বদলে যাওয়া এনবিআরের ছোঁয়া মাঠপর্যায়ে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। আর পরিবর্তনের এ উদ্যোগ মাঠপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বদলে যাওয়ার রূপকল্প মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোয় ছড়িয়ে দিতে পারলে রাজস্ব আহরণে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।

সোমবার রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া ভবনে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা-পূর্ব আয়োজিত জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপনের ধারাবাহিকতায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট (ঢাকা-পূর্ব) মো. জামাল হোসেন বলেন, মাথায় বাড়ি দিয়ে নয় মাথায় হাত দিয়ে কর আদায় করতে চাই। বদলে যাও, বদলে দাও- এ সংস্কৃতি চালু ও মানুষের মাঝে ভীতি দূর করতে চাই। আমার অফিসকে করদাতাবান্ধব করার উদ‌্যোগ নিয়েছি।

ইআরএফ’র পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, হবে। স্টেকহোল্ডারসহ সবার সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের মতবিনিময়, প্রচার-প্রচারণা, উদ্ভাবন অব্যাহত রয়েছে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আমরা অব্যাহত বদলে যাওয়ার মধ্যে আছি। গণশুনানির মাধ্যমে করদাতাদের আরও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

মো. জামাল হোসেন বলেন, বিদেশ নির্ভরতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। যে দেশের কর দেওয়ার হার বেশি সে দেশের অর্থনীতি তত বেশি মজবুত। ভিয়েতনামের ৯ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ কর দেয়। সে তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। মাথায় বাড়ি দিয়ে নয় মাথায় হাত দিয়ে কর আদায় করতে চাই। এনবিআরের খোলস পরিবর্তন করতে চাই।

সভায় ইআরএফ’র সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহে ইআরএফকে মতবিনিময়ে আহ্বান জানানোর জন্য ঢাকা-পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটকে ধন্যবাদ। বর্তমান এনবিআর চেয়ারম‌্যানের হাত ধরে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে এনবিআর বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে এনবিআরের মাঠপর্যায়ের সব অফিস।

তিনি বলেন, এনবিআরের বদলে দেওয়ার উদ্যোগ মাঠপর্যায়ে পৌঁছেছে কীনা- তা ভাবনার বিষয় ছিল। কিন্তু ঢাকা-পূর্ব কমিশনারেটের উদ্যোগ আর উদ্ভাবন ভাবনার চেয়েও বেশি হয়েছে। এর প্রমাণ শুধু এনবিআর নয় মাঠ অফিসেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বদলে যাওয়ার রূপকল্প গোটা দেশের মাঠপর্যায়ের অফিসে ছড়িয়ে দিতে পারলে রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। রাজস্ব আহরণে সাধারণ মানুষকে নয়, ফাঁকিবাজদের আঘাত করতে হবে। রাজস্ব আহরণের চিত্র দেখে বলা যাচ্ছে কর্মকর্তারা কতটুকু নিবেদিত। কর্মকর্তাদের দেশের উন্নয়নে রাজস্ব আহরণে সঠিকভাবে পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অন‌্যদিকে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, এ ধরনের মতবিনিময়ের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণে সহযোগিতা করার তাগাদা তৈরি করে দেবে। এনবিআরকে সহযোগিতা করা মানে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা। দেশে মেগা প্রকল্প দেখেই বোঝা যাচ্ছে উন্নয়ন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাঝে কর-সচেতনতা বেড়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের সভা বারবার আয়োজনে মানুষ অনুপ্রাণিত হবে, রাজস্ব বাড়বে। দেশের মানুষ যখন জানতে পারবে তাদের দেওয়া ভ্যাট-ট্যাক্সের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে তখন রাজস্ব বাড়বে। রাজস্ব বিষয়ে আমরা তেমন সচেতন নই। সচেতনতা তৈরিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যত বেশি মতবিনিময় করা যাবে তত বেশি রাজস্ব বাড়বে। ইআরএফ’র পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

ইআরএফ’র অন‌্য সদস‌্যরা আরো বলেন, ইনকাম ট‌্যাক্স শনাক্ত কার্ড কিংবা ভ্যাট অনার কার্ডের সুবিধাসমূহের বিষয়ে করদাতারা অবগত নন। এ বিষয়টি জানলে করদাতারা আরো উৎসাহিত হবে। রাজস্ব কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা করা, উদ্ভাবন ও অটোমেশনকে গুরুত্ব দেওয়া, ইসিআরের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তারা।

সভায় অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, কমিশনারেটে কাজের গতি আনা, ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধি এবং সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন উদ্ভাবন যেকোনো ফাইল, কাগজের ওপর লেখা রয়েছে- আমাকে ফেলে রাখবেন না। সব সময় এ কমিশনারেট রাজস্ব আর সেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর এ কমিশনারেটের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১০৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ৫১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বিপরীতে ৫২৯ কোটি ৩৭ লাখ ও ১৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার উৎসে কর আহরণ হয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত এ কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ৩২ শতাংশ। আর বিদায়ী অর্থবছর এ কমিশনারেট ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা আহরণ করেছে।

সভায় পূর্ব কমিশনারেটের পক্ষ থেকে ইআরএফকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৭/এম এ রহমান/মুশফিক