ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্লাস্টিক বর্জনের স্লোগানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্লাস্টিক বর্জনের স্লোগানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ

শাহ মতিন টিপু : দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রী থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্য মাটি, জলাশয়, নদী ও সমুদ্রকে দূষিত করছে, বাড়ছে মানব স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আসুন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি’ এবং স্লোগান ‘প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করি, না পারলে বর্জন করি’।

১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতি বছর সারা বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে পরিবেশ দিবস পালন করা হয়।

পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এ বিশ্বকে বাঁচানোর অঙ্গীকার নিয়ে প্রতি বছর ৫ জুন দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৮ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সুন্দর আগামীর জন্য পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে ক্রমেই প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। তাই এখন প্লাস্টিক বর্জ্য’র সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। ইতিমধ্যে সরকার জাতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় থ্রি-আর (রিডিউস, রিইউস ও রিসাইকেল) কৌশল গ্রহণ করেছে। পাটের উৎপাদনের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য ধান, চালসহ আরও কয়েকটি পণ্য প্যাকেজিংয়ে পাটজাত সামগ্রী ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’

জৈব পচনশীল পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।

প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ড’র কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশে প্রতিনিয়ত দূষিত বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।’

প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন যে বর্জ্য তৈরি হয়, তার শতকরা প্রায় ১০ ভাগ প্লাস্টিক। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৫শ’ বিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। যার মধ্যে প্রায় ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে পতিত হয়। এর ফলে এক মিলিয়ন সমুদ্রচারী পাখি এবং এক লাখ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীর মৃত্যু হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্লাস্টিকের অত্যধিক উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে উর্বর কৃষি জমি থেকে শুরু করে খাল-বিল, নদ-নদী এবং সাগর-মহাসাগরের প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই প্লাস্টিকের পুনঃব্যবহার এবং পুনঃচক্রায়ন একান্ত প্রয়োজন।’

প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য কতটা ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনছে তার একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ এবারের পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের সমুদ্রতীরের একটি ঘটনা। গত সোমবার সমুদ্রতীরের কিছুটা কাছাকাছি একটা তিমিকে দেখা যাচ্ছিল। নড়তে পারছিল না। কেমন গা ছেড়ে দিয়ে ভাসছিল তিমিটি।

পরিবেশ রক্ষা কর্মীদের চোখে পড়লে নৌকায় করে তারা তিমিটির কাছে যান। বেশ কিছুক্ষণ তিমিটিকে ভাসাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। কেননা, তিমিটি কোনো সাড়াই দিচ্ছিল না। আর দেবেই কীভাবে? একটা-দুটা নয়, তিমিটি যে খেয়ে ফেলেছিল ৮০টি প্লাস্টিকের ব্যাগ। প্রায় আট কেজি ওজনের এই ব্যাগগুলো খেয়ে প্রায় পাঁচ ব্যাগ বমি করে তিমিটি।

পুরোটা সপ্তাহজুড়ে পরিবেশ রক্ষা কর্মীরা তিমিটির সেবা করে। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গত শুক্রবার সকালে এটি মারা যায়।

এক সমুদ্র বিশেষজ্ঞ জানান, প্লাস্টিকের ব্যাগগুলোর কারণে কিছুই খেতে পারছিল না তিমিটি। আর ব্যাগগুলো বেরও করা যাচ্ছিল না। তাই শেষে মরতেই হলো তিমিটিকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুন ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়