ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘প্র্যাকটিসে না গেলে মা খেতে দিত না’

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘প্র্যাকটিসে না গেলে মা খেতে দিত না’

মোহাম্মদ আশিকুর রহমান

আমিনুর রহমান হৃদয়: ‘যখন প্র্যাকটিস শেষে জার্সি, বুট ও ফুটবল ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরতাম, তখন গ্রামের কিছু মানুষ কটূ কথা বলতো। আমি নাকি ফকিরের ঝোলা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি- এমন কথাও শুনতে হয়েছে। তাদের কথায় মন খারাপ করতাম না। সবচেয়ে বড় কথা- আমি যদি প্র্যাকটিসে না যেতাম তাহলে মা ভাত খেতে দিত না। মা আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা’ কথাগুলো মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৫ জাতীয় ফুটবল দলে খেলছেন।

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে বাড়ি। যখন আশিকের বয়স মাত্র ৬ মাস তখন বাবা খলিলুর রহমান মারা যান। মা আছমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার খরচ চালাতেন। আশিক এখন মাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে দেন না। পরিবারের হাল নিজেই তিনি ধরেছেন।



দেশের বাইরে ফুটবল খেলে এরই মধ্যে চমক দেখিয়েছেন আশিক। নেপালে অনুষ্ঠিত হওয়া মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলায় ৭৫ মিনিটে আশিক মাঠে নেমে ২ গোল করেন। সেই খেলায় ৯-০ গোলে বাংলাদেশ জিতে যায়। কথাপ্রসঙ্গে আশিক জানালেন, ফুটবল খেলার বুট জুতো ছিল না। অন্যের জুতো পরে ফুটবল খেলতে হয়েছে। তার খেলা দেখে খুশি হয়ে কেউ কেউ তাকে জুতো কিনে দিয়েছেন।

তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় আশিক বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। এরপর ২০১৩ সালে জেলা পর্যায়ে অনুর্ধ্ব-১২ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ডাক পান। তবে সেবার সুযোগ পাননি মাঠে নামার। বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে বয়সভিত্তিক খেলায় বহুবার অংশ নিয়েছেন। আশিক বলেন, ‘ক্লাবের হয়ে  খেলতে খেলতে একদিন হঠাৎ এক স্যার ফোন দেন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য। সেখানে ভালো পারফরম্যান্সের জন্য অনুর্ধ্ব-১৫ জাতীয় ফুটবল দলে আমি ডাক পাই। ওই দলে মোট ৩৫জনকে নেয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে বাছাই করে নেপালে খেলতে যায় ২৩ জন। তার মধ্যে আমিও ছিলাম।’



আশিক আরো বলেন, ‘নেপালে সাফ অনুর্ধ্ব-১৫ তে আমরা জয়লাভ করি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৪ লাখ এবং ফেডারেশন থেকে ১ লাখ টাকা পেয়েছি। এরপরে থাইল্যান্ডেও আমি ভালো খেলেছি।’ 

মায়ের উৎসাহ এবং স্থানীয় কিছু বড় ভাইদের সহযোগিতা তাকে এতো দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছে জানিয়ে আশিক বলেন, ‘ফুটবল মাঠে খুব সকালে গিয়ে একা প্র্যাকটিস করতাম। তখন মাঠে কেউ থাকতো না। কষ্ট করেছি খুব। এখন কষ্টের ফল কিছুটা হলেও পাচ্ছি।’ আগামী দিনের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে এই ফুটবলার বলেন, ‘আগামী দিনের লক্ষ্য জাতীয় ফুটবল দলে জায়গা করে নেয়া। আন্তর্জাতিক ক্লাবগুলোর হয়ে ফুটবল খেলতে চাই। এছাড়া নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যেতে চাই। ভালো ফুটবল খেলতে পারলে ভালো জায়গায় চলে যাব।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়