ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ব্যর্থ পণ্য (প্রথম পর্ব)

সার্জিন শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে ব্যর্থ পণ্য  (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

সার্জিন শরীফ : নতুন পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সবসময়ই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। পণ্য বাজারজাতকরণের পর তা ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর।

এ কারণেই উৎপাদনের আগে এবং পরে ভোক্তাদের মন জয় করার জন্য নিত্য নতুন পণ্যের পাশাপাশি বহুজাতিক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো বিভিন্ন বাজারজাতকরণ পদ্ধতিরও আশ্রয় নিয়ে থাকে।

শত জল্পনা-কল্পনা আর ব্যবসায়িক কৌশলের পরেও অনেক সময়ই বড় বড় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুনতে হয় লোকসান। কখনো কখনো লোকসান এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে উৎপাদিত পণ্যটি ভোক্তা সাধারণের মন জয় করতে না পেরে শেষ প্রতিযোগিতার বাজার থেকে হারিয়ে যায় চিরতরে।

পেপসি থেকে নেটফ্লিক্স, মাইক্রোসফট থেকে ম্যাকডোনাল্ড’স এর মতো নামজাদা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেও তাদের কোনো কোনো পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় মুখোমুখি হতে হয়েছে এমন বিড়ম্বনার।

বিশ্ব বাজারে সুবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সময়ে উৎপাদিত এমন কিছু ‘দুর্ভাগা’ পণ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন। যেগুলো ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়া তো দূরে থাক বাজারে আসার পরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লোকসানী পণ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছে। এ নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ পর্বে থাকছে ৯টি পণ্য।


* ১৯৫৭ - ফোর্ড এডসেল :
বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ‘ফোর্ড’ ১৯৫৭ সালে নতুন মডেল হিসেবে ‘ফোর্ড এডসেল- ১৯৫৭’ মডেলের গাড়িটি বাজারে আনে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ৪০০ মিলিয়ন ডলার লগ্নি করা ফোর্ডের এই প্রকল্প ক্রেতাদের মন জয়ে ব্যর্থ হয় এবং মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৬০ সালে গাড়িটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। ফোর্ডের বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন এটি ক্রেতাদের চাহিদা এবং বাজেটের সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তাছাড়া গাড়িটির আকারও কিছুটা বেঢপ ছিল।


* ১৯৭৫ – সনি বেটাম্যাক্স :
১৯৭০-এর দশকে বিশ্ববাজার প্রত্যক্ষ করেছিল বিখ্যাত ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী নির্মাতা সনি আর তার প্রতিযোগীদের মধ্যে এক তুমুল প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা ছিল সনি’র মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস বেটাম্যাক্স আর অন্যদের ভিএইচএস মেশিনের মধ্যে। এই যন্ত্র দুটি ছিল প্রায় একই সুবিধাসম্পন্ন। কিন্তু তখন বাজারে ভিএইচএস মেশিন ব্যাপক জনপ্রিয় হতে আরম্ভ করে। কিন্তু সনি তাদের বেটাম্যাক্স উৎপাদন চালু রাখে, যা ছিল তাদের ঐতিহাসিক ভুল। যদিও বেটাম্যাক্স প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল তবুও ভিএইচএস মেশিন তার সহজবোধ্য ফাংশনের জন্য অচিরেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যায়। ফলশ্রুতিতে সনিকে গুনতে হয় বিশাল অঙ্কের লোকসান।


* ১৯৮৫ – নিউ কোক :
‌‌১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে কোকাকোলা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছিল নিকটতম প্রতিদ্বন্দী পেপসি’র কাছে। এর কারণ ছিল পেপসির অভিনব বিজ্ঞাপনী পদ্ধতি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কোকাকোলা কোম্পানি তখন সিদ্ধান্ত নেয় ‘নিউ কোক’ নামে পেপসির কাছাকাছি স্বাদের নতুন পণ্য বাজারজাতকরণের। কিন্তু তারপরই বাঁধল বিপত্তি! নিজেদের সুনামের প্রতি সুবিচার করতে পারল না ‘নিউ কোক’। ১৯৮৫ সালে বাজারজাতকরণের কিছুদিনের মধ্যেই ভোক্তাদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে বাজার থেকে বিদায় নেয় এই কোমল পানীয়টি। আর নিজেদের পুরোনো ফর্মুলায় ফেরত গিয়ে কোকাকোলা কোম্পানি তাদের পণ্যের নতুন নামকরণ করে ‘কোকাকোলা ক্ল্যাসিক’।


* ১৯৮৯, ১৯৯২ -  যথাক্রমে পেপসি এ.এম. এবং পেপসি ক্রিস্টাল :
১৯৮৯ সালে স্বনামধন্য কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পেপসি ‘ব্রেকফাস্ট কোলা ড্রিংকার’ হিসেবে বাজারে ছাড়ে ‘পেপসি এ.এম’। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল- তাদের এই পণ্য বাজারে টিকে ছিল মাত্র এক বছরেরও কম সময়।

১৯৯২ সালে পেপসি গ্রাহকদের নতুনত্বের স্বাদ দেয়ার জন্য পুনরায় চেষ্টা করে। এবার তারা বাজারে আনে বর্ণহীন পানীয় ‘ক্রিস্টাল পেপসি’। কিন্তু বিধিবাম! এবারও ভোক্তাদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয় তারা। ফলশ্রুতিতে যথারীতি এক বছরের মধ্যেই এটিও বিদায় নেয় বাজার থেকে। যদিও ২০১৬ সাল থেকে আবার তারা নতুন করে ক্রিস্টাল পেপসির বাজারজাতকরণ শুরু করেছে কিন্তু এখনও এর স্বাদ খুব একটা ভালো নয়।


* ১৯৮৯ – আরজে রেনল্ডস এর ধোঁয়াবিহীন সিগারেট :
’৮০-র দশকে যখন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হারে ‘ধুমপান বিরোধী’ প্রচারণা অভিযান শুরু হয়েছিল তখন এই প্রচারণাকে কাজে লাগিয়ে আরজে রোনাল্ডস বাজারজাত করে ‘ধোঁয়াবিহীন সিগারেট’। কিন্তু ৩.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা তাদের এই পরিকল্পনা মাত্র চার মাসের মাথায়ই বাজার থেকে যেন ধোঁয়ায় মিলিয়ে যায়।


* ১৯৯০ – কুর্‌স রকি মাউন্টেন স্প্রিং ওয়াটার :
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিয়ার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কুর্‌স রকি মাউন্টেন বিয়ারের পাশাপাশি স্প্রিং ওয়াটার বাজারজাত করতে শুরু করেছিল। কিন্তু তাদের বিয়ারের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী থাকলেও এই পণ্যটি একেবারেই ভোক্তাদের মনজয় করতে পারেনি।


* ১৯৯৩ – অ্যাপল নিউটন :
১৯৯৩ সালের কথা। অ্যাপল কোম্পানির খ্যাতি আর বিস্তৃতি তখন আজকের অবস্থানে ছিল না। তখন তারা ‘অ্যাপল নিউটন’ নামে একটি পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিডিএ) বাজারে আনে। কিন্তু অ্যাপল এর ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে আছে এই ডিভাইসটি। ৭০০ ডলার থেকে শুরু হওয়া দামের এই ডিভাইসটি যেমন ছিল বেঢপ আকৃতির তেমন এর হাতের লেখা চিহ্নিত করার ক্ষমতাও ছিল দুর্বল। পরবর্তীতে আইপ্যাড বাজারে এনে অ্যাপল এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।


* ১৯৯৫ – মাইক্রোসফট বব :
বিশ্বের এক নম্বর সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের নতুন ইন্টারফেস হিসেবে ১৯৯৫ সালে বাজারে আনে ‘মাইক্রোসফট বব’-কে। কিন্তু ‘বব’ ছিল তখনকার কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এর তুলনায় বেশ ভারী একটি সফটওয়্যার। ফলে ‘ববের মৃত্যু হয়েছে’ ঘোষণা দিয়ে বিল গেটস এটিকে বাজার থেকে সরিয়ে নেন।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সার্জিন/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়