ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সচিবালয় প্রতিবেদক : শারদীয় দুর্গাপূজায় সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্গাপূজায় রাজধানীতে ২৩১টি পূজামণ্ডপসহ দেশের ৩ হাজার ৭৭টি পূজামণ্ডপে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’

তিনি জানান, পূজায় পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে ১ লাখ ৬৮ হাজার আনসার সদস্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করবেন।

স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জনের কাজ বিকেল ৩টায় শুরু হবে। রাত ৮টার মধ্যে তা শেষ করতে হবে। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিকেল ৩টার মধ্যে সবাই আসবেন, যাতে আমরা রাত ৮টার মধ্যে বিসর্জন শেষ করতে পারি। এজন্য আমরা বিশেষ অনুরোধ করেছি। পূজা উদযাপন কমিটিও আমাদের এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন। তারা সময়টা মেনে চলবেন এবং এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন।’

শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইন ভঙ্গকারী ও দুষ্কৃতিকারী যেই হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব। এজন্য যখন যা করা দরকার আমরা তাই করব। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। যাতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারি।’

পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান তিনি।

নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘পূজামণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ও সিসি টিভি ব্যবহার করা হবে। পুলিশ যেগুলো পারবে দেবে, সবগুলো দেওয়া সম্ভব নয়। পূজা উদযাপন কমিটিকে প্রত্যেক পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের অনুরোধ করেছি। তারা সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেবে। আর্চওয়ে না হলে প্রত্যেক পূজামণ্ডপে মেটাল ডিটেক্টর রাখার অনুরোধ করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বড় বড় মণ্ডপের পাশে ফায়ার সার্ভিস রাখা হবে এবং সব সময় সতর্ক থাকবে। বিসর্জনের সময় কোস্টগার্ডের ডুবুরিরা থাকবেন। যেখানে বিসর্জন হবে পুলিশের পাশাপাশি আমাদের নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে।’

পূজামণ্ডপগুলোর অবস্থা জানতে পুলিশের দুটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আইজিপির তত্ত্বাবধানে একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। এই কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সারা দেশে পূজামণ্ডপগেুলোর সার্বিক পরিস্থিতি জানা যাবে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নিতে পারবে পুলিশ। একইভাবে আরেকটি কন্ট্রোল রুম খুলবে ডিএমপি। এটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে স্থাপিত হবে। সেটার মধ্যেমে ঢাকার পূজামণ্ডপগুলোর কোনটার কী অবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে এবং পুলিশ সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে।’

গতবারের মতো এবারও প্রতিটি মণ্ডপে সব ধর্ম ও শ্রেণির মানুষ নিয়ে একটা শৃঙ্খলা কমিটি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এই কমিটি পূজা মণ্ডপগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি দেখবে। তা ছাড়া ইভটিজিং প্রতিরোধ ও পূজামণ্ডপে মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি নির্দিষ্ট পোশাক ও আর্মব্যান্ড পরা মহিলা ভলান্টিয়ার থাকবে। এজন্য আমরা পূজা উদযাপন কমিটিকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। তারা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন।’

‘পূজামণ্ডপে মাদক সেবন ও আতশবাজি ‍চলবে না। আতশবাজির কারণে একটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কোথায় কী হচ্ছে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সব নজরে আনতে পারে না। এজন্য পূজার সময় আতশবাজি একদম বন্ধ করার জন্য কমিটিকে অনুরোধ করেছি। একইভাবে পূজামণ্ডপে মাদক সেবনে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে,’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, ‘পূজা চলাকালীন আগের মতো আমরা রাস্তায় মেলা বসাতে মানা করেছি। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এতে রাস্তাঘাটে যানজট হয়, ছিনতাই ও নানান ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া আজানের সময় যাতে পূজামণ্ডপ থেকে কোনো ধরনের বাদ্য বা উচ্চস্বরে কিছু করা না হয় এজন্য পূজা কমিটির কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। আমাদের দেশে একটা প্র্যাকটিস হয়ে গেছে, যারা পূজা করেন তারা আজানের সময় তা বরাবরই বন্ধ রাখেন। এবারও আমরা তাদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে অনুরোধ করেছি।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা আমাদের দেশে এখন সবার উৎসবে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলে থাকেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান আমরা সবাই এই উৎসবে যোগ দেব। আশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থা অনেক সুন্দর, অনেক ভালো ও অনেক নিরাপদ। সেজন্য গত বছর ২৯ হাজার ৩০০টি পূজামণ্ডপ হয়েছিল। পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আমাদের জানিয়েছেন, এবার ৩০ হাজার ৭৭টি পূজামণ্ডপ হবে। আগের চেয়ে এবার বেশ কয়েকটি বেশি পূজামণ্ডপ হবে। এবার ঢাকা মহানগরীতে ২৩১টি পূজামণ্ডপ হবে।’

‘ঢাকার সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা থাকবে। বিশেষ করে, ঢাকেশ্বরী, রামকৃষ্ণ মঠ, বনানী, কলাবাগান, রমনা, কালিবাড়ী, সিদ্ধেশ্বরীসহ বড় বড় পূজামণ্ডপে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ যোগ করেন মন্ত্রী।

আশুরা শুরুর দিন প্রতিমা বিসর্জনের দিন হওয়ায় কোনো সমস্যা হবে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘না, কোনো সমস্যা হবে না। এজন্য পূজা কমিটির নেতা ও শিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে আরেকটি মিটিং হবে। কখন কোথায় কার কী করতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, যাতে সবাই সুন্দরভাবে পূজা ও আশুরা উদযাপন করতে পারেন।’

আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এ সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, ডিএমপি, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের শীর্ষ কর্তাসহ হিন্দু সম্প্রদায় ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়