ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

‘পুলিশ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে’

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পুলিশ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনী দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ঘটাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশ এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মর্যাদাপূর্ণভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘রংপুরের উন্নয়নে এই পুলিশ ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর ফলে এই অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে থাকবে ও জনসাধারণ নির্বিঘ্নে বাস করতে পারবে।’

প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনী প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে অনেক কষ্ট করতে হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমি দেখেছি, পুলিশ মাত্র ২০ শতাংশ রেশন-ভাতা পেত, আমি তা বাড়িয়ে দিয়েছি। পুলিশদের ঝুঁকি ভাতা চালু করা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছি।’

জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দেশে বাংলা ভাই, জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছিল। পুলিশ সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নাই। বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়ে ২৭ জন পুলিশ নিহত হয়েছে।’



উত্তরবঙ্গ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ এক সময় অবহেলিত ছিল। আমরা সেখানে ইপিজেড করেছি। অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। আমরা রংপুরকে বিভাগ করেছি। এখন রংপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট ঘোষণা করছি। আমরা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে চাই। ২১০০ সালে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় দেখতে চাই সে পরিকল্পনা করে ডেল্টা প্ল্যান করেছি।’

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আলীমের সঞ্চলনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও প্রেসক্লাবের সভাপতি সদরুল আলম দুলু, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়ের মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সংস্কৃতি কর্মী ডা. সমর্পিতা ঘোষ তানিয়া। উদ্বোধনের পর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নিয়ে নগরীতে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের এমপি টিপু মুনশি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি, বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী, জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ রাজ্জাক, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বেরোবির উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক প্রমুখ।

এর পরে প্রধানমন্ত্রী গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করেন। তার নামে সেতুটির নামকরণ করায় তিনি এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর এদেশের জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মুষ্ঠিমেয় কিছু লোকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে তাদেরই ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের কথা কখনো ভাবেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পর আমি দেশে আসি। ১৯৭৫ সালের পর আমাকে দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে এক রকম জোর করেই আমি দেশে ফিরেছি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ শুরু করি। তখন থেকেই সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’



তিনি বলেন, ‘রংপুর, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী এক সময় মঙ্গাপীড়িত এলাকা ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব এলাকা থেকে মঙ্গা শব্দটি উঠে গেছে। গত সাড়ে নয় বছরে কেউ মঙ্গা শব্দটি শোনেনি। তিস্তা সড়ক সেতু উদ্বোধন হওয়ার ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কার্যকারিতা অনেকে বেড়ে যাবে। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। অর্থনৈতিকভাবে এই দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশও লাভবান হবে।’

গঙ্গাচড়ার সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেতুটির কারণে ঢাকা আসতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে এবং ওই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমরা কুড়িগ্রাম থেকে লালমনিরহাট হয়ে রেল যোগাযোগও স্থাপন করব। আমরা রিসার্চ করে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করতে শুরু করেছি। এই অঞ্চলে আমরাই প্রথম ভুট্টা চাষের জন্যে প্রজেক্ট করি।’

এ সময় রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হাবিবের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান, মোতাহার হোসেন এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মততাজ হোসেনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট জেলার কালেক্টরেট মাঠে জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দুই দফায় সময় বৃদ্ধি করে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শেষে লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন-ডব্লিউএমসিজি। তিস্তা সেতুর উত্তর প্রান্ত থেকে লালমনিরহাটের কাকিনা মোড় পর্যন্ত ৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, তিনটি কালভার্ট ও দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। অপরদিকে শেখ হাসিনা তিস্তা সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে রংপুরের বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন। এরপর বক্তব্য রাখেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী। তারপর মুক্তিযুদ্ধ ও আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের অবদান নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের একটি প্রমাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।



রাইজিংবিডি/রংপুর/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/নজরুল মৃধা/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়