পাবিপ্রবিতে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় শনিবার সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ আহত হয়েছেন। আহতরা পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ও সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না করা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন সেকশন অফিসার রফিকুল ইসলাম, সেকশন অফিসার তৌফিকুর রহমান সৈকত, সিনিয়র স্টোর কিপার জমসেদ হোসেন পলাশ, নিরাপত্তা প্রহরী লিটন হোসেন, জনি, বাংলা বিভাগের মাস্টার্স শেষপর্বের আবু জাফর, শামীম হোসেন ও সাইফুল ইসলাম।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার ছিল পাবিপ্রবির প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার ডিউটির সময়ে পাবিপ্রবির সামাজিক অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম আব্দুল আলীমের সঙ্গে গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের বাগবিতাণ্ডার ঘটনা ঘটে। এরই এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ড. আলীমের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে মারপিট করে।

ঘটনার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে মারপিট ও লাঞ্ছিতের খবর জানতে পারে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের পাশে অবস্থান গ্রহণ করে। এ খবর পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থানকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

এ সময় উভয়গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে নারী কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।

এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হলে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মারপিট ও লাঞ্ছিত করে। বিক্ষুব্ধরা ক্যাম্পাসে রাখা বেশকিছু মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেকশন অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল আলীমের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী লাঠিসোটা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।’

এদিকে আহতাবস্থায় হাসপাতালের সামনে বাংলা বিভাগের মাষ্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ জানাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত এই হামলা চালায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

তারা বলেন, ড. আলীম দীর্ঘদিন ধরেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পাশাপাশি অশালীন ভাষা ব্যবহার করে আসছেন।

অন্যদিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় পাবিপ্রবির বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম আব্দুল আলীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর হামলা হয়েছে- এমন খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েই শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এদিকে পাবিপ্রবির কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জি এম শামসদ ফখরুল ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি জামসেদ হোসেন পলাশ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ও সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে।

পাবিপ্রবির প্রক্টর আওয়াল কবির জয় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিক্ষক ড. আব্দুল আলীমের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসদাচরণ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবির্ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়।



রাইজিংবিডি/পাবনা/২৮ অক্টোবর ২০১৭/শাহীন রহমান/রুহুল/শাহনেওয়াজ