ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ২২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টুর বিরুদ্ধে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।

লাঞ্ছিত বিএমডিএর বাগমারা উপজেলা অফিসের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ নেতা সান্টুর বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

ঘটনার পর উপজেলা পরিষদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কয়েকদফা সভা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা ঘটনার প্রতিকারের দাবিতে কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।

বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিমের বাগমারা থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২১ মার্চ দুপুরে বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌর যুবলীগের সভাপতি ফেরদৌস রহমান কয়েকজন নেতা-কর্মী সহযোগে তার দপ্তরে আসেন। যুবলীগ নেতা-কর্মীরা একটি গভীর নলকূপের পাওয়ার (অশ্বশক্তি) বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার কাছে তদবির করেন।

এ সময় রেজাউল করিম তাদের জানান, গভীর নলকূপের পাওয়ার বাড়াতে হলে উপজেলা সেচ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হতে হবে। যুবলীগ নেতা-কর্মীরা অফিস ত্যাগের কিছুক্ষণ পর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সান্টু লোক দিয়ে বিএমডিএর প্রকৌশলীকে তার অফিসে তলব করেন।

সেখানে গেলে সান্টু জানতে চান- কেন গভীর নলকূপের পাওয়ার বাড়িয়ে দেওয়া হয়নি? প্রকৌশলী রেজাউল করিম এ সময় সেচ কমিটির অনুমোদনের বিষয়টি চেয়ারম্যান সান্টুকে অবহিত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সান্টু প্রকৌশলী রেজাউলকে প্রথমে চড় থাপ্পড় ও পরে লাথি মারতে মারতে অফিসের দরজার সামনে নিয়ে আসেন। সান্টুর সহযোগীরাও রেজাউলকে কিল ঘুষি ও লাথি মারেন। পরে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরিন আক্তার ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান ছুটে গিয়ে বিএমডিএর প্রকৌশলীকে সান্টু ও তার সহযোগীদের কবল থেকে উদ্ধার করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার পরপরই বিএমডিএর লাঞ্ছিত প্রকৌশলী রেজাউল করিম ও উপজেলা পরিষদের অন্য কর্মকর্তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে গিয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়ে ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তারা নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি দেখার কথা বলে তাদের বিদায় করেন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত নিয়ে রেজাউল করিম রাতে বাগমারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি নং- ৮৬০।

রেজাউল বুধবার বাগমারা উপজেলায় তার দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তাহীন অবস্থার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিএমডিএর চেয়ারম্যান, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পৃথক চিঠি দিয়েছেন।

একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাছরিন আক্তার বলেন, ঘটনার কথা মৌখিকভাবে শুনেছেন। তাকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তিনি নিজে ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন বলে কর্মকর্তাদের দেওয়া অভিযোগ প্রসঙ্গে জবাব দেননি।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিমকে কথা না শোনার জন্য হালকা শাসন করা হয়েছে। তার গায়ে হাত দেওয়া হয়নি। চড়-থাপ্পড়ের কথা বলে থাকলে বাড়িয়ে বলছেন। 

এর আগেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বাগমারা থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা সান্টুর বিরুদ্ধে থানায় তিনটা সাধারণ ডায়েরি করেন। অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগেও সান্টুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি জিডি করা হয়। 



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২২ মার্চ ২০১৭/তানজিমুল হক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়