ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

পুরুষের স্বাস্থ্যের যে উপসর্গ বিপজ্জনক (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৯ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুরুষের স্বাস্থ্যের যে উপসর্গ বিপজ্জনক (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : জুন হচ্ছে পুরুষ স্বাস্থ্য সচেতনতার মাস। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক পুরুষ সেসব মারাত্মক উপসর্গ উপেক্ষা করেন যা উচিত নয়। বিপজ্জনক হতে পারে- পুরুষের স্বাস্থ্যের এমন কিছু উপসর্গ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

লিঙ্গ উত্থান না হওয়া : সাধারণত পুরুষেরা লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যা অথবা ইরেকটাইল ডিসফাংশন সম্পর্কে কথা বলতে চায় না, কিন্তু এটি কার্ডিওভাস্কুলার রোগের মতো মারাত্মক রোগের সতর্কীকরণ ইঙ্গিতবাহী হতে পারে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত এনওয়াইইউ ল্যানগোন প্রেটসন রবার্ট  টিশ সেন্টার ফর ম্যান’স হেলথের ইউরেলজিস্ট জোসেফ অ্যালুকাল বলেন, ‘যদি আপনার ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হয়, তাহলে এটি পূর্বাভাস দিচ্ছে যে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ধূমপান অথবা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাসের কারণে আপনার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে।’ ম্যান’স হেলথ বোস্টনের কার্ডিওলজিস্ট ইভান আপেলবাউম সহমত পোষণ করে বলেন, ‘ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হচ্ছে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের আরেকটি বড় রিস্ক ফ্যাক্টর এবং তা দ্রুত মূল্যায়ন হওয়া উচিত, এমনকি অন্য কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর না থাকলেও।’

গিলতে সমস্যা : নিউ ইয়র্কে অবস্থিত টিশ সেন্টার ফর ম্যান’স হেলথের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডেভিড পপারস বলেন, ‘গিলতে সমস্যা বা ডিসফ্যাজিয়া হচ্ছে এমন একটি উপসর্গ যা পুরুষদের কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্সের পাঁচটি লক্ষণের একটি এবং এটি অ্যালার্জিক দশা অথবা সম্ভবত খাদ্যনালীর ক্যানসারেরও একটি লক্ষণ হতে পারে, যা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’ তিনি যোগ করেন, ‘ক্রনিক অ্যাসিড রিফ্লাক্স খাদ্যনালীতে ক্যানসারপূর্ব পরিবর্তন ঘটাতে পারে যা ব্যারেট’স এসোফ্যাগাস নামে পরিচিত। চিকিৎসা করলে ব্যারেট’স এসোফ্যাগাস ও খাদ্যনালীর ক্যানসার প্রতিরোধ হতে পারে।’

অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস : ডা. পপারস বলেন, ‘যদি বেশি ভোজন ও কম ভোজনের কারণে আপনার ওজন বেড়ে যায় ও হ্রাস পায়, তাহলে ঠিক আছে, কিন্তু হঠাৎ নাটকীয় ও অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হ্রাস আপনার চিকিৎসককে বলে যে কিছু একটা ঠিক নেই।’ প্রকৃতপক্ষে, কমপক্ষে ১০টি মারাত্মক সমস্যার কারণে কোনো ডায়েটিং ছাড়াই ওজন কমে যেতে পারে। আপনার চিকিৎসক ওজন হ্রাসের কারণ নির্ণয়ে টেস্টের একটি সিরিজ অর্ডার করতে পারেন। ডা. পপারস বলেন, ‘এটি উপেক্ষা করার মতো কেনোকিছু নয়।’

বাওয়েল মুভমেন্টে পরিবর্তন : ডা. পপারস বলেন, ‘ফ্লাশ করার পূর্বে চেক করুন।’ বাওয়েল মুভমেন্টে পরিবর্তন কোলন ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংকীর্ণ মল ও মলদ্বারীয় রক্তপাত আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। হেমোরয়েড অথবা অ্যানাল ফিশারের কারণে অবশ্যই রক্তপাত হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ।’ যে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয় এবং বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগের প্রয়োজন আছে এমন অনুভূতি হওয়া সত্ত্বেও একবারেই মলত্যাগ করতে না পারাও কোলন ক্যানসারের সম্ভাব্য সতর্কীকরণ বার্তা হতে পারে। যৌবনে কোলন ক্যানসার হবে না এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না, যুবকদের মধ্যে কোলন ক্যানসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির কোলন ক্যানসার স্ক্রিনিং গাইডলাইন্স প্রাপ্তবয়স্কদের ৫০ এর পরিবর্তে ৪৫ বছর বয়সে কোলন ক্যানসার স্ক্রিনিং করতে পরামর্শ দিচ্ছে।

তিলের পরিবর্তন : টিশ সেন্টার ফর ম্যান’স হেলথের ডার্মাটোলজিস্ট জন জি. জাম্পেলা বলেন, ‘পুরুষদের স্কিন ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেশি, বিশেষ করে মেলানোমা, কারণ তারা সানস্ক্রিন কম ব্যবহার করে এবং কোনো তিলের পরিবর্তন বেশি উপেক্ষা করে অথবা হয়তো লক্ষ্য করে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিশেষ করে সাদা ত্বকের পুরুষেরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। মেলানোমায় নারীর তুলনায় দ্বিগুণ পুরুষ মারা যায়।’ তার পরামর্শ? উচ্চ এসপিএফ সমৃদ্ধ ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, নিয়মিত ত্বক চেক করুন এবং প্রতিবছর একবার ক্লিনিক্যাল ত্বক পরীক্ষার জন্য ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হোন। তিনি বলেন, মেলানোমার এবিসিডিই সম্পর্কে জানুন-

* এ ফর অ্যাসিমেট্রি- মেলানোমা অস্বাভাবিক আকৃতির হবে, গোলাকার নয়।

* বি ফর বর্ডার- মেলানোমার বর্ডার অস্বাভাবিক হবে।

* সি ফর কালার- মেলানোমা বিভিন্ন বর্ণের হবে।

* ডি ফর ডায়ামিটার- একটি মেলানোমা সাধারণত ১/৪ ইঞ্চি বা এর বেশি হবে।

* ই ফর ইভলভিং- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলানোমার আকৃতির পরিবর্তন হবে।

এসব লক্ষণের যেকোনো একটি লক্ষ্য করলে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যান।

ঘুমের সমস্যা : যদি আপনার অতিরিক্ত ঘুম পায় অথবা কম ঘুম হয় কিংবা ঘুমিয়ে বা জেগে থাকতে সমস্যা হয়, তাহলে আপনার চিকিৎসককে বলুন। টিশ সেন্টার ফর ম্যান’স হেলথের ইন্টারনিস্ট ও মেডিক্যাল ডিরেক্টর স্টিভেন ল্যাম বলেন, ‘ঘুমের সমস্যা ও ব্যাধি আসলে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক যে খারাপ কিছু হয়েছে।’ এটি ডিপ্রেশন অথবা অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার (এমন এক অবস্থা যেখানে রোগী ঘুমের সময় নাক ডাকে ও রোগীর শ্বাসরোধ হয়) লক্ষণ হতে পারে। ঘুমের সমস্যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, ওজন বৃদ্ধি ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। আপনার চিকিৎসক ডিপ্রেশন ও স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা কার্যকরভাবে করতে পারবেন।

ওজন বৃদ্ধি : অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস যেমন কোনো বড় স্বাস্থ্য সমস্যার রেড ফ্ল্যাগ বা সতর্কীকরণ নির্দেশক হতে পারে, তেমনি ওজন বৃদ্ধিও স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে, বেলি ফ্যাট বা মেদবহুল পেট হৃদ সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির গবেষণা অনুসারে, কোনো পুরুষের পেটের ওজন যত বাড়বে, তার হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকিও তত বেড়ে যাবে। এ গবেষণার সিনিয়র রিসার্চার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হার্ট লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউটের সাবেক সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর ক্যারোলিন ফক্স বলেন, ‘পেটে চর্বির বৃদ্ধি ও কম ঘনত্বের চর্বি হৃদরোগের রিস্ক ফ্যাক্টরকে আরো খারাপ করে তোলে।’ ডা. ল্যাম বলেন, ‘ওজন বৃদ্ধি ডিপ্রেশন বা স্ট্রেসেরও লক্ষণ হতে পারে।’ অন্যান্য সমস্যার কারণেও আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। আপনার শরীরে কি হয়েছে বা হচ্ছে তার সঠিক কারণ জানতে চিকিৎসকের কাছে যান।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুন ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়