ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিনামূল্যে পাঠ্যবই : পুনঃদরপত্রে আর্থিক ক্ষতি ও বিলম্বের শঙ্কা

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১৬ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিনামূল্যে পাঠ্যবই : পুনঃদরপত্রে আর্থিক ক্ষতি ও বিলম্বের শঙ্কা

আবু বকর ইয়ামিন : অবশেষে চূড়ান্তভাবে প্রাথমিকের বইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তিন মাস আগে প্রথম দরপত্রে কোনো আন্তর্জাতিক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান তালিকায় না থাকলেও পুনঃদরপত্রে প্রাথমিকের বই মুদ্রণে ১০টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে।

এছাড়া, প্রাথমিকে দেশীয় ৮৮টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ও প্রাক-প্রাথমিকে ছয়টি দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছে এনসিটিবি। 

আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের ১১ কোটি বইয়ের ৯৮ লটের কাজের মধ্যে ভারতীয় দুটি কোম্পানি পেয়েছে ১০টি লটের কাজ। কৃষ্ণা ট্রেডার্স ও স্বপ্না প্রিন্টার্স নামের ওই দুটি প্রতিষ্ঠান মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার বই ছাপার কাজ পেয়েছে।

পুনঃদরপত্রে কাজ পাওয়া মুদ্রাকরদের গত সোমবার থেকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) দেওয়া শুরু করেছে এনসিটিবি। এসব জটিলতার পাশাপাশি রয়েছে সংসদ নির্বাচন। ফলে যথাসময়ে বই পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে প্রথম দরপত্রে এনসিটিবি এ ওয়ার্ক অর্ডার না দিয়ে তিন মাস পর পুনঃদরপত্রের কারণে সরকারের ব্যয় শত কোটির উপরে বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সদ্য প্রাক্তন সভাপতি তোফায়েল খান।

তিনি বলেন, দাখিল, ইবতেদায়ি, ভোকেশনাল, সেকেন্ডারির বই মুদ্রণে দুই স্তরে কাজ হয়ে থাকে। এ কাজে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পায়নি। ১৩২টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পেয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু হয়েছে।

তিন মাস আগের চেয়ে বর্তমানে কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হওয়ায় সরকারের ব্যয় বাড়বে প্রায় ১১১ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সময়ও নষ্ট হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার দেওয়ার বিষয়ে একটি শর্ত ছিল। কিন্তু এ বছর সরকার সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করছে। সুতরাং এখন আর আন্তর্জাতিক কোনো মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার দেওয়ার শর্ত নেই। প্রথম টেন্ডারে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান না থাকলেও রহস্যজনকভাবে সেটি বাতিল করা হয়। তিন মাস পর পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে ভারতের ১০টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পায়। আর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে আলাদা অনেক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ৪০ শতাংশ লাভ দিতে হয়। সরকার এক্ষেত্রে বাধ্য না থাকলেও এক্ষেত্রে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার পাইয়ে দিতে কাজ করেছে বলে সূত্র জানায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনওএ দেওয়ার পর মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে নিয়ম অনুযায়ী আরো ২৮ দিন সময় দিতে হবে। তারপর মুদ্রণকারী বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর পর ৮৪ দিন সময় পাবে। এরপর আরো এক মাস সময় পাবে জরিমানা দিয়ে বই পৌঁছানোর। সেই হিসেবে উপজেলা পর্যন্ত বই পৌঁছাতেই ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। অথচ নির্বাচনী বছরে অক্টোবরের মধ্যে বই উপজেলায় পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের বইয়ের প্রতি ফর্মা ২ টাকা ২৫ পয়সা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে প্রথম দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। কিন্তু মুদ্রণকারীরা দাম দেয় ২ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ৯৩ পয়সা পর্যন্ত। এতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ দাম বেড়ে যাওয়ায় পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। পুনঃদরপত্রেও একই দাম দেয় দরদাতারা। এখন প্রাক্কলিত দর থেকে ১১১ কোটি টাকা বেশি দিয়েই এনওএ দেওয়া হয় মুদ্রণকারীদের। কিন্তু এরই মধ্যে সময় নষ্ট হয় তিন মাস।

তোফায়েল খান বলেন, শ্রমিকরা ঈদের ছুটি কাটিয়ে আসতে আসতে এ মাস শেষ হয়ে যাবে। তারা যদি দেরি করে তাহলে কাজ শেষ করা আরো পিছিয়ে যাবে। এছাড়া, এনওএ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে সব কাজে আরো ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সেটা হলে আমাদের পক্ষে কাজ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়বে। এটা সমাধান না হওয়া পর্যন্তও মুদ্রণকারীরা কাজ শুরু করবে না। ফলে সব মিলিয়ে জটিলতা কাটছে না।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির বর্তমান সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, আমরা সবসময় আন্তর্জাতিক টেন্ডারের বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, আমাদের দেশে বিশ্বমানের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে কাজ করালে সরকারের লাভ, আমাদেরও লাভ। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিদেশি টেন্ডারের কাজে অনেক বিলম্ব হয়্ এবং সরকারেরও অনেক বেশি ব্যয় হয়। আমরা বরাবরই সময়মতো বই দিতে পারি, তবু কেন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হলো, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, ‘প্রথম টেন্ডারে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও ছিল না। অথচ তিন মাস পর রিটেন্ডারে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হলো। তাহলে কি আমরা বলব না, বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিতে এ বিলম্ব করা হয়েছে।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বিদেশী প্রতিষ্ঠান এর আগেও কাজ পেয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তারা এবারও কাজ পেয়েছে। পুনঃদরপত্রের পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, এবার নানা জটিলতায় কাজ শুরু করতে দেরি হলেও গতবারের চেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। তাই আশা করছি, আগামী অক্টোবরের মধ্যেই আমরা ৯০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব। এতে বিলম্বের কোনো আশঙ্কা নেই।

৫ শতাংশ ভ্যাটের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সরকার নির্ধারণ করেছে। এটাতে আমাদের কোনো হাত নেই।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৮/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়