ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রাণঘাতী রোগ নিয়ে কীভাবে বেঁচে ছিলেন হকিং?

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৫ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাণঘাতী রোগ নিয়ে কীভাবে বেঁচে ছিলেন হকিং?

শাহিদুল ইসলাম : খ্যাতনামা পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং ৭৬ বছর বয়সে গতকাল যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৬২ সালে যখন তিনি ২১ বছর বয়সি তরুণ তখন থেকেই প্রাণঘাতী অ্যামিওট্রফিক লেথারাল স্কেলোরসিস (এএলএস) রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এই রোগে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের মোটর নিউরোন এবং শিড়দাঁড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং মারা যেতে শুরু করে। আক্রান্ত হওয়ার এক মাস বা বছরের মধ্যে রোগী কথা বলা, হাঁটাচলা করা এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা হারায়।

এএলএস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, রোগটি ধরা পড়ার পর অধিকাংশ মানুষ দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যান। মাত্র দশ শতাংশ মানুষ দশ বছর বা তার চেয়ে কিছু বেশি সময় বেঁচে থাকে। কিন্তু স্টিফেন হকিং এমন একটি প্রাণঘাতী রোগ নিয়েই বেঁচে ছিলেন পরবর্তী ৫৬ বছর। কিন্তু কীভাবে?

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি ও নিউরোসায়েন্স অধ্যাপক এবং এএলএস গবেষণা প্রতিষ্ঠান রবার্ট প্যাকার্ড সেন্টারের পরিচালক গবেষক জেফরি রথস্টেন বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে গেলে এর সঠিক কোনো উত্তর আমাদের কাছে নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এএলএস রোগ ধরা পড়ার পর ৩ মাস পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এমন রোগী আমি যেমন পেয়েছি তেমনি আবার ২৭ বছর বেঁচে ছিলেন এমন রোগীও পেয়েছি। এটি খুব ব্যতিক্রম।’

দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার রহস্য হিসেবে তিনি সম্ভাব্য দুটো উত্তর দিয়েছেন। একটি হতে পারে শরীরের ডিএনএ’র ক্ষমতার কারণে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের কোনো পরিবারিক ইতিহাস নেই। ফলে ত্রুটিপূর্ণ জিন পারিবারিক ডিএনএর ক্ষমতার কাছে চাপা পড়ে যেতে পারে। কিংবা শরীরের অন্যান্য জিনের ওপর ভিত্তি করে ত্রুটিপূর্ণ জিন নিজেই দ্রুততা বা ধীরগতি নির্ধারণ করে। অর্থাৎ তার জিন রোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র লড়াই করেছে।

তার দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে, ভেন্টিলেটর সিস্টেম। অধিকাংশ এএলএস রোগী মারা যায় তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত কারণে। কারণ তারা ভেন্টিলেটর মেশিন ব্যবহার করে না। ফলে তাদের ফুসফুস ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে করে রোগী নিঃশ্বাস নিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে রোগীর দেহে অক্সিজেনের অভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যায় এবং রোগীর হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে হকিং ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত ধৈর্য ধরেই ভেন্টিলেটর ব্যবহার করেছেন যা তার আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দিয়েছে।

জেফরি রথস্টেন বলেন, ‘জেনেটিক্স, আধুনিক প্রযুক্তি কিংবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক এএলএস রোগ নিয়ে দীর্ঘবছর হকিংয়ের রহস্যময় বেঁচে থাকার চেয়েও আরো বেশি বিস্ময়কর হলো, এই রোগ নিয়ে তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও বেশি কার্যকর ছিল। এএলএস সম্পূর্ণভাবে মস্তিষ্কের মোটর রোগ এবং মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রোগ রোগীর চিন্তা ও স্মৃতির জ্ঞানীয় সমস্যা সৃষ্টি করে।’

প্রাণঘাতী রোগ নিয়েই স্টিফেন হকিং রহস্যময় ভাবে পার করেছিলেন জীবনের অর্ধশতাধিক বছর এবং অবিশ্বাস্য সব চিন্তাধারার সঙ্গে। তার মস্তিষ্কের স্মৃতি, চিন্তা এবং জ্ঞানীয় ফাংশনে এএলএস কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারেনি।

তথ্যসূত্র : ডেইলি বিস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়