ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু, হোসেন খান ও আ’লীগের পুরানা পল্টনের অফিস

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৫ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধু, হোসেন খান ও আ’লীগের পুরানা পল্টনের অফিস

পাবনায় বঙ্গবন্ধু ও হোসেন খান

শাহীন রহমান, পাবনা : ঊনসত্তরে পুরানা পল্টনের একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। বাড়িটির মালিক ছিলেন পাবনার প্রতিষ্ঠিত হোসিয়ারী ব্যবসায়ী হোসেন খান।

হোসেন খান ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ছিল তাদের দু’টি বাড়ি। যার একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময় আওয়ামী লীগের অফিস হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন।

ষাটের দশকে যখন দেশের অন্যান্য স্থানের মত পাবনাতেও প্রকাশ্যে কেউ নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিতে সাহত পেতো না, সেই সময়ে তিনি পাবনায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন। দক্ষ এই সংগঠকের দোকানে নিয়মিত বসতেন ডাক সাইটে আওয়ামী লীগার আমজাদ হোসেন এমএনএ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, আব্দুর রব বগা মিয়া, আলহাজ্ব আবু তালেব খন্দকার সহ আরো অনেকে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনের দু’টি বাড়ি ছিল হোসেন খানের মা আজিজন নেসার নামে । ষাটের দশকের শেষ দিকে ঢাকায় আওয়ামী লীগের অফিস ভাড়া পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এসময় পাবনার এমএনএ আমজাদ হোসেনসহ অন্যরা হোসেন খানকে অনুরোধ করেন, তাদের ঢাকার দুটো বাড়ির মধ্যে যে কোনো একটি আওয়ামী লীগের অফিস হিসাবে ভাড়া দেওয়ার জন্য। তাদের অনুরোধে রাজী হন হোসেন খান। কথা শুরু হয় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু পুরানা পল্টনের ওই বাড়িটি আওয়ামী লীগের অফিস হিসাবে ভাড়া নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জাতির পিতার আগ্রহেই হোসেন খান বাড়িটি ভাড়া দেন।  ৫১ নম্বর পুরানা পল্টন হয়ে যায় আওয়ামী লীগের অফিস ঠিকানা।

১৯৬৯ সালের ১ জুন হোসেন খানের বড় ছেলে হাসান কবীর ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে সরাসরি দেখা করে ঐ বাড়ির চাবি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন। এসময় বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে হোসেন খানকে চিঠি লিখে বাড়ির চাবি পাওয়ার কথা জানান। সেই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু লিখেন ‘জনাব হোসেন খান সাহেব। আপনার বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা ছিলো। তার চাবি আপনার ছেলের মারফত আমি পেয়েছি’।

ওই দিন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত বিমর্ষ। যার প্রমাণ পাওয়া যায় সেই চিঠিতে। চিঠির শেষ প্রান্তে বঙ্গবন্ধু লিখেন, ‘আজ আমার মনের অবস্থা খুব খারাপ। পূর্ব বাংলার খ্যাতনামা সম্পাদক ইত্তেফাকের মানিক মিয়া রাওয়ালপিন্ডিতে ইন্তেকাল করেছেন। আপনারা সবাই তার রুহের মাগফেরাত কামনা করবেন।’

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদাররা পুরানা পল্টনের আওয়ামী লীগের অফিসটি জ্বালিয়ে দেয়। তাদের নারকীয়তায় পুরো বাড়িটি পুড়ে যায়। এর পর থেকে বাড়িটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়।
 

হোসেন খানকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠি


হোসেন খানের ছোট ছেলে ফারুক কবীর খান জানান, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক শহীদ হওয়ার পরে হোসেন খানের এক ভাইয়ের সন্তানরা সেই বাড়িতে বসবাস শুরু করে। হোসেন খানের ৮ ছেলে ২ মেয়ের সবাই জানতো বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়ে আছে। ১৯৮৪ সালে হোসেন খান ইন্তেকাল করার আগ পর্যন্ত তার সন্তানরা ওই বাড়িটির বিষয়ে আর কিছুই জানতে পারেননি ।

ফারুক কবীর খান জানান, তাদের পরিবারকে অবহিত না করে ২০০৪  সালের দিকে তার বাবা হোসেন খানের ভাইয়ের ছেলেরা পুরানা পল্টনের দু’টো বাড়িই মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং করার জন্য ডেভেলপারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় । এ খবর জানতে পেরে হোসেন খানের সন্তানরা ঢাকায় গিয়ে কয়েক দফা বাড়ীটিতে তাদের অংশীদারিত্ব আছে বলে জানিয়েও বারবার প্রত্যাখ্যত হয়ে ফিরে আসে।

একপর্যায়ে তারা (হোসেন খানের সন্তানেরা) ডেভেলপারের সাথে কথা বললে ডেভেলপার তাদের সাথেও একটি চুক্তিনামা সম্পন্ন করেন। যদিও পরে ডেভেলপার সে চুক্তি রক্ষা করেননি।

হোসেন খানের ছোট ছেলে ফারুক কবীর খানসহ অন্যরা জানান, শৈশবে তারা দেখেছেন বঙ্গবন্ধু পাবনাতে এলে হোসেন খানের পাবনার বাড়িতে আসার চেষ্টা করতেন। হোসেন খানের ছেলেদের সুন্নতে খাতনার অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু গোপালপুর মহল্লার হোসেন খানের বাড়িতে এসেছিলেন।

৭০ এর দশকের পাবনার ডাকসাইটে ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আব্দুর রহিম পাকন জানান, ‘সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে পাবনার হোসেন খানের অনেকটাই পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো। বঙ্গবন্ধু পাবনাতে এলে হোসেন খান সাহেবের বাড়িতে আসতেন। ১৯৬৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু পাবনাতে আসেন। সেদিন তিনি দুপুরে লাঞ্চ করেন হোসেন খান সাহেবের বাড়িতেই।

গোপালপুর মহল্লার প্রবীণ ব্যক্তি রুহুল আমিন ১৯৬৯ সালের স্মৃতি রোমন্থন করে জানান, বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে হোসেন খান সাহেবের বাড়ি সাজানো হয়েছিলো সুন্দর করে। দুপুরের দিকে একটি জীপ আর তার সাথে তিনটি গাড়ির বহর নিয়ে বঙ্গবন্ধু হোসেন খান সাহেবের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি ওই বাড়িতে অনেক সময় কাটিয়েছেন। নিজের পরিবারের সদস্যদের মত করে তিনি হোসেন খান সাহেবের বাড়ির লোকজনের খোঁজ খবর নেন।




রাইজিংবিডি/পাবনা/১৫ আগস্ট ২০১৭/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়