ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বিচার শেষ পর্যায়ে, সেপ্টেম্বরে রায়ের প্রত্যাশা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২১ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিচার শেষ পর্যায়ে, সেপ্টেম্বরে রায়ের প্রত্যাশা

মামুন খান :  ২০০৪ সালের আজকের দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আহত হন অনেকেই।

এ ঘটনায় করা মামলার ১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ঘটনার দুই মামলার বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। রায় ঘোষণা হতে পারে আগামী মাসেই। বর্তমানে মামলা দুইটি রায়ের পূর্বের ধাপ যুক্তিতর্কে চলমান এবং যা সর্বশেষ আসামির পক্ষে চলমান। ফলে সেপ্টেম্বরেই রায় পাওয়ার প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের।

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর অস্থায়ী এজলাসে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলা দুইটির বিচারকাজ পরিচালনা করছেন।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলা দুইটিতে চলতি মাসের ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য আছে। বর্তমানে আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলমান। এর আগে এ আসামির পক্ষে ৬টি কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে। সর্বশেষ আসামি হিসেবে বাবরের পক্ষে যুক্তি যুক্তি উপস্থাপিত হচ্ছে। যুক্তি উপস্থাপন শেষে হলেই রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবে ট্রাইব্যুনাল।

এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌশুলী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, আমরা ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে মামলা দুইটিতে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করি। দুই মাস ৮ দিনে মোট ২৫ কার্যদিবসে আমাদের যুক্তি উপস্থাপন চলতি বছর ১ জানুয়ারি শেষ হয়। এরপর আসামি পক্ষ প্রায় ৮ মাসে ৮৪ কার্যদিবসে যুক্তি উপস্থাপন করে এখনো শেষ করতে পারেনি। রাষ্ট্রপক্ষ মামলা দুইটিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। তাই বিচারে আসামিপক্ষকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। যাতে বিচার নিয়ে তাদের প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকে।

তিনি বলেন, আসামিপক্ষ বিচার বিলম্বের জন্য বিভিন্ন আদেশের বিরুদ্ধে কয়েক দফা উচ্চ আদালতে যওয়ায় ২৯২ কার্যদিবস সময় ব্যয় হয়েছে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণে সময়ক্ষেপণের জন্য সাক্ষীদের অপ্রাসঙ্গিক জেরা করেও অনেক সময় নষ্ট করেছে। আসামিপক্ষ এভাবে সময় নষ্ট না করলে আরো অনেক আগেই বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়া সম্ভব ছিল।

রায় কবে হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রসিকিউটর বলেন, নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, তবে সেপ্টেম্বরই আমরা রায় পাওয়ার আশা করছি।

অন্যদিকে এ সম্পর্কে আসামি আব্দুস সালাম পিন্টুর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম তারা মিয়া বলেন, মামলাটি অনেক বড় মামলা। মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যেখানে ৫২ জন আসামি। রাষ্ট্রপক্ষের মাত্র দুইজন যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। আর আসামিপক্ষে অনেক আইনজীবী রয়েছে। তাই আসামি পক্ষের সময় তো একটুও বেশি লাগবেই।

আসামি বাবরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যেমন ন্যায়বিচার চায়, আমরাও চাই। আমাদের আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি দ্রুত শেষ হবে।

রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১১ সরকারি  কর্মকর্তার ৭ বছর কারাদণ্ড দাবি করেন। এরপর শুরু হয় আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন।

মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। তবে তাদের মধ্যে বিচারকালীন আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের এবং হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলা দুটিতে মোট আসামি ৪৯ জন।

মামলার পলাতক ৪ আসামি সবেক ডিসি পূর্ব মো. ওবায়দুর রহমান, সাবেক ডিসি দক্ষিণ খান সাইদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার ও মেজর (অব.) এটিএম আমিনদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের ধারা না থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নেই। তাই তাদের পক্ষে যুক্তিতর্কসহ কোনো কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না।

মামলার অপর আসামিরা হলেন-বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি দলীয় ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হানিফ এন্টার প্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আব্দুস সালাম, আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শাওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাও. তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুনছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি পরবর্তীতে আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী ও খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, তদন্ত ভিন্নখাতে নেওয়া ৩ তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আব্দুর রশীদ (যুক্তি চলমান), বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৮/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়