ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বরফের নিচে সারি সারি আগ্নেয়গিরি!

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১৬ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বরফের নিচে সারি সারি আগ্নেয়গিরি!

প্রতীকী ছবি

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : পশ্চিম অ্যান্টার্টিকার বরফের আস্তরণে নিচে কিছু আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব আগেই পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এবার অঞ্চলটির বরফের নিচে যে পরিমাণ আগ্নেয়গিরির অস্তিত্বের খোঁজ মিলেছে তা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।

ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি পশ্চিম অ্যান্টার্টিকার বিশাল অঞ্চল জুড়ে দুই কিলোমিটার পুরু বরফের নিচে প্রায় ১০০টি আগ্নেয়গিরির সন্ধান পেয়েছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টির উচ্চতা প্রায় সুইজারল্যান্ডের ইগার আগ্নেয়গিরির (৩,৯৭০ মিটার) সমান।

ভূতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, পশ্চিম অ্যান্টার্টিকার বরফের দুই কিলোমিটার নিচে অবস্থিত এই অঞ্চলটি পূর্ব আফ্রিকার আগ্নেয় পর্বতমালাকে পেছনে ফেলবে, যেটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়গিরির ঘনত্ব অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়।

হিমবাহ বিশেষজ্ঞ রবার্ট উইলিয়াম যিনি গবেষণায় সহায়তা করেছিলেন তিনি বলেন, আগ্নেয়গিরির এই সারি উদ্বেগজনক ফলাফল তৈরি করতে পারে। যদি এই আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটিও বিস্ফোরিত হয় তাহলে এটি পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের আস্তরণকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে। আর এতে করে সাগরে বরফ গলে পড়ার হার বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে: এই আগ্নেয়গিরিগুলো কতটা সক্রিয়? এটা আমাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব নির্ধারণ করতে হবে।’

নতুন আবিষ্কৃত আগ্নেয়গিরিগুলো ১০০ থেকে ৩,৮৫০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার, যার সবই বরফে ঢাকা। কোথাও কোথাও এই বরফের স্তর চার কিলোমিটার পর্যন্ত পুরু। শক্তিশালী রাডার ব্যবহার করে সারি সারি আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

পশ্চিম অ্যান্টার্টিকার রিফ্ট সিস্টেমের ওপর নজরদারি করে প্রধান গবেষক ডা. বিংহাম দেখতে পেয়েছেন যে, অ্যান্টার্টিকার রস অঞ্চল থেকে পেনিনসুলা অঞ্চল পর্যন্ত প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার অঞ্চল ‍জুড়ে আগ্নেয়গিরিগুলো ছড়িয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি, এত বেশি সংখ্যক আগ্নেয়গিরি অঞ্চলটির বরফের নিচে লুকিয়ে রয়েছে, যা আমরা ধারণা করতে পারিনি।’

ডা. বিংহাম আরো বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ, রস অঞ্চলের বরফের তলদেশে আরো বেশি সংখ্যক আগ্নেয়গিরি থাকতে পারে, তাই আমি মনে করি খুব সম্ভবত এই অঞ্চল পৃথিবীর বৃহৎ আগ্নেয়গিরির অঞ্চল, পূর্ব আফ্রিকার চেয়েও বড়- যেটি নায়রাগঙ্গো, কিলিমানজারো, লোনগোনোট এবং অন্যান্য সব সক্রিয় আগ্নেয়গিরির ঘনত্বের জন্য পরিচিত।

আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। যদি এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয় তাহলে তা এই অঞ্চলের বরফের আস্তরণগুলোকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা ইতিমধ্যেই একটি প্রভাব ফেলেছে।

ডা. বিংহামের আশঙ্কা, এর ফলে অ্যান্টার্টিকার বরফ গলা প্রবাহ সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, অতীতে এই আগ্নেয়গিরিগুলো কেমন সক্রিয় ছিল তা আমাদের জানা নেই।

বর্তমানে বিশ্বের যেসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অগ্ন্যুৎপাত চলছে, সেসব অঞ্চল ইতিমধ্যে হিমবাহ হারিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, আগ্নেয়গিরির ওপর বরফের আস্তরণ না থাকলে, ওই অঞ্চলের আগ্নেয়গিরির ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং আগ্নেয়গিরি আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উষ্ণতা ইতিমধ্যে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বরফের আস্তরণে প্রভাব ফেলেছে। যদি উষ্ণতার কারণে উল্লেখযোগ্য হারে বরফ হ্রাস হতে থাকে, তাহলে বরফের আস্তরণের নিচে থাকা আগ্নেয়গিরির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হতে পারে, যা বরফের আস্তরণকে আরো বেশি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ডা. বিংহাম বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয় যার ওপর আমাদেরকে খুব ঘনিষ্ঠ নজর রাখতে হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়