ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

দেশের গর্ব ১৩ বছর বয়সি হাফেজ তরিকুল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩০ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশের গর্ব ১৩ বছর বয়সি হাফেজ তরিকুল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ‘আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম, আমি পারবো কিনা। কারণ এটা ১০৪টি দেশের হাফেজদের নিয়ে সবচেয়ে বড় কোরআন প্রতিযোগিতা। আর প্রত্যেক দেশের সেরা প্রতিযোগিরা এখানে লড়তে এসেছেন। আমি সব সময় চিন্তা করেছি, এখানে আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি, আমার সম্মান মানে দেশের সম্মান। অবশেষে আমি আমার দেশের সম্মান রাখতে পেরেছি।’

রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার প্রথম স্থান অর্জনকারী বাংলাদেশের ১৩ বছর বয়সি হাফেজ তরিকুল ইসলাম।

তরিকুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা দাউদকান্দি মালিগাঁও গ্রামে। বাবা আবু বকর সিদ্দিক অবসর প্রাপ্ত হাই স্কুল শিক্ষক। সাত ভাই বোনের মধ্যে তরিকুল পঞ্চম। পরিবারের ইচ্ছা ছিল ছেলেকে বড় আলেম বানানোর। তাই ২০০৯ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে তরিকুলকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় ঢাকার একটি হিফজ মাদ্রাসায়।

তরিকুল মাত্র এক বছরে আয়ত্ত্ব করেছেন পবিত্র কোরআন শরীফ। মেধাবী তরিকুল শুধু কোরআন হিফজ হয়েই বসে থাকেনি। হাফেজিতে এখনো পড়ছেন, একই সঙ্গে পড়ছেন কাওমী মাদ্রাসায় ও আলিয়া মাদ্রাসায়। কওমী মাদ্রাসা থেকে সে চলতি বছর মিজান জামাত (৫ম শ্রেণী) শেষ করেছেন। এ বছর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে জেডএসসি পরীক্ষার্থী।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি ১৩ বছর বয়সি কিশোর কোরআনের হাফেজ তরিকুল ইসলাম সম্প্রতি অংশ নিয়েছিল ২১তম দুবাই আন্তর্জাতিক পবিত্র কোরআন প্রতিযোগিতায়। প্রথম রাউন্ডে ১০৪ জন প্রতিযোগির মধ্যে সে সেরা দশে জায়গা করে নেয়। ফাইনাল রাউন্ডে সবাইকে চমকে দিয়ে অর্জন করে প্রথম স্থান। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার দিরহাম। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

‘এ বছর এখন পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতায় যত জন প্রতিযোগী পারফরম্যান্স করেছেন- তার মধ্যে তরিকুল সেরা। সে ভালো করেছে বলেই শেষ ধাপে উন্নীত হয়েছে।’ প্রথম স্থান অর্জন করার পর দুবাইয়ের গালফ নিউজ অনলাইনে হাফেজ তরিকুল সম্পর্কে এমন তথ্যই দেওয়া হয়েছিল।

হাফেজ তরিকুল ঢাকা যাত্রাবাড়ীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ ক্বারী নেছার আহমাদ আন নাছিরী। তিনি জানান, তরিকুল আল্লাহর অশেষ রহমতে বেশ ভালো তিলাওয়াত করেছে। ফাইনালে সেরাদের সেরা হয়ে দেশের সুনাম বয়ে এনেছে।

 


(হাফেজ তরিকুল ইসলামের সঙ্গে লেখক। ছবি: সাগর হোসেন সবুজ)

বাংলাদেশের অনেক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে তরিকুল। তরিকুল জানান, ২০১৪ সালে মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘আল কোরআনের আলো’ প্রতিযোগিতায় তিনি ২য় স্থান লাভ করেন। পুরস্কার হিসেবে পান দুই লাখ টাকা। ২০১৫ সালে বাংলাভিশনে ‘পবিত্র কোরআনের আলো’ প্রতিযোগিতায় ৬ষ্ঠ স্থান লাভ করেন, পান ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার। ২০১৭ সালে এনটিভিতে ‘পিএসসি কোরআনের আলো’ প্রতিযোগিতায় ৫ম স্থান লাভ করেন, পান ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার। ২০১৭ সালে হুফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশনের ‘জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায়’ ২য় স্থান লাভ করেন, পান ২০ হাজার টাকা। এছাড়া আরো বেশ কিছু কোরআন প্রতিযোগিতায় অর্জন করেছেন ১ম, ২য়, ৩য় স্থান অর্জনসহ অন্যান্য পুরস্কার।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তরিকুল বলেন, কোরআনের আলোয় জীবন গড়তে চাই। কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে সারা জীবন ব্যয় করতে চাই। পুরস্কারের টাকার একটি অংশ দিয়ে ভবিষ্যতে মা-বাবাকে হজ্ব পালন করানোর ইচ্ছার কথা জানান তরিকুল।

২১তম দুবাই আন্তর্জাতিক পবিত্র কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের আল মামজার দুবাই সাংস্কৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেওয়া হয়। দুবাইয়ের যুবরাজ আহমদ বিন মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুমের কাজ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার দিরহাম প্রাইজ মানি নেন মুহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।

এ প্রতিযোগতায় দ্বিতীয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হুজায়ফা সিদ্দিকী। হুজায়ফা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে দুই লাখ দিরহাম। হুজায়ফা সিদ্দিকী সুন্দর কণ্ঠের জন্যও পুরস্কার পেয়েছে। তৃতীয় পুরস্কারটি যৌথভাবে পেয়েছে গাম্বিয়ার মোডুউ জোবে এবং সৌদি আরবের আবদুল আজিজ আল ওবায়দান। তারা দুজনে ১ লাখ ৫০ হাজার দিরহাম পেয়েছে।

কোরআন প্রতিযোগিতায় সেরা দশের অপর বিজয়ীরা হলেন মোহনা আহমেদ (বাহরাইন), মোহাম্মদ আল হাদি আল বশির (লিবিয়া), ওমর আল রাফি (কুয়েত), মোহাম্মদ আবেকা (মৌরিতানিয়া), হাবিমানা মাকিনি (রুয়ান্ডা) ও মোহাম্মদ নাগিব (মিশর)।

 





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়