর্তারা সুন্দরবনে পর্যটকদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি বিভাগের সমন্বয় চেয়েছেন। তারা মনে করেন, দীর্ঘ দিন পরে হলেও সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন আশানুরূপ হওয়ায় এ শিল্পে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সংগঠনটি সুন্দরবনে পর্যটনের উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সুবিধা, জেটি নির্মাণ, নাব্যতা দূরীকরণ, অনিবন্ধিত লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রেলিং নির্মাণ, বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা ইত্যাদি।

সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক আমির হোসেন জানান, সুন্দরবনে আসা পর্যটকদের আরো সেবা দেওয়ার জন্যে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর নামকরণ করা হয়েছে- সুন্দরবন ইকো ট্যুরিজম সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। এতে নতুন চারটি শরণখোলা, আন্ধারমানিক, সেখেরটেক ও কৈলাশগঞ্জকে নতুন পর্যটনের স্থান যুক্ত করা হয়েছে। সঙ্গে সুন্দরবনে আগের অনুমতি দেওয়া পুরনো সাতটি পর্যটনের স্থানের উন্নয়নের বিষয়েও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটকদের ভ্রমণ আরো উপভোগ্য হবে বলে আশা করেছেন তিনি।




রাইজিংবিডি/খুলনা/১৯ মার্চ ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়