ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-আঙ্কারা

রফিক মুয়াজ্জিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পারস্পরিক স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-আঙ্কারা

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম আজ দুই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পারস্পরিক স্বার্থে একযোগে কাজ করা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।

দুই নেতা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোসহ দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং পরস্পরকে সমর্থন করার অঙ্গিকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সফররত তুর্কী প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মামুদ আলী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রমুখ।

তুরস্কের পক্ষে ছিলেন- দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও তুর্কি-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের কো-চেয়ার বেকির বোজাগ ও বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজতুর্ক প্রমুখ।

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম দুই দিনের সরকারি সফরে গতকাল সোমবার বাংলাদেশে আসেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তুরস্ক পাশে থাকবে।

তিনি বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের প্রতি অব্যাহত সমর্থনের জন্য তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান।

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে খুবই সুদৃঢ় ও ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কের গণতন্ত্র ও সরকারের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের কথা তুরস্ক ভুলে যায়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় ও অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ইস্যুতে খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোসহ দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং পরস্পরকে সমর্থন করার অঙ্গিকারও পুনর্ব্যক্ত করেছি।’

তিনি আরো বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, পর্যটন ও যোগাযোগের মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা সংহত করার ব্যাপারেও তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), শিল্প উৎপাদন, স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, সামর্থ্য বিনির্মাণ, জ্ঞান বিনিময় ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে সহায়ক হবে।

২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য বর্তমান সরকারের লক্ষ্যের প্রশংসা করে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উন্নয়নের অংশীদার হতে তার দেশ প্রস্তুত রয়েছে।

তুর্কি প্রধানমন্ত্রী সংকট কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানান। তিনি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সহায়তায় বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দেন।

তিনি জেরুজালেম ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং এই ইস্যুতে ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির উপস্থিতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে বলেন, অত্যন্ত আন্তরিক ও উষ্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক হয়।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্টস পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কসহ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যবাধা প্রত্যাহারে তুর্কি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দেশে ফেরার পরে এ বিষয়টি দেখবেন বলে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগে সম্মত হলে তাদের জন্য ভূমি বরাদ্দ দিতে বাংলাদেশ সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি কিছু পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা অবাধ বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আগামী বছরের এপ্রিলে আঙ্কারায় অনুষ্ঠিতব্য দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে এই ইস্যুতে আলোচনায় সম্মতি ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে তুরস্ক-বাংলাদেশ আন্তঃপার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুর্কি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট না করেই বাংলাদেশ এই ইস্যুর সমাধান চায়। এ প্রসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি এই ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী ভাষাণচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় গৃহ ও হাসপাতাল নির্মাণে তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। রোহিঙ্গাদের নতুন আশ্রয়স্থান হিসেবে ভাষাণচর নির্ধারণ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর সফরে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্ভাবনা কাজে লাগানোর উদ্যোগ এক ধাপ এগিয়ে গেল।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ডিসেম্বর ২০১৭/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ