প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পাঁচ শতাধিক ভারতীয়
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : বন্যা থেকে জীবন বাঁচাতে ভারতের কয়েক শত নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশের লালমনিরহাটের কয়েকটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
শনিবার সন্ধ্যায় ভারতীয়রা লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন ও আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের বাড়ি, ফাঁকা জায়গা ও পাকা রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়েছে।
ভারতীয়দের অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশিদের পূর্ব-পরিচয় থাকার সুবাদে তাদের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন।
আজ সোমবার সরেজমিন মোগলহাট ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় নারী-পুরুষ ও শিশুরা বাংলাদেশি স্থানীয় লোকজনের বাড়িতে উঠেছেন। কেউ কেউ পাকা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে আর্জিনা খাতুন (৩৫) সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি ভারতীয় জারি ধরলা চরে বসবাস করেন। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী ইকুল হকসহ দুর্গাপুরের কুমারপাড়ায় অবস্থান নিয়েছেন। হাঁস-মুরগীর পাশাপাশি শখ করে যে টিয়া পাখি পালেন, সেটিও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
এক সন্তানের জননী মেহেরবানীও (২৩) এসেছেন। মেহেরবানীর স্বামী দিল্লির একটি সেলাই কারখানার শ্রমিক। বাংলাদেশে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করায় এ সকল ভারতীয়রা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিজিবি) ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
চার শিশু সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশি ফজলুল হকের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ছামিদুল হক বলেন, ‘বিজিবি ও স্থানীয়দের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। বিজিবি ও স্থানীয় লোকজনের কারণে ভারতীয় গীতালদহের দরিবাস ও জারি ধরলা গ্রামের ৮০০-৯০০ মানুষ বাঁচতে পেরেছেন। যদি বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া না হতো, তাহলে ধরলা নদীর বন্যার পানিতে ভেসে মারা যেতে হতো।’
মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ভারতীয় কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার গীতালদহের অধীনে দরিবাস ও জারি ধরলা চর দুটিতে পাঁচ হাজার লোকজন বসবাস করেন। অনেকে ভারতের অন্যত্র চলে গেলেও জীবন বাঁচার তাগিদে ৫০০-৬০০ নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি, মোগলহাট বিজিবি কোম্পানীর সদস্যরা আশ্রয়ের সন্ধানে আসা ভারতীয়দের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। পরে আমি লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক গোলাম মোর্শেদকে অনুরোধ করার পর মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেই তারা নিজ দেশে ফিরে যাবেন।’
লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোর্শেদ সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পাঁচ শতাধিক ভারতীয় নারী-শিশু ও পুরুষ বাংলাদেশে এসেছে। ধরলা নদীর ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে জীবন বাঁচাতে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদের খোঁজখবর রাখছে বিজিবির সদস্যরা।
রাইজিংবিডি/লালমনিরহাট/১৪ আগস্ট ২০১৭/মোয়াজ্জেম হোসেন/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন