ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ফুটবল-ঈশ্বরের জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ৩০ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুটবল-ঈশ্বরের জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু : ম্যারাডোনা। পুরো নাম দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। অনেকের কাছেই আজও তিনি বিশ্বসেরা ফুটবল খেলোয়াড়।৮৬’র বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অধিনায়কের ৫৮তম জন্মদিন আজ।

এই ফুটবল কিংবদন্তির জন্ম ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরের পলিক্লিনিকো এভিতা হাসপাতালে। তিনি ছিলেন খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

বেড়ে ওঠেন বুয়েনেস আইরেসের দক্ষিণ প্রান্তের শহর ভিয়া ফিওরিতোতে। তিন কন্যা সন্তানের পর তিনিই ছিলেন বাবা-মা’র প্রথম পুত্র সন্তান। তার ছোট দুই ভাই  হুগো এবং রাউলও পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়।

১০ বছর বয়সেই আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের যুব দলের একজন মূল খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ১২ বছর বয়সে বল দিয়ে জাদুকরী কারুকার্য দেখিয়ে তিনি দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিতেন।

অনেক বিশেষজ্ঞ, ফুটবল সমালোচক, প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড় এবং ফুটবল সমর্থক তাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে গন্য করেন। তিনি ফিফার বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ে পেলের সাথে যৌথভাবে ছিলেন।

ম্যারাডোনাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুইবার স্থানান্তর ফি এর ক্ষেত্র বিশ্বরেকর্ড গড়েন। প্রথমবার বার্সেলোনায় স্থানান্তরের সময় ৫ মিলিয়ন ইউরো এবং দ্বিতীয়বার নাপোলিতে স্থানান্তরের সময় ৬.৯ মিলিয়ন ইউরো। নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। ক্লাব পর্যায়ে তিনি তার নাপোলিতে কাটানো সময়ের জন্য বিখ্যাত, যেখানে তিনি অসংখ্য সম্মাননা জিতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি ৯১ খেলায় ৩৪ গোল করেন।

তিনি চারটি ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ছিল ১৯৮৬ বিশ্বকাপ, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং দলকে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেন। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণ গোলক জিতেন ।

ম্যারাডোনার কথা বললেই তার বিখ্যাত দু’টি গোলের কথা চলে আসে৷ যেমন তার ‘হ্যান্ড অফ গড’৷ কারণ হাত ছুঁইয়ে গোল করার পরেই ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’ করেছিলেন ম্যারাডোনা। গোল দু’টি হয়েছিল একই ম্যাচে এবং তাও মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে। ম্যাচের ৫১ মিনিটে রেফারিকে ফাঁকি দিয়ে হাত দিয়ে বল জালে ঠেলেছিলেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর। এই গোলটি হয়তো ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়েই থাকত। কিন্তু চার মিনিট পরেই যে অবিশ্বাস্য গোল তিনি করে দেখালেন, তাতে সব মিলিয়ে পুরো গল্পটা হয়ে উঠল ফুটবলীয়-পুরাণের অংশ। ছ’জন ইংলিশ ফুটবলারকে কাটিয়ে মাঝমাঠেরও ভেতর থেকে একাই বল টেনে নিয়ে গিয়ে ম্যাচের এবং নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন৷ যা ছিল দেখার মতোই৷

১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তিনি তার কোকেইন নেশা ত্যাগ করেন। ২০০৮ সালে তাকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১০ বিশ্বকাপের পর চুক্তি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আঠারো মাস এই দায়িত্বে ছিলেন।

বাংলাদেশের নামও জানেন এই কিংবদন্তি।গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এক ক্রীড়া সাংবাদিককে সুযোগ পেলে বাংলাদেশে আসবেন  বলেও জানিয়েছিলেন।

আর্জেন্টিনার ফুটবল-ঈশ্বরকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেন,‘আপনি কি বাংলাদেশের নাম শুনেছেন? বাংলাদেশে আপনার কোটি কোটি ভক্ত আছে’—একথা বলার পর  ম্যারাডোনা বলেন, ও বাআআআংলাদেশ! হুম হুম হুম। বাংলাদেশ চিনি। নাম শুনেছি।

সাংবাদিক জানান, বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে ভালোবাসে। ৯৪-এর বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঝপথে তিনি খেলতে না পারায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ কেঁদেছিল। একথা শুনে অবাক হন ম্যারাডোনা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ অক্টোবর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়