ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বার্গার থেকে পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্ট

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বার্গার থেকে পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্ট

আবরার হোসেন

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : লন্ডনের কুইন্সম্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। জীবনের প্রয়োজনে টাকা আয় করার জন্য চাকরি খোঁজেননি। সুযোগ থাকলেও বড় শিল্প গ্রুপের হাল ধরেননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেই কিছু করার। হতে চেয়েছেন ব্যতিক্রমি উদাহরণ।

কর্মজীবন অনেকটা শুরু করেছেন ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে বার্গার বিক্রির মাধ্যমে। এখন তিনি চট্টগ্রামে প্রথম বিলাসবহুল পাঁচ তারকা মানের বুটিক রেস্টুরেন্ট রিগালোর মালিক। তিনি চট্টগ্রামের তারুণ্যের আইকন আবরার হোসাইন।

আবরার হোসাইন এবং ভিন্নরকম স্বপ্ন: আবরার হোসেন জন্মেছিলেন অনেকটা সোনার চামচ মুখে নিয়েই। পারিবারিক উত্তরাধিকারে বড় শিল্প গ্রুপের মালিক আবারের পরিবার। তাদের একাধিক বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার কর্মচারী কর্মকর্তা কাজ করেন।

রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে আবরার হোসাইন জানান, খুব ছোটবেলা থেকেই নিজেই কিছু করার স্বপ্ন ও চেষ্টা দুটোই একই সঙ্গে কাজ করেছে। আমি লন্ডনে পড়ালেখা করি। লন্ডনের কুইন্সম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসি ২০১৩ সালে। দেশে ফিরে পারিবারিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার কথা থাকলেও আমি নিজে কিছু করার চেষ্টা ও স্বপ্ন থেকে পিছু হটিনি।

দেশে ফিরে শুধুমাত্র কাজ শেখার প্রয়োজনে ঢাকায় গ্রামীণফোনে ৭ মাস ইন্টার্ন কর্মী হিসেবে কাজ করি। এর পর ফিরে আসি চট্টগ্রামে। নিজ জন্মস্থানে ফিরেই নিজেই এককভাবে ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। লন্ডনে পড়ালেখা করতে করতেই রেস্টুরেন্ট বা ভালো ফিউশন খাবারের বিজনেসটি আমার মাথার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল।

নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত সেই চিন্তা থেকেই নিজের সঞ্চিত টাকা দিয়েই ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে বার্গার বিক্রি শুরু করি। এই শুরুটা ২০১৪ সালের শেষের দিকে। আবরারের ভ্যানগাড়িতে বার্গার বিক্রির এই ভ্রাম্যমাণ দোকানের নাম দেন ‘বুম টাউন’।

আবরার জানান, আমি প্রতিদিন বাসা থেকে ভ্যান টেনে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সামনে আসতাম। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিল্পকলার সামনে নিজেই বার্গার তৈরি করে বিক্রি করতাম। অল্পদিনের মধ্যেই তার বুম টাউন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাত্র ৮ মাস ব্যবসা করেই রীতিমত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যান আবরার হোসেন।

আবরার হোসেনের বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত রিগালো রেস্টুরেন্ট

 

ফুটপাতের বুম টাউন থেকে বুটিক রেস্টুরেন্ট রিগালো : আবরার হোসাইন বলেন, চট্টগ্রামে বড় কিছু, স্বপ্নের মতো আধুনিক ভিন্নধর্মী কিছু করার ইচ্ছেটা আমার রক্তের মধ্যেই ঢুকে গিয়েছিল। আমি আমার স্বপ্ন থেকে পিছু হটিনি কখনো। বার্গার বিক্রি করতে করতেই শিল্পকলার কাছেই নগরীর দামপাড়া ওয়াসা মোড় এলাকায় রেস্টুরেন্ট করার মতো একটি জায়গা পেয়ে যাই। কিন্তু সবার মতো গতানুতিক খাবারের রেস্টুরেন্ট করার কথা আমার মাথায় আসেনি। আমি চিন্তা করেছি চট্টগ্রামবাসীকে নতুন কিছু দেখাতে। চট্টগ্রামে বসে আন্তর্জাতিক মানের খাবারের স্বাদ দিতে।

সেই স্বপ্ন স্বাদ থেকেই ২০১৫ সালের শেষের দিকে ওয়াসার মোড়ে প্রথম অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করি। কয়েকজন বন্ধুর সহায়তা নিয়ে ‘রিগালো’ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে।

আবরার হোসেন জানান, রিগালো একটি স্পেনিশ শব্দ। যার অর্থ উপহার। আমি চট্টগ্রামবাসীকে নতুন কিছু উপহার দিতেই রিগালো প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৬ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের প্রথম পাঁচ তারকা মানে ম্যাক্সিকান, আমেরিকান, চাইনিজ ফিউশন ফুডের ব্যতিক্রমী আয়োজন নিয়ে রিগালো আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এর আগে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রিগালোর নিয়োগকৃত কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

রিগালো এবং আবরারের স্বপ্নযাত্রা: রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপকালে আবরার হোসেন জানান, বার্গার বিক্রি থেকে শুরু করে আমি রিগালো প্রতিষ্ঠা করলেও কখনো মালিক বা কর্তা সেজে বসে থাকি না। এই রেস্টুরেন্টের টেবিল পরিষ্কার থেকে শুরু করে কিচেনে শেফকে সহায়তার কাজে অংশ নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমি নিজেই অন্যান্য কর্মীদের সাথে রেস্টুরেন্টে কাজ করি।

আবরার জানান, এই রেস্টুরেন্টে পেশাদার রেস্টুরেন্টকর্মীর পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভিয়েতনামের কর্মী কাজ করেন। সব কর্মীই তাদের নির্ধারিত কাজের পাশাপাশি ক্লিনিংয়ের কাজও করেন। আমি নিজেও রেস্টুরেন্ট মব করে পরিষ্কার করি। এই রেস্টুরেন্টে সব কর্মীকেই সব কাজ করতে হয়।

এক নজরে আবরার হোসাইন : আবরার হোসেন। বাবা মোহাম্মদ নুরুল আলম চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত এমইবি টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মা নেজাদ সুলতানা গৃহবধূ। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আবরার হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে এখনো অবিবাহিত। স্বপ্ন দেখেন আবরার। স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুদ্ধ করতে ভালোবাসেন। হতাশায় ডুবেন না কখনো। যে কোনো বাধা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজে নেন।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৮ ডিসেম্বর ২০১৬/রেজাউল করিম/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়