ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ফরিদপুরে শিম চাষিদের মুখে হাসি

মো. মনিরুল ইসলাম টিটো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফরিদপুরে শিম চাষিদের মুখে হাসি

ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় শিমের ভালো ফলন হয়েছে, পাশাপাশি বাজারদরও ভাল- ফলে হাসি ফুটেছে এখানের শিম চাষিদের মুখে।

অন্যদিকে অন্যান্য সবজি চাষে আশানুরূপ লাভবান না হওয়ার দুঃখও ঘুচিয়ে দিয়েছে শিমের বাম্পার ফলন।

সাধারণত শীতকালে শিম চাষ করেন ওই উপজেলার কয়েক শত শিম চাষি। এবছর এখানের বিভিন্ন এলাকায় নতুন ‘বারি-৪’ ও ‘ইপসা-১’ জাতের শিমের ফলন ভালো হয়েছে বলেও দাবী কৃষকদের। এতে সবজি চাষিরা ভীষণ খুশি বলেও জানিয়েছেন তারা।

জেলার সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সবজি গ্রাম খ্যাত শৈলডুবীসহ আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে মাচাজুড়ে প্রচুর পরিমাণে শিম ধরে রয়েছে।

ওই এলাকার সবজি চাষি অফিল উদ্দিন (৩৯) জানান, এ বছর তিনি ১৮ হাজার টাকা খরচ করে ৬৬ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন। তিনি দাবী করেন, ইতেমধ্যেই শিম বিক্রি করে তিনি পুজি ঘরে তুলেছেন। আর এখন জমিতে যে পরিমাণ শিম ধরে আছে, তা রয়েছে লাভের হিসাবে।

ওই গ্রামেরই আরেক চাষি রহিম মুন্সী (৪৫) জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় শিম খেতের পরিচর্যায় খরচ কম হয়েছে, আবার ফলনও ভালো হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সদরপুর উপজেলার জেলার ৬টি ইউনিয়নে শীতের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো, কৃষ্ণপুর, সদরপুর, চরবিষ্ণুপুর, চরনাছিরপুর, ভাষাণচর ও আকোটেরচর। এসব এলাকায় একটি বড় অংশে উৎপাদিত হয়েছে শিম। প্রতিটি এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মন শিম বিক্রি হচ্ছে। যা চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এসব এলাকায় শিম কিনতে আসা পাইকাররা জানান, সদরপুরের এই শিম ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায়, ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া, মাদারীপুর জেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।
 


উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের কারীরহাট গ্রামের আলম বেপারী (৪৮) জানালেন, তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সারাদিন শিমের মাচায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বিক্রির পাশাপাশি বীজও উৎপাদন করছেন তিনি।

তিনি জানান, গত বছর তিনি ৬ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে প্রায় ২৫হাজার টাকা আয় করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চলতি মৌসুমে ১৮/২০ হাজার টাকা খরচে ৬৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল শিমের চাষ করেন। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য এবং বাকী ৩৫ শতাংশ জমির শিম সবজি হিসেবে গত এক মাস ধরে বাজারে বিক্রি করছেন।

ওই গ্রামের আরেক সবজি চাষি জোনায়েত আলী (৪৮)।  তিনিও প্রায় ৩৩ শতাংশ জমিতে শীতকালীন শিম চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এই বছর পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম। অন্য মৌসুমবাদে শীতকালীন সময়ে শিম চাষের চেয়ে শিম চাষে রোগবালাই অনেকাংশে কম। তাই ওষুধ ও সার খরচও কম হয়েছে। তিনি জানান শিমের বাজারদামও ভালো। প্রতিকেজি শিমের পাইকারি মূল্য পেয়েছি ১৫ থেকে ২০ টাকা। প্রতিমন শিম ছয়শ থেকে আটশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার চরনাছিরপুর ইউনিয়নের সবজি চাষি আব্দুর রাজ্জাক করিম (৪২) বলেন, ‘শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে এই শিমের বীজ বপন করতে হয়। চারা বের হওয়ার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসা শুরু হয়। দেড় মাস বয়সের গাছ থেকে শিম তোলা শুরু হয়। তিন থেকে চার দিন পর পর শিম তুলে আমরা বিক্রি করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকেই এর আগে সবজি চাষ করে দাম না পেয়ে ঋণে জর্জরিত ছিলাম। এখন আমরা অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি।’

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, শিমের বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। শিমের বিচি প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। সর্বত্রই এ সবজির পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবছর সদরপুর উপজেলার ৩৫০হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে শিম চাষ হয়েছে ৯০ হেক্টর জমিতে।’




রাইজিংবিডি/ ফরিদপুর/১৯ জানুয়ারি ২০১৯/মো. মনিরুল ইসলাম টিটো/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়