ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘পারস্পরিক আস্থা শ্রদ্ধাবোধ ও শৃঙ্খলায় বন্ধনকে দৃঢ় করুন’

মুশফিকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পারস্পরিক আস্থা শ্রদ্ধাবোধ ও শৃঙ্খলায় বন্ধনকে দৃঢ় করুন’

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা ও সহানুভূতিশীলতার মাধ্যমে এই বাহিনীর বন্ধনকে দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিজিবি’র সদস্য হিসেবে আপনাদের পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, মানবিকতা, এবং সর্বোপরি পারস্পরিক সহানুভূতিশীলতাই এই বাহিনীর বন্ধন দৃঢ়তর করবে। কাজেই ভবিষ্যতে সবাই বাহিনীর নিজস্ব শৃঙ্খলার বিষয়টি ভালভাবে জেনে নেবে, চর্চা করবে এবং দেশের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করবে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে ‘বিজিবি দিবস-২০১৭’ উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের ভাষণে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি’র সদস্য হিসেবে আপনাদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। সীমান্ত রক্ষা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক কিংবা সামাজিক যেকোনো দুর্যোগে বিজিবি জাতির আস্থার ঠিকানা।

বিজিবি’র উন্নয়নে সরকারের সবরকম সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ বিবেচনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান।

 


তিনি বলেন, এই বাহিনী ২২২ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে প্রথম গড়ে তোলা হয় এই বাহিনী। সময়ের ব্যবধান ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে নানান নামে দায়িত্ব পালনের পর এখন বিজিবি নামে সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম প্রহরেই এই বাহিনীর সদস্যরা পাকসেনাদের প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১-এর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পিলখানা থেকে তৎকালীন ইপিআরের বেতার কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা ২৩ বছরের সংগ্রামে বাঙালি জাতিকে মুক্তির চেতনায় প্রস্তুত করে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর প্রচার করায় পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ দেন ইপিআর’র সুবেদার মেজর শওকত আলী।

 


তিনি বলেন, ইপিআর’র প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বাঙালি সৈনিক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ৮১৭ জন শাহাদত বরণ করেন। এই বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ আমাদের গর্বের প্রতীক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইপিআর’র আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে বিজিবি’র ইতিহাস সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি তাদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেল্স (বিডিআর)-এর ১ম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি এ বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে অনেক কার্যক্রম হাতে নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আমরা সরকার গঠনের ১ মাস ১৯ দিনের মাথায়, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যা দ্রুত সমাধান করে আমরা নতুন আইন করি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পুনর্গঠন করি। তৎকালীন বিডিআর’র ট্রাজিক ঘটনায় শহীদ ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনসাধারণের জান-মাল রক্ষায় বিজিবি’র সদস্যদের দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

 


তিনি বলেন, সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সমস্যা, মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা, রামুর বৌদ্ধ পল্লীর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন, পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ছিটমহলবাসীকে পুনর্বাসনে আপনাদের পদক্ষেপ বিজিবি’র সুনাম ও মর্যাদাকে বৃদ্ধি করছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে এলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তফা কামাল এবং বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্যারেড কমান্ডার এবং বিজিবি’র উপ-মহাপরিচালক মো. জুলফিকার আলী।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসমারিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৫১ জন বিজিবি সদস্যের মাঝে বীরত্বপূর্ণ এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে বিজিবি সদস্যদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ ডিসপ্লে ‘উৎস থেকে মোহনা’ উপভোগ করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন দরবারে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকারের সময়ে বিজিবি’র প্রভূত উন্নয়ন সাধনের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনার সময়ে বিজিবি সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করায় সেগুলো তাদের মানসিক মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।’

পরে প্রধানমন্ত্রী দরবারে দু’জন বিজিবি সদস্যের প্রশ্নেরও জবাব দেন। বিজিবি মহাপরিচালক এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট এবং চিত্রকর্ম উপহার দেন।

দরবার শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি দিবস-২০১৭ উপলক্ষে কেক কাটেন এবং সীমান্ত পোস্ট থেকে আগত বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

সূত্র : বাসস।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ডিসেম্বর ২০১৭/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়