ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে

সচিবালয় প্রতিবেদক : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য সংখ্যা চারজন থেকে বাড়িয়ে আটজন করা হচ্ছে। এজন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন-২০১৮ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এটা আগে ইংরেজিতে ছিল- দ্য ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ড অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩। এটাকে বাংলায় রূপান্তর করে নিয়ে আসা হয়েছে। অল্প কিছু পরিবর্তন এখানে হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে ছিল টেক্সটবুক, এটাকে বাংলায় করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক। আগে বোর্ডের গঠন ছিল চেয়ারম্যান এবং চারজন সদস্য। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে একজন চেয়ারম্যান এবং বিষয়ভিত্তিক আটজন সদস্য। নয় সদস্য মিলে বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সদস্যদের মধ্যে আগে কাজ ভাগ করে দেয়া ছিল না। এখন আটজন সদস্যের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে- পাঠ্যপুস্তক, প্রাথমিক শিক্ষাক্রম, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম, মাদরাসা শিক্ষাক্রম, কারিগরি শিক্ষাক্রম, শিক্ষাক্রম (প্রশিক্ষণ), শিক্ষাক্রম (গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন) এবং অর্থ।

কোরাম হওয়ার জন্য পাঁচজনের মধ্যে তিনজন উপস্থিত হলেই হতো, এখন প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচজনের উপস্থিতিতে কোরাম হবে।

বোর্ডের কাজে দুটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা। এটা নতুন প্রস্তাবনা। আরেকটি হচ্ছে- ডিজিটাল ও মিথস্ক্রিয়া পুস্তক প্রণয়ন ও অনুমোদন।

শফিউল আলম বলেন, বোর্ড কার্যাবলী সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রদত্ত অনুশাসন ও নির্দেশনার মাধ্যমে পরিচালনা হবে, এটাও নতুন।

খসড়া আইনানুযায়ী বোর্ড প্রতিবছর ৩১ মার্চের মধ্যে সরকারের কাছে একটা রিপোর্ট দেবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা আগে ছিল না। নতুন করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দ্বারা বোর্ড পরিচালিত হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আইন চূড়ান্ত অনুমোদন : বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আইন-২০১৮ -এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৮৪ সালের বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার অর্ডিন্যান্সকে সংশোধন করে নতুনভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। বলতে গেলে তেমন বড় পরিবর্তন নেই।

তিনি বলেন, বিপিএটিসির বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীকে পদাধিকারবলে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আর তেমন নতুন প্রস্তাবনা নেই, আগে যা ছিল বলতে গেলে তাই।

চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর ব্যবহারে চুক্তি হচ্ছে ভারতের সঙ্গে : চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যে পরিবহনের জন্য এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্টে যোগাযোগের জন্য যে কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে এর চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে প্রভিশন রাখা হয়েছে, নেপাল ও ভুটান ইচ্ছা করলে যুক্ত হতে পারবে।

চুক্তির শর্তগুলো তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করা এটির উদ্দেশ্য। ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যে পরিবহন করা। দেশের অভ্যন্তরে পণ্য সামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশের ভেহিক্যাল ব্যবহার করা হবে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী (গ্যাট) এবং দেশের নিয়ম মেনে চলতে হবে, শুল্ক বিভাগ ডিউটিজ অ্যান্ড ট্যাক্সেস সমপরিমাণ বন্ড গ্রহণ করা হবে। মালবাহী কার্গো শনাক্ত করার জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতা অনুসারে মালামাল পরিবহন প্রায়োরিটি প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য গ্যাট প্রিন্সিপাল অনুসারে শুল্ককর ব্যতীত চার্জ ফি ও পরিবহন খরচ আদায় করা হবে। বাংলাদেশের স্থলবন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে স্থল বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধির ফি আদায় করা হবে।

তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী নৌ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ইন্টার গভর্নমেন্ট কমিটির মাধ্যমে উদ্ভূত সমস্যার নিরসন করা হবে এবং উভয় দেশের কর্মকর্তা সমন্বয়ে কাস্টমস অ্যান্ড পোর্ট সাব গ্রুপ গঠন করা হবে। জরুরি প্রয়োজনে বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো পক্ষ চুক্তির বাস্তবায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত করার সুযোগ আছে।

শফিউল আলম বলেন, চুক্তিটি পাঁচ বছরের জন্য সম্পাদিত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও পাঁচ বছর বলবৎ থাকবে। তবে ছয় মাসের নোটিশে যে কোনো পক্ষ চুক্তি বাতিল করতে পারবে।

ভারতের পণ্য পরিবহনের রুটটা হচ্ছে এ রকম- চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট টু আগরতলা ভায়া আখাউড়া, চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট টু ডাউকি ভায়া তামাবিল, চট্টগ্রাম ও মোংলা টু সুতাকান্দি ভায়া শেওলা এবং চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট বিবিরবাজার ভায়া সীমান্তপুর।

এক প্রশ্নের জবারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি ঠিক ট্রানজিট না কারণ আমাদের পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমাদের আইন অনুযায়ী শুল্ক ও ট্যাক্স তাদের দিতে হবে।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি মালিকাধীন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়নার হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি চায়না ৪৯ ও ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্বে একটি কোম্পানি করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এই কোম্পানির নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড।

তিনি বলেন, ওনারা স্মার্ট মিটার থেকে শুরু করে যত ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম উৎপাদন করতে পারবে। ৫০ কোটি টাকা হবে এটির অথরাইজ ক্যাপিটাল এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ দেবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি এবং ১৪ কোটি এক লাখ দেবে হেক্সিং। কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হবে পাঁচ লাখ সিঙ্গেল ফেজ স্মার্ট পেমেন্ট মিটার।

এছাড়া আজকের মন্ত্রিসভায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি ও মুক্তিযোদ্ধা এবিএম আব্দুস সামাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার আট নম্বর আসামি আব্দুস সামাদ গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।



রাইজিংবিডিঢাকা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হাসান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়