ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এক্সট্রা শিল্পীদের ঈদ

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৬ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক্সট্রা শিল্পীদের ঈদ

রাহাত সাইফুল : মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। অনাবিল আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে এই দিনটি উদযাপিত হয়। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদের আগমনী বার্তা। ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষের মহামিলনের বার্তা বহন করে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নামাজ পড়ার সুযোগ এনে দেয় ঈদ।

ঈদ মানেই পরম আনন্দ ও খুশির উৎসব। কিন্তু এ আনন্দের অংশীদার কি সবাই হতে পারেন? কেউ কেউ প্রিয় সন্তান-স্ত্রীকে অন্য সবার মতো নতুন পোশাক কিনে না দিতে পেরে দুঃখে ভারাক্রান্ত হন। আমাদের আশেপাশে অনেকের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাদের ভাগ্যে নতুন পোশাক যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। এভাবেই অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছেন রুপালি জগতের এক্সট্রা শিল্পী, মেকআপম্যান, স্ট্যান্টম্যানরা।

কোটি টাকা ব্যয়ের চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকার সঙ্গে কাজ করেন এক্সট্রা শিল্পীরা। একজন নায়ক-নায়িকা বা খল অভিনেতা সম্মানি পান ৩ থেকে ৪০ লাখ টাকা। অথচ একজন এক্সট্রা শিল্পী দৈনিক ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পান। প্রতিদিন তাদের হাতে কাজও থাকে না। রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদক চলচ্চিত্রের নিম্ন আয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীদের ঈদ নিয়ে ‘প্রদীপের নিচে আঁধার’ শিরোনামের ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন। আজকের পর্বে থাকছে ‘প্রদীপের নিচে আঁধার : এক্সট্রা শিল্পীদের ঈদ’।

বাংলাদেশে দিন দিন চলচ্চিত্র নির্মাণ কমছে। হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। অথচ এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের আয়ের একমাত্র উৎস চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালান এক্সট্রা শিল্পীরা। এদের অবস্থা খুবই করুণ। এমনই একজন কাদের। নব্বই দশকের শুরুর দিকে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন তিনি। একসময় এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে কাজ পান। তখন দৈনিক ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় ছিল। তখন ঈদ আসলেই তারকা শিল্পীদের কাছ থেকে সালামি, বকশিশ পেতেন তিনি। যা দিয়ে পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কিনতে পারতেন। 

২০০৮ সালের পর সিনেমা নির্মাণ কমে আসলে কোনোদিন ৩০০ টাকা পেলে তা দিয়ে কোনোভাবে সপ্তাহ পার করতে হতো। এখন কাজ নেই বললেই চলে। আর এখন ঈদ আসলে কেউ সালামি বা বকশিশ দেয় না। এমনকি কেউ খোঁজও নেয় না তাদের।

এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আমি অনেক শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের অনেকেই এখন সিনেমায় কাজ করেন না। আবার কেউ কেউ মারাও গিয়েছেন। সারা বছর অপেক্ষা করতাম ঈদের জন্য। ঈদ এলে অনেক টাকা পেতাম। সে টাকা দিয়ে পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনতে পারতাম। আর এখন সিনেমার কাজও কমে গেছে আর বড় বড় শিল্পীরা আমাদের খবরও নেন না।’

এ প্রসঙ্গে এক্সট্রা শিল্পী নুপুর বলেন, ‘এবারের ঈদে কয়েকটা জাকাতের কাপড় পেয়েছি। আগে আমি অনেক জাকাতের কাপড় পেতাম। সারা বছর নিজে এবং পরিবারের অন্যরাও পরেও শেষ করতে পারতাম না। এ ছাড়া টাকা পেতাম। এখন সিনেমার অবস্থা ভালো না। তাছাড়া আমরা এক্সট্রা শিল্পী হলেও আগে শিল্পীরা আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। ঈদ এলে টাকা দিন। এমনও হয়েছে বাসায় কাপড়সহ টাকা পাঠিয়ে দিতেন। এখন আর এসব হয় না। সিনেমার সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর কাটিয়েছি। এখন আর সিনেমা ছেড়ে অন্য কিছু করার পথ নেই। এ কাজটিই শিখেছি। কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছি।’

একই রকম দিন কাটছে কল্পনা, আলেয়া বুড়ি, দিলবাহারী, বিনা, শুকুর জাহান, রাবেয়া, মর্জিনা, আলেয়া, রেবেকা, সেলিম, মেরিসহ প্রায় অর্ধশত এক্সট্রা শিল্পীর। সবার জীবন কাহিনী এমনই।

নায়ক-নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েও অনেকে এক্সট্রা শিল্পীর কাজ করেন। এ থেকে অনেকেই সফলও হয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। তবে তিনি অভাবের তাড়নায় নয়, চলচ্চিত্রকে ভালোবেসেই এক্সট্রা হিসেবে এ অঙ্গনে আসেন। পরে তিনি কিংবদন্তি অভিনেত্রী  হয়েছেন। নায়করাজ রাজ্জাকও প্রথমে ‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ সহ কয়েকটি সিনেমায় এক্সট্রা শিল্পী হিসেবেই অভিনয় করেন। পরবর্তীতে অনেকের মধ্যে এক্সট্রা থেকে নায়ক-নায়িকা হয়েছেন আলেকজান্ডার বো, শাহীন, দিলদার, সাহারা, ময়ূরী, শানু, সুচনা, নদী, ঝুমকা, জিনিয়া, নাসরিন, সোনিয়া, শাহনূর প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুন ২০১৭/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়