ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

মো. মনিরুল ইসলাম টিটো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ১৯ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

ফরিদপুর প্রতিনিধি : গত কয়েক দিনে ধারাবাহিকভাবে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ফরিদপুরের তিনটি উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

শনিবার পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বাড়েনি বলে জানিয়েছেন পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানির পরিমাপক ইদ্রিস আলী। এতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে কক্ষের মধ্যে পানি প্রবেশ করা ও বন্যার্তরা আশ্রয় নেওয়ায় ইতিমধ্যেই ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জেলার তিনটি উপজেলায় পানিবন্দি ও নদী ভাঙন কবলিতদের মাঝে সরকারি সহায়তা হিসেবে ১১০ মেট্টিক টন চাল ও দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১৬৬টি গ্রামের ১০ হাজার ৬০০ পরিবারের অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।  এ ছাড়া ওই সকল এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। পানিতে তলিয়ে গেছে ১০২টি কাঁচা ও পাকা সড়ক।

জেলার সদরপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়ার পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া। এ ছাড়া ফরিদপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের পানিবন্দি তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন সদর ইউএনও প্রভাংশু সোম মহান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পরিতোষ বাড়ৈ।

 



ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান জানান, নর্থচ্যানেল ইউনিয়নটি পদ্মা নদী বেষ্টিত, এই কারণে চারদিক দিয়েই পানি প্রবেশ করেছে। ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত ছয়টি স্কুলে পানি প্রবেশ করায় সেগুলো সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, পানিতে ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারিকেল বাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন জানান, ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের ৯শ’ পরিবারের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ওই ইউনিয়নের লালমিয়া সরকার কান্দি, মফিজ উদ্দিন সরদার কান্দি, ওমেদ আলী দেওয়ান কান্দি গ্রামে নদীর ভাঙনে ১২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সদরপুর উপজেলার চরমানাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, নদীর তীব্র ভাঙনে ইউনিয়নের গিয়াসউদ্দিন ফকির কান্দি, হাজারী হাজির কান্দি, আদেল উদ্দিন মোল্যার কান্দিসহ বিভিন্ন এলাকার ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

চরভদ্রাসন সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান জানান, পদ্মার পাড় এলাকা বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরের মাথাভাঙ্গা গ্রাম, হাজীডাঙ্গী, সেকের ডাঙ্গী, বালিয়া ডাঙ্গী, ফাজিলখার ডাঙ্গী, এমপি ডাঙ্গী ও টিলারচর গ্রামের অন্তত ৩শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং প্রায় দেড়শ’ একর ধানি জমি পানিতে ডুবে গেছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। অনেকে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় চৌকির ওপর রান্না-বান্না করছেন।

বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নেওয়া রবিউল বলেন, ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

 



গোলডাঙ্গী এলাকার বৃদ্ধা লেকজান বেগম বলেন, গরু-বাছুর নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে। পশুখাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ফরিদপুর সদর ইউএনও প্রভাংশু সোম মহান বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ও নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের বিভিন্ন পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যেই পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, ফরিদপুরের তিন উপজেলার ৪৯ টি স্কুল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি কমে যাওয়ার পর শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ঘাটতি পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই চরভদ্রাসন ও সদরপুরের ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া আছে সর্বদা সতর্ক থাকতে।



রাইজিংবিডি/ফরিদপুর/১৯ আগস্ট ২০১৭/মো. মনিরুল ইসলাম টিটো/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়