ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বগুড়ায় লোকালয়ে ইটভাটা, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চলছে পড়ালেখা

একে আজাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩০ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বগুড়ায় লোকালয়ে ইটভাটা, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চলছে পড়ালেখা

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার ২১১টি ইটভাটার অধিকাংশই চলছে নবায়ন ও হালনাগাদ ছাড়াই। অন্যদিকে অনেক ইটভাটা নিয়ম বহির্ভূত স্থাপন করা হলেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই।

দেখা গেছে, বগুড়া সদর ও শাজাহানপুরে লোকালয়ে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আইনত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম নেই, অথচ এসব এলাকায় দেদারছে চলছে ইটভাটার কার্যক্রম। এতে করে শিক্ষার্থীদেরকে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

জেলার বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় কাগজে কলমে ইটভাটা ২১১টি হলেও রেজিস্ট্রেশন ও ছাড়পত্র ছাড়া আরো অনেক নতুন ভাটা স্থাপন হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ, মাদলা এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদরাসা আছে। আর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক আগে স্থাপিত। এই এলাকার চাচাইতারা-মাদলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৩১ সালে। অন্যান্য বিদ্যালয়গুলোও এমনই পুরনো। এর প্রত্যেকটিই ইটভাটা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। আবার কোনটি একেবারে ভাটার মুখোমুখি

মাদলা হাটের পূর্বে এমএমবি ইটভাটাটি চাঁচাইতারা-মাদলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচশ মিটারের মধ্যে এবং চাঁচাইতারা উচ্চ বিদ্যালয়টিও প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। সুজাবাদ উত্তর পাড়া দাখিল মাদরাসাটির মুখোমুখি আছে এআরবি ইটভাটা, আর সুজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।

চাঁচাইতারা-মাদলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত ইসলাম জানায়, ভাটায় ইট পোড়ার সময় যে গন্ধ ও তাপ ছড়িয়ে পড়ে তাতে নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। চোখও জ্বালা করে।

পঞ্চম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান জানায়, ইট পোড়ার ধোঁয়ায় মাথা ঝিমঝিম করে। একই কথা বলে এই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদ হাসানের।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘ইটভাটার গ্যাসের কারণে শ্বাসকষ্ট হওয়া খুব স্বাভাবিক। ভাটা থেকে গ্যাসের সঙ্গে মিথেন ও সালফাইড নির্গত হয়। ফলে এসব গ্যাস বাতাসের সঙ্গে মিশে মানুষ আক্রান্ত হবে। প্রাথমিক অবস্থায় শিশু-কিশোর-বৃদ্ধরা আক্রান্ত হবে, পরে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে ইটভাটা থাকলে এর ধোঁয়া বা গ্যাসে শিক্ষার্থীদের নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন অ্যাজমা, মাথা ঝিমঝিম করা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগ ব্যহত হতে পারে। এছাড়া ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বসবাসরত মানুষদের চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ 

সুজাবাদ এলাকার স্থানীয়রাও জানালেন লোকালয়ে ইটভাটা স্থাপনে নানা ধরনের সমস্যার কথা। সুজাবাদ পশ্চিম পাড়ার এক গৃহবধূ জানান, ভাটা এলাকায় বাস করায় নিজের পাশাপাশি তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েরও অ্যাজমা হয়েছে। আবার ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় এখানকার গাছের ফলও নষ্ট হয় বলে তিনি দাবি করেন।

পশ্চিম পাড়ায় অবস্থিত মেসার্স বদর ইটভাটার একাংশের মালিক আবু জাফর বলেন, ‘সুজাবাদ এলাকায় প্রায় ৩১টি ভাটা আছে। আর ভাটার মালিকরাও এই এলাকায় বাস করে। অন্যদের ক্ষতি হলে আমাদেরও ক্ষতি হবে। তাছাড়া সরকার সবকিছু দেখে তো নিবন্ধন দিয়েছে। না দিলে তো আমরা ব্যবসা করতাম না।’

এসব বিষয় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘ইট প্রস্তুত ও স্থাপন আইন ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী ভাটার চিমনি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা যাবে না, থাকলে ভাটা স্থাপন হবে না।’




রাইজিংবিডি/বগুড়া/৩০ মে ২০১৮/একে আজাদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়