ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পানি পান যখন বিপজ্জনক

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পানি পান যখন বিপজ্জনক

প্রতীকী ছবি

মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল: প্রতিনিয়ত পুষ্টিবিদরা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, শরীরের সব কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা শরীরের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি আবার অতিরিক্ত পানি পান শরীরের জন্য সমান ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পানি পান হচ্ছে ওয়াটার ইনটক্সিকেশন যা হাইপোনাট্রেমিয়া নামেও পরিচিত। এই অভ্যাসে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এছাড়াও গুরুতর ক্ষেত্রে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হৃদরোগ, কোমা এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

সবসময় পানির বোতল সঙ্গে রাখেন
আপনি যদি সবসময় পানির বোতল সঙ্গে রাখেন এবং তা খালি হওয়া মাত্রই আবার পূর্ণ করেন, তাহলে হয়তো আপনি বেশি পানি পান করছেন। প্রতিনিয়ত পানি পান করতে থাকলে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরের সব কোষ ফুলে যায়। ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়াম বিজ্ঞানের অধ্যাপক তামারা হেউ বাটলার বলেন, ‘বেশি পানি পান করলে ব্রেইনের কোষ ফুলে যেতে পারে। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’

তৃষ্ণার্ত না হলেও পানি পান করেন
আপনার শরীরের জন্য সত্যিই বেশি পানি পান করা প্রয়োজন কিনা তা জানার সেরা উপায় হচ্ছে, তৃষ্ণা পেয়েছে নাকি পায়নি সে ব্যাপারে সচেতন থাকা। ডা. বাটলার বলেন, ‘আমাদের শরীর এমনভাবে তৈরি যা পানিশূন্যতার বিরুদ্ধে লডাই করে থাকে। যেহেতু পর্যাপ্ত পানি পান না করার আশঙ্কা থাকে, তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য শরীরের অন্তনির্মিত প্রক্রিয়া থাকে।’ এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে, তৃষ্ণা লাগা। তৃষ্ণা সবসময় শরীরকে পর্যবেক্ষণ করে এবং আরো পানি পান প্রয়োজন হলে তা অনুভব করায়।

প্রস্রাব পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পানি পান করেন
স্বাস্থ্যসম্মত পরিমাণ পানি পান করলে মূত্রের রং হালকা স্বচ্ছ হলদে হয়। অনেকে মনে করেন মূত্রের রং পরিষ্কার স্বচ্ছ হলে তা দেহের সুস্থ অবস্থার লক্ষণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মূত্রের মধ্যে কোনো রং না থাকাটাই আপনার বেশি পানি পান করার লক্ষণ প্রকাশ করে। অনেকের মতে দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা স্বাভাবিক। তবে এটা প্রত্যেকের উচ্চতা, ওজন ও পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে।

ঘন ঘন প্রস্রাব এমনকি রাতেও
প্রায়ই গভীর রাতে প্রস্রাবের বেগ পাওয়ায় ঘুমে ভেঙে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে বেশি পানি পান করছেন। স্বাভাবিক অবস্থায় সারাদিনে ৬-৮ বার প্রস্রাব হয়। যদি ১০ বারের বেশি প্রস্রাব হয় তাহলে তা শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পানের লক্ষণ। রাতের বেলা প্রস্রাবের ঝামেলা এড়াতে ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে পানি পান করুন। এতে আপনার কিডনি কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে।

বমিবমি ভাব ও বমি হওয়া
অতিরিক্ত পানি পানের লক্ষণ ডিহাইড্রেশনের লক্ষণের মতোই বলে জানান ডা. বাটলার। বেশি পরিমাণে পানি খেলে কিডনি মাঝে মাঝে পানি পরিশোধন করে পুনরায় শোষণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বমিবমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়া হয়।

সারাদিনই মাথাব্যথা থাকে
প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করলে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করলে অর্থাৎ উভয় কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করলে শরীরে লবণের ঘনত্ব কমে যায় ফলে সকল অঙ্গ পানি শোষণ করে ফুলে যায়। পানি অতিরিক্ত খেলে ব্রেইনের স্কাল্পে চাপ লাগে তখন মাথাব্যথা অনুভব হয়। এছাড়া মস্তিষ্কে ক্ষতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাতের মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে।

হাত-পা ও ঠোঁট ফোলা বা বিবর্ণ হয়
অতিরিক্ত পানি খাওয়ার ফলে সৃষ্টি সমস্যা হাইপোনাট্রেমিয়ার ক্ষেত্রে অনেকের হাত, পা ও ঠোঁট ফুলে বা রঙের পরিবর্তন হয়ে থাকে। দেহের সকল কোষ ফুলে গেলে ত্বকের কোষও যথারীতি ফুলে যেতে থাকে। আর যারা বেশি পানি পান করে তাদের রক্তে প্রচুর পানি জমা হওয়ায় দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যদি দিনে ১০ গ্লাসের বেশি পানি পান করলে এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে পানি পানের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দিন।

পেশী দুর্বল ও সহজেই খিল ধরে
স্বাস্থ্যবান শরীরে সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে ভারসাম্য বজায় থাকে। যখন আপনি বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন তখন শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের লেভেল কমে গিয়ে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেবে। ইলেক্ট্রোলাইট লেভেল কমে গেলে রগে টান বা পেশীতে খিল ধরার মতো নানা অপ্রীতিকর উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। পেশীর সমস্যা সাধারণ পানি পানের পরিবর্তে ডাবের পানি পান করেও প্রতিরোধ করতে পারেন, যা শতভাগ প্রাকৃতিক এবং ইলেক্ট্রোলাইট পরিপূর্ণ।

ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব
পানি পান করলে কিডনি পানি শোধন করে রক্তে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। যখন আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করবেন তখন কিডনির পক্ষে চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়। বেশি বেশি অপ্র‍য়োজনীয় পানি ফিল্টারিং করার ফলে কিডনিতে চাপ তৈরি হয় যা হরমোনে প্রভাব ফেলায় শরীর ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়