বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী
ডেস্ক রিপোর্ট: শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জাতির পিতা’ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যে নারীর, তিনি তার সহধর্মিনী ‘বঙ্গমাতা’ বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গমাতার ৮৮তম জন্মবার্ষিকী আজ।
রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তিনি জীবনভর বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা ও মনোবল জুগিয়েছেন। সংসারের দায়িত্ব তিনি একাই সামলে নিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু নিশ্চিন্তে মন দিয়েছেন দেশের কাজে।
বঙ্গমাতা মনেপ্রাণে একজন আদর্শ নারী। বিচক্ষণ উপদেষ্টা ও পরামর্শকারী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আদর্শ ভাবী। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান- মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা, জওহরলাল নেহেরুর স্ত্রী কমলা এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর সাথে তুলনা করতে গিয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে ‘বঙ্গমাতা’ অভিধায় ভূষিত করেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ফজিলাতুন্নেছা কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিনীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী। তার ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব ইতিহাসেও।
১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ জহুরুল হক এবং মাতা হোসনে আরা বেগমের কন্যা শেখ ফজিলাতুন্নেছার ডাক নাম ছিল রেণু। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে ও পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারান রেণু। এরপর থকে বঙ্গবন্ধুর মায়ের কাছে বড় হন।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা প্রথমে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়ালেখা করলেও পরবর্তীতে ঘরে থকেই পড়াশুনা চালিয়ে যান। অত্যন্ত প্রখর স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, অসীম ধৈর্য্য ও সাহস নিয়ে তিনি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারতেন। স্বামী শেখ মুজিবুর রহমান যখন কলকাতায় থাকতেন, তিনি তখন সময় কাটাতেন নানা রকম বই পড়ে। তিনি সঙ্গীতপ্রিয়ও ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে থাকা গ্রামোফোনসহ সঙ্গীতের সব রকম বাদ্যযন্ত্রই তিনি সংগ্রহ করতেন।
বঙ্গবন্ধু নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে সংসার ও রাজনীতির কর্মময় জীবনের বর্ণনায় বারবারই স্ত্রী বেগম মুজিবের নাম উচ্চারণ করেছেন।
ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে বার বার জেলে যেতে হয়েছিল। সেই কারারুদ্ধ দিনগুলোতেও বঙ্গমাতা যোগ্য সহধর্মিনীর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। সর্বস্তরের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান বেগবান হয়। প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হলেন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা তাদের অবিসংবাদিত নেতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়ে বরণ করে নেয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্য্য নিয়ে বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। এমনকি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে বিবেচনা করা যায় বেগম ফজিলাতুন্নেছকে। এরপর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজেও বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদা সম্পন্ন জীবনদান করেন।
মহিয়সী এই নারী ১৫ আগস্টে শহীদ হন। ১৯৭৫ সালের ওই কালরাত্রিতে জাতির পিতার হত্যাকারীদের নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনিও শাহাদাত বরণ করেন।
বিভিন্ন সংগঠন আজ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী পালন করছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে তাঁকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘মহিয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি জাতির পিতার সঙ্গে একই স্বপ্ন দেখতেন।’
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় বনানী কবরস্থানে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল আজ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মৃতি স্বর্ণপদক, বৃত্তি, স্মৃতি বক্তৃতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিকেল ৫টায় হল মিলনায়তনে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং কোষাধ্যক্ষ ও ট্রাস্ট ফান্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ আগস্ট ২০১৮/শাহ মতিন টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন