ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাংলার নবজাগরণের অন্যতম নায়ক

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম নায়ক

হাসান মাহামুদ : তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আধুনিক এক ভারতের। দেশের মানুষকে অতীতমুখী, মধ্যযুগীয় মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের করে এনে এক নতুন যুগের জীবন দর্শনের আলো দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য।

মানুষকে ভালবেসে, বদ্ধ এই সমাজের মধ্যে আলোড়ন তুলে যিনি চেয়েছিলেন সমাজ ব্যবস্থার ক্ষতিকারক নানা দিক বদলে ফেলতে, তিনি রাজা রামমোহন রায়। সমাজে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও কুসংস্কারে কুঠারাঘাত করে যিনি হয়ে উঠেছিলেন ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম এক নায়ক।

রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ সালে আজকের দিনে (২২ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হুগলির রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে সমাজ, শিক্ষা সংস্কারক এবং ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি সংস্কৃত, আরবী, ফারসী, ইংরেজি ভাষায় পান্ডিত্য লাভ করেন। হিব্রু, গ্রিক, সিরীয় প্রভৃতি ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করেন। ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তার বিপ্লবী চিন্তার ফসল হিন্দুধর্ম সংস্কার আন্দোলন। তিনি প্রতিমা পূজা বর্জন করেন এবং বিশ্বাস করতেন এক সর্বজনীন ঈশ্বরপূজায়।

কলকাতায় বসবাস শুরু করার পর রামমোহন রায় ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন এবং বেদ ও উপনিষদ বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার শুরু করেন। তিনি ছিলেন একশ্বরবাদে বিশ্বাসী। হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামি ও অজ্ঞানতা দূর করার জন্য তিনি ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ‘আত্মীয় সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই পরে ব্রাহ্মসভা বা ব্রাহ্মসমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

ব্রাহ্মসমাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, রক্ষণশীল আদি সমাজ। এরা পরিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মীয় পুস্তক বিশেষ করে উপনিষদ-এর উপর নির্ভরশীল। দ্বিতীয়ত, নববিধান সমাজ। এরা হিন্দু ধর্মীয় পুস্তকের বাইরে বৌদ্ধ, খৃষ্টান বা ইসলাম ধর্ম থেকে ধার করতে বলে। তৃতীয়ত, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ- যারা জাতপ্রথাকে অস্বীকার করে, ভিন্ন জাতের বিবাহকে মানে ও অন্যান্য ধর্মের সাথে নিজেদের নারীদের ব্রাহ্মরীতি অনুযায়ী বিবাহতেও এদের আপত্তি নেই। এই ব্রাহ্মসমাজ মূলত একেশ্বরবাদী ধারণা থেকে উদ্ভুত।

ব্রাহ্মসমাজের প্রধান ফোকাস হলো: ১. একেশ্বরবাদ, ২. জাতপাত দূরীকরণ, ৩. যৌতুক প্রথার বিলোপ, ৪. সতীদাহ প্রথার বিলোপ, ৫. জ্ঞানের বিস্তার।

মূলতঃ রাজা রামমোহন রায়ের ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের পরিণতিই হলো ব্রাহ্মসমাজ। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন হিন্দু সমাজের কুসংস্কার কৌলীণ্য প্রথা, কন্যা বিক্রয়, জাতিভেদ প্রভৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। সেকালে পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়েদের কোন অধিকার ছিল না। রাম মোহনই প্রথম সংগ্রাম শুরু করেন এই অধিকার আদায়ের জন্য।

তিনি ‘সতীদাহ’-এর মতো অমানবিক ও নির্মম সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হন। স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকেও পুড়িয়ে দেয়ার মতো নির্মম এবং বর্বর কাজ যে কোন ধর্মের বিধান হতে পারে না সে ব্যাপারে তিনি প্রচার চালাতে শুরু করেন। তার আপ্রাণ চেষ্টাতেই তৎকালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট রাম মোহন রায়ের কথা মেনে ‘সতীদাহ প্রথা’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা অনুমোদন করেন যা ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশেষ আইনের মাধ্যমে রদ করতে সরকারকে প্রভাবিত করে। তাইতো গোঁড়ামি আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী প্রতিটি বাঙালির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন রাজা রাম মোহন রায়।

রামমোহন রায় স্বীয় ধর্মমত ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য ১৮২১ সালে সংবাদ কৌমুদী নামে একটি বাংলা সংবাদপত্রও প্রকাশ করতেন। সংবাদ মাধ্যমকে উন্নত করতে রামমোহন মোট তিনটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। দ্বিভাষিক ‘ব্রাহ্মনিক্যাল ম্যাগাজিন ব্রাহ্মণ সেবদি’, বাংলায় ‘সংবাদ কৌমুদি’, ও ফরাসি ভাষায় ‘মীরাৎ-উল-আকবর’। রামমোহন রায়কে বাংলা গদ্যের জনকও বলা হয়। প্রায় ৩০টি বাংলা গ্রন্থের তিনি রচয়িতা। তাঁর রচিত ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’, ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ উল্লেখযোগ্য।

লেখক: সাংবাদিক।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৭/হাসান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়