ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শেষ রক্ষা হলো না পাগনা ও শনির হাওরের

শাকির হোসাইন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেষ রক্ষা হলো না পাগনা ও শনির হাওরের

সিলেট সংবাদদাতা : প্রায় একমাস পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের ফসল বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষক।
 

কিন্তু সবচেষ্টা ব্যর্থ করে সোমবার ভোরে হাওরের উরারবন্দ বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরটি। এটি ছিল জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত হাওর। পাগনার হাওরে জেলার দিরাই উপজেলা ও নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার অনেক কৃষকদের বোরো জমি রয়েছে।

জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের পাগনার হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল রক্ষার শেষ লড়াই করেছিল এলাকার লোকজন।

তবে গত এক মাস ধরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা বাঁধে ছিল না জানিয়েছেন ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার।

পাগনার হাওরের উরারবন্দ বাঁধ এলাকা থেকে ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজিত কুমার রায় সোমবার ভোর সাড়ে ৫ টায় জানিয়েছেন, শতাধিক শ্রমিক নিয়ে তিনি রোববার রাতেও বাঁধে কাজ করছিলেন। বাঁধ রক্ষায় ৫০ জন পাহাড়াদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার ভোরে বৃষ্টির সময় উরারবন্দ বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।

তিনি গ্রাম পুলিশ, শ্রমিক ও পাহাড়ারদের নিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলেন বাঁধ রক্ষার কিন্তু পানির বেগ বেশী থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এখন হাওরে পানি ঢুকে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে।

ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু তালুকদার বলেন, হাওরের এত বড় দুর্যোগে পাউবোর কোনো অফিসারকে বাঁধে পাওয়া যায়নি। রোববার থেকে বাঁধে কাজ করার জন্য ১৭৪ জন শ্রমিক ও নজরদারি রাখার জন্য ৫০ জন পাহাড়াদার নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সোমবার ভোরে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢোকা শুরু হয়েছে।

এর আগে গতকাল রোববার টানা ২৫ দিন নির্ঘুম রাত পার করে পালাক্রমে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার কাজ করেও শেষ রক্ষা হয়নি সুনামগঞ্জের শনির হাওরের লালুর গোয়ালা বাঁধটির।

শনির হাওরের লালুর গোয়ালা বাঁধের উত্তর পাশের প্রায় ৪০ ফুট জায়গা ভেঙে এ হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এতে করে পানিতে তলিয়ে গেছে শনি হাওরের প্রায় ৮ হাজার হেক্টর বোরো ধান।

পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদীর পানি উপচে উপজেলার সবগুলো হাওর পানিতে তলিয়ে গেলেও একমাত্র সম্বল ছিল শনির হাওরটি। ফলে আশায় বুক বেঁধে হাওর পাড়ের শত শত কৃষক গত ২৫ দিন ধরে শনি হাওরের প্রত্যেকটি বাঁধে দিন রাত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু সেই চেষ্টাটুকুও অবশেষে ব্যর্থ হল। শেষ সম্বল হারিয়ে বর্তমানে হাওর পাড়ের কৃষকের আহাজারিতে আকাশ বাতাস যেমন ভারি হয়ে উঠছে, তেমনি অঝরে ঝরছে চোখের জল ।

হাওরের কিছু ধান কাটার উপযুক্ত হলেও প্রতি শ্রমিকের মজুরি হাজার টাকা হওয়ায় অনেক কৃষকই ধান কাটাননি। ফলে দিনের আলোতেই কৃষকের চোখের সামনে পানিতে ডুবছে সারা বছরের জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সোনালী ফসল।

শনির হাওর পাড়ের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক সামায়ুন কবির বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে ধান কাটতে হাওরে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখতে দেখতে আমার জমির ফসল তলিয়ে গেল।

এ ছাড়া গত তিনদিনে বারহাট্টা আটপাড়া, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা সদর ও পূর্বধলা উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে সরকারি হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় সাত হাজার হেক্টর। সব মিলে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বোরো জমির পরিমাণ হচ্ছে ৫৪ হাজার হেক্টর।

শনির হাওর পাড়ের গ্রাম গবিন্দশ্রী। এই গ্রামের কৃষক সেলিম আখঞ্জী বলেন, আমাদের শেষ সম্বল ছিল শনির হাওর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটিও চলে গেল, সারা বছর চলব কিভাবে তাই ভাবছি।

হাওর পাড়ের কৃষক নেতা তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওরটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য গত তিন সপ্তাহ ধরে হাওর পাড়ের সকল কৃষক নিয়ে বাঁধে কাজ করেছি । কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। হাওর পাড়ের মানুষগুলো কিভাবে জীবন বাঁচাবে সেটাই এখন ভাবার বিষয়।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুছ ছালাম বলেন, শনির হাওরের বাঁধ ভেঙে প্রায় আট হাজার হেক্টর বোরো জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, শনির হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে এ সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি।

প্রসঙ্গত, জেলায় এ বছর দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষায় ৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার বাঁধের কাজ চলছিল।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বৃহৎ ৩৭টি হাওরসহ মোট ৪২টি হাওরে ২০ কোটি ৮০ লাখ ব্যয়ে ২২৫টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছিল। কৃষকদের অভিযোগ পিআইসির কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারের কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পিআইসির ও ঠিকাদারের কাজ সময়মত শেষ হয়নি। 




রাইজিংবিডি/সিলেট/২৪ এপ্রিল ২০১৭/শাকির হোসাইন/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়