ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বন্ধুত্ব থেকে সৃষ্টি হচ্ছে কিশোর গ্যাং

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩২, ২২ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বন্ধুত্ব থেকে সৃষ্টি হচ্ছে কিশোর গ্যাং

মাকসুদুর রহমান : স্কুলকে কেন্দ্র করে প্রথমে ঘটে পরিচয়। এরপর বাসার দূরত্ব বুঝে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। এরই মাঝে তথ্য প্রযুক্তিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলাপ, পশ্চিমা ধ্যান ধারণার বিষয় নিয়ে মতবিনিময়। একপর্যায়ে নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গা সৃষ্টি হয়, গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। এরপর চিন্তা বা মতের মিল হলেই কয়েকজন মিলে গড়ে ওঠে গ্রুপ, কিশোর গ্যাং। বেশির ভাগ গ্রুপ এভাবেই তৈরি হয়েছে।

এমন ধারণাই দিয়েছে রাজধানীর উত্তরায় আইডিয়াল গ্রুপ নামের কিশোর গ্যাং-এর সদস্য হিশাম রুম্মন। বুধবার দুপুরে উত্তরায় একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে এই কিশোর জানায়, আবাসিক এলাকায় তুলনামুলক নিরিবিলি সড়ক ও গলির মোড় এবং নির্দিষ্ট কিছু জায়গা বেছে নিয়ে তারা দিনের বেলা নির্ধারিত সময়ে আড্ডা দেয় এবং মতবিনিময় করে।

এত অল্প বয়সে অপরাধ করার মত তৎপরতা তাদের কেন- এ প্রশ্নের জবাবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এই ছাত্র বলেন, ‘ভয়ঙ্কর রূপ আমরা সব সময় ধারণ করি না। বিশেষ করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার তথা এলাকায় তাদের ওপর কেউ অন্যায় হস্তক্ষেপ করলে, প্রেমঘটিত কারণে কোন গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হলে কেবল সেক্ষেত্রেই টার্গেট করা হয়। সেক্ষেত্রে সময়ভেদে খুন-খারাবি করতেও তারা প্রস্তুত। তাদের গ্রুপে ৪০ জনের মতো সদস্য আছে। এদের প্রত্যেকেই উত্তরার বিভিন্ন নামী-দামি কিংবা ইলিংশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র।

অবশ্য উত্তরা পুলিশ প্রশাসন এখন কিশোর গ্যাং-এর ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। কিশোররা আড্ডা দিতে পারে- এমন সব জায়গা নজরদারির আওতায় এসেছে। উত্তরা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে সেজন্য প্রতিটি থানার ওসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সচেতনতামূলক কর্মকা- পরিচালনা করার এবং অভিবাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এক্ষেত্রে পরিবারকেও সজাগ থাকতে হবে। স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্রদের প্রতি যেন আরও মনোযোগী হয় তার জন্যও শিক্ষকদের অবহিত করা হয়েছে।’

কিশোর অপরাধী প্রসঙ্গ তুলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এক শ্রেণির পেশাদার অপরাধী কিশোরদের ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে। কিশোরদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি কম থাকে আর এ সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। তারা কিশোরদেরকে অস্ত্র ও নানা অবৈধ মালামাল বহনে ব্যবহার করছে। এই পেশাদার অপরাধীরা কিশোরদের কাছে ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত।’

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরায় বিভিন্ন সেক্টরে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি তথা সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস। এলাকাটি অভিজাত পাড়া হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে রেস্টুরেন্ট এবং ফাস্টফুড ও বিভিন্ন খাবারের দোকান। প্রতিদিনই এসব স্থানে স্কুলপড়–য়া কিশোররা এসে জড়ো হয়। তারা একাধিক টেবিল দখল করে খাবার খায় এবং নিজেদের আধিপত্য বিস্তার তথা গ্রুপের কর্মকা- নিয়ে আলাপ করে। গ্রুপের নেতৃত্বে কে থাকবে, তার দ্বারা সম্ভব কিনা, নতুন কাউকে গ্রুপে ভেড়ানো, কার সঙ্গে কি কারণে শত্রুতা, কাকে ঘায়েল করতে হবে ইত্যাদি আলোচনা করে। দুপুরের আগ পর্যন্ত তারা এসব স্থানে অবস্থান করলেও পরে বন্ধুর বাসা, কোন বাড়ির ছাদ কিংবা গলির মোড়ে চলে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ অর্ধশতাধিক স্কুল রয়েছে। প্রতিটি স্কুলে সব সময় প্রধান ফটক লাগানো থাকে। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, স্কুলের ভেতরে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা আর কিছু করছে কিনা তা শিক্ষক বা অভিভাবকদের বোঝার উপায় থাকে না। এই পরিবেশ কিশোরদের গ্রুপ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। বেশিরভাগ স্কুলে ছাত্ররা ঠিকমতো ক্লাস করছে কিনা, তার খবর রাখা হয় না। অনেক কিশোর পড়াশোনা ঠিকমতো না করে গ্রুপ নিয়ে মেতে থাকছে।

এ কারণে সন্তানদের বিষয়ে অভিভাবকদের আরও বেশি খোঁজ খবর রাখা এবং তাদেরকে সঙ্গ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন স্থানীয়রা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জানুয়ারি ২০১৭/মাকসুদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়