ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পিঠের নিচের দিকে ব্যথার ১৪ কারণ (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ৩১ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পিঠের নিচের দিকে ব্যথার ১৪ কারণ (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বিশ্বের অন্যতম কমন স্বাস্থ্য সমস্যা হলো পিঠ ব্যথা এবং কাজ সম্পর্কিত অসামর্থ্যতার একটি সর্বাধিক কমন কারণ হলো পিঠের নিচের দিকে ব্যথা। ১২ সপ্তাহ বা এর বেশি সময় ধরে পিঠ ব্যথা হলে তাকে ক্রনিক ব্যাক পেইন বলে এবং পিঠের নিচের ব্যথা হলে বলে ক্রনিক লোয়ার ব্যাক পেইন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড স্ট্রোক (এনআইএনডিএস) অনুসারে। পিঠের নিচের দিকে ব্যথার ১৪টি কারণ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ৭টি কারণ আলোচনা করা হয়েছিল। আজ শেষ পর্বে আরো ৭টি কারণ আলোচনা করা হলো।

* পায়ের সমস্যা
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন ও ব্রোনক্সের পোডিয়াট্রিস্ট আর্নেস্ট আইজ্যাকসন বলেন, ‘শরীরের ফাউন্ডেশন হলো পা। সঠিক ফাউন্ডেশন ছাড়া একটি ভবন যেমন সোজা দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি আমরাও পারি না। যেকোনো পায়ের সমস্যা পিঠ ব্যথার কারণ হতে পারে, কারণ এটি চলাফেরার স্বাভাবিক প্যাটার্নকে বিঘ্নিত করতে পারে- এর ফলে অন্যান্য গঠনের (যেমন- হাঁটু, নিতম্ব ও পিঠ) ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়।’ যদি আপনার পায়ে ভালো সাপোর্ট না থাকে (উদাহরণস্বরূপ, আর্কের দুর্বলতার কারণে) অথবা এক পা অন্য পায়ের চেয়ে বেশি লম্বা হয় (আপনার ধারণার চেয়েও বেশি কমন), তাহলে কোনো অর্থোটিক ইনসার্ট আপনার পা দুটিকে সমান্তরাল করতে সাহায্য করবে এবং পিঠের ওপর চাপ পড়া প্রতিরোধ করবে।

* ফাইব্রোমায়ালজিয়া
এটি একটি কমন ও চিকিৎসাযোগ্য পিঠ ব্যথা। ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, স্লিপ ও পেইনের এক্সপার্ট জ্যাকব টেইটেলবাউম বলেন, ‘ফাইব্রোমায়ালজিয়া সারা শরীরের শক্তি সংকটের প্রতিনিধিত্ব করে এবং হরমোনাল ঘাটতি, ইনফেকশন, পুষ্টির অভাব এবং অন্যান্য আরো অনেক ট্রিগার দ্বারা এ অবস্থা হয়ে থাকে।’ অপর্যাপ্ত শক্তি মাংসপেশিকে সংক্ষিপ্ত অবস্থানে বদ্ধ করে রাখে- যা পিঠ ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। বদ্ধ মাংসপেশির কারণে পিঠের এমন স্থানে চাপ পড়তে পারে যা সরাসরি মেরুদণ্ডের ওপর নয় এবং এটি ব্যথাকে অ্যাফেক্ট করতে পারে, বলেন টেইটেলবাউম। তিনি যোগ করেন, ‘যদি আপনার বুড়ো আঙুলের চাপে ব্যথার পরিবর্তন হয়, তাহলে অন্যান্য কারণ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত ধরে নিতে পারেন যে এটি মাংসপেশিসংক্রান্ত ব্যথা।’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রনিক মাংসপেশি ব্যথা থেকে স্নায়ু ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে, তাই তিনি ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

* হাড়ের বৃদ্ধি
আপনার মেরুদণ্ডের হাড়ে বোন স্পুর বা হাড়ের বৃদ্ধি হতে পারে। সাধারণত বোন স্পুর নিজে নিজে যন্ত্রণাদায়ক নয়, কিন্তু তারা স্পাইনাল কর্ড বা স্নায়ুরজ্জু এবং স্মায়ুর ওপর চাপ ফেলতে পারে, বলেন নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন সেন্ট্রাল ডুপেজ হসপিটালের নিউরোসার্জন পিটার লি। এর ফলে উদ্ভূত ব্যথা নিতম্ব থেকে পা পর্যন্ত ছড়াতে পারে- এটিকে বলে সায়েটিকা। তীব্র পর্যায়ে সায়েটিকা পায়ে দুর্বলতা বা অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে। ডা. লি বলেন, ‘রোগীরা প্রায়সময় আমাকে বলেন যে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা কাজ করার ফলে তাদের ব্যথা আরো বেড়ে যায়, কিন্তু সামনের দিকে ঝুঁকলে ব্যথা উপশম হয়- তারা এটি বিশেষ করে তখনই লক্ষ্য করেন যখন তারা সুপারমার্কেটে কেনাকাটা করার সময় কার্টের ওপর ঝুঁকেন। আমরা এটিকে শপিং কার্ট সাইন বলি।’ আপনার বোন স্পুর মূল্যায়ন করতে ফিজিশিয়ানে বিস্তারিত পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে এক্স-রে বা এমআরআই বা উভয়টি করতে পারেন। প্রদাহবিরোধী ওষুধ ও ফিজিক্যাল থেরাপি সহায়ক হতে পারে। কিছুক্ষেত্রে স্টেরয়েড ইনজেকশন বা অস্ত্রোপচার নির্দেশিত।

* ক্যানসার
এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে মেরুদণ্ডের ক্যানসার পিঠ ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু ক্যানসার সম্পর্কিত পিঠ ব্যথা স্তন বা ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে বেশি কমন, বলেন ডা. রাজনিশ। তিনি যোগ করেন, ‘এসব ক্যানসার হাড়ে ছড়াতে পারে, যার ফলে টিউমারের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ফ্র্যাকচার, আর্থ্রাইটিস বা স্নায়ু নিপীড়ন হতে পারে।’ কোলন, রেক্টাল ও ওভারিয়ান ক্যানসার থেকেও পিঠ ব্যথার উৎপত্তি হতে পারে, আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি অনুসারে। একজন অনকোলজিস্ট ক্যানসার শনাক্ত করতে পারেন এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারেন।

* অতিরিক্ত ওজন
বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) হলো ওজন-উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে শরীরের চর্বি পরিমাপ করা। যদি আপনার বিএমআই ২৫ এর ওপরে (অতি ওজন) অথবা ৩০ এর ওপরে (স্থূলতা) হয়, তাহলে আপনি ক্রনিক লোয়ার ব্যাক পেইনের বর্ধিত ঝুঁকিতে আছেন। ওয়াশিংটন ডিসির কাইরোপ্র্যাক্টর অ্যালান কর্নফিল্ড বলেন, ‘এই অতিরিক্ত ওজন আপনার মেরুদণ্ডকে সবসময় চাপে রাখছে। অন্যদিকে মেদবহুল পেট আপনাকে সামনের দিকে টেনে নিচের পিঠকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ব্যায়াম করে, মানসিক চাপ কমিয়ে এবং পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে ওজন হ্রাস করতে পারেন।

* ধূমপান
ধূমপায়ীদের ক্রনিক লোয়ার ব্যাক পেইন হওয়ার ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় তিনগুণ বেশি, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুসারে। ধূমপান কশেরুকার কুশন হিসেবে কাজ করা ডিস্কে রক্তপ্রবাহ সীমিত করে, যা ক্ষয়ের হার বৃদ্ধি করে এবং ব্যথা সৃষ্টি করে। অতি ধূমপান জনিত কাশি থেকেও পিঠ ব্যথা হতে পারে, বলেন ডা. কর্নফিল্ড। ধূমপান স্পাইনাল স্টেনোসিসের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে, যেখানে মেরুদণ্ডের মধ্যকার জায়গা সংকুচিত হয়ে স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলে শপিং কার্ট সাইনের কারণ হতে পারে। এখনো সময় আছে, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।

* উদ্বেগ ও বিষণ্নতা
উদ্বেগ ও বিষণ্নতা ক্রনিক লোয়ার ব্যাক পেইন সৃষ্টি করতে না পারলেও পিঠ ব্যথার তীব্রতা বাড়াতে পারে। ডা. রাজনিশ বলেন, ‘বিষণ্নতা ক্রনিক ব্যথাকে চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছাতে পারে, অন্যদিকে ব্যথা বিষণ্নতার উদ্রেক করতে পারে। এদের একটির চিকিৎসা করলে অন্যটির উপশম হতে পারে।’ উদ্বেগ বা বিষণ্নতার চিকিৎসা না করলে পিঠ ব্যথার নিরাময়ের জন্য যাই করেন না কেন, ব্যথা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া যায় না। এ দুষ্টু চক্র থেকে বের হতে উভয়েরই যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :

* ব্যথার কারণ ৫ গোপন মাংসপেশি
* পেটের ৭ ব্যথা যেসব রোগ নির্দেশ করে
* পেটের বাম পাশে ব্যথার ১৩ কারণ
* ব্যথা কমাতে অ্যাসপিরিন নাকি ইবুপ্রোফেন, কোনটি খাবেন?


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়