ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ব্যর্থ পণ্য (দ্বিতীয় পর্ব)

সার্জিন শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ব্যর্থ পণ্য (দ্বিতীয় পর্ব)

সার্জিন শরীফ : নতুন পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সবসময়ই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। পণ্য বাজারজাতকরণের পর তা ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। এ কারণেই উৎপাদনের আগে এবং পরে ভোক্তাদের মন জয় করার জন্য নিত্য নতুন পণ্যের পাশাপাশি বহুজাতিক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বাজারজাতকরণ পদ্ধতিরও আশ্রয় নিয়ে থাকে।

শত জল্পনা-কল্পনা আর ব্যবসায়িক কৌশলের পরেও অনেক সময়ই বড় বড় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুণতে হয় লোকসান। কখনো কখনো লোকসান এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে উৎপাদিত পণ্যটি ভোক্তা সাধারণের মন জয় করতে না পেরে শেষ প্রতিযোগিতার বাজার থেকে হারিয়ে যায় চিরতরে।

পেপসি থেকে নেটফ্লিক্স, মাইক্রোসফট থেকে ম্যাকডোনাল্ড’স এর মতো নামজাদা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেও তাদের কোনো কোনো পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় শিকার হয়েছে এমন বিড়ম্বনার।

বিশ্ব বাজারে সুবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সময়ে উৎপাদিত এমন কিছু ‘দুর্ভাগা’ পণ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন। যেগুলো ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়া তো দূরে থাক বাজারে আসার পরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লোকসানী পণ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছে। এ নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ৯টি পণ্যের তথ্য প্রকাশিত করা হয়েছিল। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে আরো ৮টি পণ্য।


১৯৯৫ - নিনটেনডোর ভার্চুয়াল বয় :
সবেমাত্র অঙ্কুরিত হতে থাকা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি’র তত্ত্বকে বাস্তবে রূপদানের এক অনন্য প্রয়াস ছিল নিনটেনডো কোম্পানির ‘ভার্চুয়াল বয়’। এটা ছিল একটি গেমিং ডিভাইস। কিন্তু খারাপ রেজ্যুলেশন, কম ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রাফিক্স আর বাজে গেম প্লে এটিকে নিনটেনডোর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লস প্রজেক্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে।


১৯৯৬ - ম্যাকডোনাল্ড এর আর্ক ডিলাক্স :
বিখ্যাত বার্গার চেইন শপ ব্র্যান্ড ‘ম্যাকডোনাল্ড’ শহরতলীর মানুষের কথা মাথায় রেখে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন পণ্য ‘আর্ক ডিলাক্স’ এর বাজারজাতকরণ শুরু করে ১৯৯৬ সালে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি ভোক্তাদের তৃপ্ত করতে ব্যর্থ হয়ে হারিয়ে যায় বাজার থেকে।


১৯৯৭ - অরবিটজ সোডা :
দেখতে লাভা বাতির মতো হলেও এটি আসলে এক ধরনের কোমল পানীয়। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এটি বানিয়েছিল মূলত তরুণ-কিশোরদের কথা মাথায় রেখে। কিন্তু মানুষ এটির স্বাদকে ‘কাশির সিরাপ’ এর মতো আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখান করে। আর তাই ১৯৯৭ সালে বাজারে আসার পর এক বছরের মধ্যেই এর কথা বেমালুম ভুলে যায় সবাই।


১৯৯৮ - ফ্রিটো-লে ওয়াও! চিপস :
১৯৯৮ সালে ফ্রিটো-লে কোম্পানি ‘ফ্যাট ফ্রি’ স্লোগানের মাধ্যমে বাজারে আনে ‘ওয়াও!’ চিপস। পণ্যটির প্রচারণার সময়ে কোম্পানিটি জানায় এতে ‘অলেস্ট্রা’ নামক একটি যৌগ আছে যা একই সঙ্গে ফ্যাট ফ্রি এবং সুস্বাদু। কিন্তু আসলে অলেস্ট্রার প্রভাবে মানুষ মুটিয়ে যায় এবং এটি পরিপাক করাও মানবদেহের জন্য বেশ কঠিন। ফলে ‘ওয়াও!’ চিপসের বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় অচিরেই।


১৯৯৯ - কসমোপলিটন ইয়োগার্ট :
বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন প্রকাশনা সংস্থা কসমোপলিটন সেবার ‘ইয়োগার্ট’ বাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ম্যাগাজিন কোম্পানির ব্যানারে ইয়োগার্ট অর্থাৎ দই? না, তা নয়। আসলে নামে ইয়োগার্ট হলেও একটি ম্যাগাজিনই ছিল মাত্র। চটকদার ব্যানারে পাঠকদের সামনে এলেও এই ম্যাগাজিন আশানুরূপ কন্টেন্ট এর অভাবে জনপ্রিয়তা লাভে ব্যর্থ হয়।


২০০৬ - মাইক্রোসফট জুন :
মাইক্রোসফট তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলের আইপডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে বাজারে আনে ‘মাইক্রোসফট জুন’। কিন্তু এটা গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে সমর্থ হয়নি। ভালো ফিচার থাকা সত্ত্বেও এটি আইপডের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি।


২০০৬ - মোবাইল ইএসপিএন :
জনপ্রিয় ক্রীড়া সম্প্রচার চ্যানেল ইএসপিএন ২০০৬ সালে তাদের এক্সক্লুসিভ সার্ভিস দিতে সক্ষম এমন একটি ফোন বাজারে আনে। ইএসপিএন এর বিল্ট-ইন নানা সেবাযুক্ত সানিও কোম্পানির তৈরি করা এই ফোনটির মাত্র একটি মডেল পরীক্ষামূলকভাবে বাজারে এসেছিল। কিন্তু ৪০০ মার্কিন ডলার খরচ করে এই ফোন কিনতে কেউই আগ্রহী ছিলেন না।


২০০৬ - এইচডি-ডিভিডি :
২০০৬ সালের মার্চ মাসে প্রধানত তোশিবার তত্ত্বাবধানে এইচডি-ডিভিডির উৎপাদন শুরু হয়। সবাই ধারণা করেছিলেন এটা ডিভিডি প্লে-ব্যাক এর ক্ষেত্রে নতুন একটি মাইলফলক উন্মোচন করবে। কিন্তু একই বছরে সনির ব্লু-রে ডিভিডি বাজারে এসে বাতিল করে দেয় এইচডি-ডিভিডির রমরমা বাণিজ্য। আর ওই বছরই শেষের দিকে উৎপাদন-বিপণন বন্ধ হয়ে যায় পণ্যটির।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়