বাগেরহাটে মুক্তিযোদ্ধাসহ দুজনকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা
বাগেরহাট সংবাদদাতা : বাগেরহাটে ভোররাতে জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে মল্লিক আবু বক্কর সিদ্দিক (৬৭) নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় সাহায্যে এগিয়ে আসা এক প্রতিবেশিকেও দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে আহত করেছে।
আজ রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে শহরের খারদ্বার এলাকার মল্লিক আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা আবু মল্লিকের অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হামলায় ব্যবহৃত একটি ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করেছেন। তবে হামলার ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেননি পুলিশ।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা মল্লিক আবু বক্কর সিদ্দিকের উপর হামলা করে থাকতে পারে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
গুরুতর আহত মুক্তিযোদ্ধা মল্লিক আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে আবু মল্লিক (৬৭) আওয়ামী লীগের কর্মী। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের পিসি ডেমা গ্রামে। সাহায্যে এগিয়ে আসা আহত প্রতিবেশির নাম সোহরাব ফকির (৪৮)।
আহত মুক্তিযোদ্ধা আবু মল্লিকের স্ত্রী শাহিদা মল্লিক বলেন, ‘রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে ৭/৮ জনের একটি মুখোশধারী দল ঘরের পেছনের জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে। জানালার গ্রিল ভাঙ্গার শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় ওই মুখোশধারীরা তাদের কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার স্বামীকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরের মেঝেতে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে আমার ডাকচিৎকারে সোহরাব ফকির নামে এক প্রতিবেশি ছুটে আসলে তাকেও আমার বাড়ির সামনে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে চলে যায়। তবে কারা কি কারণে আমার স্বামীর উপর এমন হামলা করল, বুঝতে পারছিনা।’
এনামুল কবির ও হুমায়ুন কবির নামে দুই প্রতিবেশি জানান, মুক্তিযোদ্ধা আবু মল্লিক গ্রাম থেকে এসে এখানে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন আর ছেলে চাকরি নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করেন। স্থানীয়দের সাথে তার কোন বিরোধ আছে বলে শুনিনি। ভোরে তাদের আর্তচিৎকারে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমরা তার বাড়িতে এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই হামলাকারীরা আরেক প্রতিবেশি সোহরাব ফকিরকে আবু মল্লিকের বাড়ির সামনে পেয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে চলে যায়।
বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শাহীনুল আলম ছানা বলেন, ‘মল্লিক আবু বক্কর সিদ্দিক তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামীলীগেরও কর্মী।’ তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান ।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মল্লিক আবু বক্কর সিদ্দিকের গ্রামের বাড়ির এলাকায় কিছু লোকজনের সাথে তার বিরোধ রয়েছে। সেই পূর্ব শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা মল্লিকের উপর হামলা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হামলায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ ইমরান মোহম্মদ বলেন, ‘আহত মুক্তিযোদ্ধার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক কোপ রয়েছে। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যজনকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/ ১২ নভেম্বর ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন