ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিপ্লবী চে গুয়েভারা

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ৯ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিপ্লবী চে গুয়েভারা

রুহুল আমিন : ‘বিপ্লবী হতে চাও? বিপ্লবের প্রথম শর্ত, শিক্ষিত হও’ কিংবা ‘যখনি তুমি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠো, তখনি তুমি আমার একজন সহ-যোদ্ধা’। আর্জেন্টাইন দুঃসাহসী তরুণ চিকিৎসক আর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্না, আমরা যাকে চে গুয়েভারা নামে চিনি তিনি কীভাবে কিউবা বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হলেন তা এখন আর কারো কাছে অজানা নয়।

পৃথিবী সমান স্বপ্ন নিয়ে রাষ্ট্রের বড় পদ থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে বিশ্বব্যাপী বিপ্লবী ঝাণ্ডা উঁচানো চে এক রোমান্টিক বিপ্লবীর প্রতীক হয়ে অম্লান হয়ে রয়ে গেলেন কালের ইতিহাসে। ১৯৬৭ সালের আজকের এই দিনে (৯ অক্টোবর) বলিভিয়ায় তাকে আহত অবস্থায় আটক করে হত্যা করা হয়। চে বলেছিলেন ‘আমি জানি তুমি আমাকে হত্যা করতে এসেছো, গুলি করো কাপুরুষ, তুমি শুধু একজন মানুষকেই হত্যা করবে (তার বিপ্লবী চেতনাকে নয়)।’

বিপ্লবী চে গুয়েভারা ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় ডাক্তার চে কিউবান কিংবদন্তী বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর দলে প্রথমে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। যদিও চে নিজের আজীবনের সঙ্গী ছিল হাঁপানি। হাঁপানির কারণে প্রথম দুই বছর স্কুলে যেতে পারেননি চে গুয়েভারা। তাই বাড়িতেই পড়াশোনার হাতেখড়ি।

ফিদেল কাস্ত্রোর দলে যোগ দিয়ে সারা বিশ্বে রোমান্টিক বিপ্লবীদের একজনে পরিণত হন চে। লাতিন আমেরিকায় শুরু হওয়া সেই বিপ্লবের ঝাণ্ডার ঝাঁঝ সারা বিশ্বের মানুষকেই ঝাঁকুনি দিয়েছিল। আজ অবধি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা মানুষের কাছে চে ‍গুয়েভারা একটি স্পর্ধার নাম। যারা বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন তাদের কাছে বিপ্লবের সমার্থক যেন চে ‍গুয়েভারা। 

১৯৫৯ সালে ফিদেল কিউবার ক্ষমতা দখল করেন। এই সময় চে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন নিবন্ধ ও বই রচনা করেন।কিউবার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হন চে গুয়েভারা। তিনি ভাবেন ওই রণনীতি ছড়িয়ে দিতে পারলে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে সমগ্র লাতিন আমেরিকায়। এই সময় তিনি বলিভিয়া ও আর্জেন্টিনাকে বেছে নেন।কিন্তু বলিভিয়াতে থাকার সময় তিনি সি আই এ মদদপুষ্ট বলিভিয়ান বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট রেনে বেরিয়েন্তোস চে'কে হত্যা করার আদেশ দিলেন। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর, বলিভিয়ার লা হিগুয়েরাত শহরে বলিভিয়ার সেনাবাহিনী তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। নিরস্ত্র চে'কে গুলি করে হত্যা করতে রাজি হচ্ছিল না সাধারণ সৈনিকরা। অবশেষে হত্যা করার জন্য বেছে নেওয়া হলো মদ্যপ সৈনিক মারিও তেরানকে। কাঁপা কাঁপা হাতে চের পায়ে, বুকে নয়টি গুলি করে বেসামাল সৈনিক শেষ করে দিল চিরচেনা এক বিপ্লবীকে।

মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চে আরো শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ততটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে দেওয়া হয়নি। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায়, কর্পোরেট দাসত্বের এই স্বর্ণ সময়ে চে’কেও পুঁজিপতিরা তাদের পণ্যতে পরিণত করে। বিপ্লবী চে’র চেয়ে মানুষ এখন বিভিন্ন পণ্যে ছাঁটানো চে’কে চেনে। জানে না তার সংগ্রামের কাহিনী। যারা এখনো বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন কেবল তাদের কাছেই চে’র আবেদন পুরো মাত্রায় আছে। সমকালীন বাস্তবতায় বিপ্লবী চে, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা যে কারো কাছে অত্যাবশ্যকীয় অনুপ্রেরণা। সবার জন্য সমান একটি পৃথিবীর ও সাম্যবাদের স্বপ্ন দেখা মানুষের সবচেয়ে বড় অবলম্বন চে গুয়েভারা।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৭/রুহুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়