ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাহাড় চূড়ায় মেঘের মিছিল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাহাড় চূড়ায় মেঘের মিছিল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: ছোটবেলায় কল্পনার মেঘের রাজ্যে উড়তে চাননি, এমন মানুষ খুব কমই আছে। কিন্তু কেউ যদি সত্যি সত্যি মেঘের রাজ্যে এসে পড়ে তখন কী হবে?

চারদিকে রাশি রাশি মেঘ। হাত বাড়ালেই তুলোর মতো ধূসর সাদা মেঘ। চার পাশে সারি সারি সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ। হঠাৎ সূর্যোদয়ে রোদের ঝিলিক, মেঘগুলো সব উধাও! কিংবা হঠাৎ করে মেঘের মিছিল, আলতো জলের ছোঁয়া। আবার হঠাৎ করেই রোদের ঝলকে সব ভোজবাজির মতো অদৃশ্য। এমন দৃশ্যপট মেঘ পাহাড়ের স্বর্গরাজ্য রাঙামাটির সাজেক ভ্যালির কংলাক পাহাড় চূড়ায় দেখা যায়।

সমতল থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় কংলাক পাহাড় চূড়ায় মেঘ পাহাড়ের মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয় এক অপার্থিব সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ভিড় জমায় শত শত দর্শনার্থী। কংলাক পাহাড় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে রয়েছে মিজোরাম প্রদেশ। কংলাক থেকে লুসাই পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। সাজেক ভ্রমণরত পর্যটকদের কাছে কংলাক এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রুইলুই পাড়া হতে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে, সাজেকের হেলিপ্যাড থেকে ৩০-৪০ মিনিট খাড়া পাহাড় ট্রেকিং করে পাহাড় চূড়ায় যেতে হয়।



মেঘ দেখতে সম্প্রতি কংলাক পাহাড় চূড়ায় এসেছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা আখতার জাহান। তিনি বলেন ‘মাটি থেকে আকাশে মেঘ দেখলে এক রকম। আকাশের কাছাকাছি গিয়ে মেঘ দেখলে আরেক রকম। কংলাক পাহাড় চূড়ায় রাশি রাশি মেঘ দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে বরফের নদী।’

কংলাক থেকে একই সঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য চোখে পড়ে। ‘ভোর বেলায় সূর্যোদয়ের দৃশ্য সে এক অন্য রকম অনুভূতি’ বলছিলেন তরুণ ফটোগ্রাফার আসিফ মোসাদ্দেক। আসিফ বলেন, এমন সুন্দরের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। এটা দেখে মনের মধ্যে একাধারে প্রবল আনন্দ এবং শূন্যতা কাজ করেছে, ইচ্ছে করছিল নিজেকে মিশিয়ে দিই সূর্যের রঙগুলোর সঙ্গে।’

কংলাকের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে ৩০টি আদিবাসী পরিবার। কংলাক পাড়া নামে পরিচিত এই পাড়ায় আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে লুসাই, চাকমা ও ত্রিপুরা। পাড়ায় শত শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বাস করছেন চং থিয়েরার (৭০) পরিবার। তিনি জানান, কংলাক পাহাড়ে পর্যটক আসা শুরু করেছে ২০০৫ সাল থেকে। কিন্তু গত দুই বছর যাবৎ পর্যটকের ভিড় সবচেয়ে বেশি।



টং ঘরের বারান্দায় চা, কফির দোকান চালান চং থিয়েরার মেয়ে আপুই পাংকো (২৩)। তিনি জানান, দর্শনার্থী বেশি হলে দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি হয়। তবে অধিকাংশ দর্শনার্থী এসে সঙ্গে সঙ্গে ফিরে যায়। যদি কংলাক পাড়ায় পর্যটকদের রেস্ট হাউজ থাকতো, তাহলে আয় আরো বেশি হতো।

মেঘের রাজ্যের এই পাড়ায় রয়েছে পানি সংকট। এখানে বৃষ্টির পানি একমাত্র ভরসা। বর্ষায় সহজে পানি সংগ্রহ করা গেলেও, শীতকালে প্রায় ১ কিলোমিটার খাড়া পাহাড়ি ঢাল হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হয়। কংলাক পাড়ার প্রতিটি বাড়িতেই চোখে পড়বে একাধিক ও বড় বড় পানির রিজার্ভার।

বাংলাদেশের পর্যটন বিকাশে কাজ করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাভেল বাংলাদেশ’। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আহসান রনি বলেন, বাংলাদেশে এমন অনেক জায়গা আছে যা পৃথিবীর পর্যটকদের জন্য ট্রাভেল ডেস্টিনেশন হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম সাজেকের কংলাক পাহাড় চূড়া। দেশের বাইরের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে অনলাইনে এসব জায়গাগুলোর তথ্য আরো বাড়াতে হবে। বাংলাদেশকে করে তুলতে হবে ট্রাভেল ফ্রেন্ডলি, তাহলেই এদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা পৃথিবী থেকে দর্শনার্থী আসবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ নভেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়