ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাগদা ও গলদা চিংড়িতে মড়ক, দিশেহারা চাষি

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাগদা ও গলদা চিংড়িতে মড়ক, দিশেহারা চাষি

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে অজ্ঞাত রোগে সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে।

এতে চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এভাবে চিংড়ি মরতে থাকলে চাষিরা ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

গত দুই সপ্তাহে জেলার কয়েক হাজার ঘেরে হঠাৎ করে চিংড়ি মরতে শুরু হয়।প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। মৌসুমের শুরুতেই অধিকাংশ উপজেলার ঘেরে চিংড়িতে মড়ক লেগেছে বলে চাষি ও জেলা চিংড়ি চাষি সমিতি দাবি করেছে।

জেলার অধিকাংশ ঘেরের চিংড়িতে মড়ক দেখা দিলেও চাষিদের তা প্রতিকারে কোনো পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেনি সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগ, এমনটাই অভিযোগ চাষিদের।

তবে কি রোগে ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না মৎস্য বিভাগও। তারা আক্রান্ত বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ করে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছেন।

ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘের প্রস্তুত করে চাষিরা বাগদার পোনা ছাড়তে শুরু করেন। অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়ি ইতিমধ্যে ৬৬ গ্রেডের হয়ে গেছে। এই চিংড়ি জ্যৈষ্ঠ মাসে চাষিরা ধরে বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

মৌসুমের শুরুতে চিংড়িতে মড়ক দেখা দেওয়ায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, চলতি বছরে লাভ তো দূরের কথা অধিকাংশ চাষিকে ঋণগ্রস্ত হতে হবে।

এই বিপর্যয় কাটাতে চাষিদের মাছ চাষে রাখতে সরকারকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে চিংড়ি চাষি সমিতি।

শনিবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া, ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের খোন্তাকাটা ও শশীখালী বিলের অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। কোনো কোনো চাষি তার ঘেরের পানিতে নেমে মরা চিংড়ি তুলে উপরে ফেলে দিচ্ছেন। আবার অনেকে হতাশ হয়ে ঘেরে নামছেন না। মরে যাওয়া চিংড়িতে লাল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলার অধিকাংশ উপজেলায় মাছের ঘেরেও একই অবস্থা।

 


নতুন করে কৃষকরা আবার মাছ ছাড়বেন সেই টাকা তাদের কাছে নেই। মাছ মরে যাওয়ার কারণে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলা, রামপাল, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এবার মোড়ক লাগার বিষয়ে কোনো ঘের মালিক কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এতে হাজার হাজার চাষি দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়বেন। জেলার অধিকাংশ চাষিরা চড়া সুদ ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করে থাকে। মৌসুমের শুরুতে এমন বিপর্যয় চাষিকে সর্বস্বান্ত করবে। তাই এইসব চাষিদের তালিকা তৈরি করে সরকারকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচএম রাকিবুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য জায়গার মতো বাগেরহাটেও চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। আমরা কয়েকটি ঘের পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিস্তারিত বলা যাবে।

চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) জিয়া হায়দার বলেন, মৌসুমের শুরুতে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত অনেক কম। অনাবৃষ্টি ও ঘেরগুলোতে যে পরিমাণ পানি থাকার দরকার তা নেই। ফলে প্রচণ্ড তাপে পানি গরম হয়ে অক্সিজেন কমে গেছে। অনাবৃষ্টির কারণে অস্বাভাবিকহারে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাই বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। এতে চাষিরা আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়ছেন। তারপরও আমরা মরে যাওয়া চিংড়ি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।

হিসাব অনুযায়ী এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৭০ হাজার ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ করা হয়েছে। জেলায় বাগদা চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন।

 

 

রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/২৪ এপ্রিল ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়