ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিবর্ণ ব্যাটিং-বোলিংয়ে সিরিজ হারল বাংলাদেশ

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিবর্ণ ব্যাটিং-বোলিংয়ে সিরিজ হারল বাংলাদেশ

আবু হোসেন পরাগ : এ যেন নেপিয়ারের পুনরাবৃত্তি হলো ক্রাইস্টচার্চে! আগে ব্যাটিংয়ে নেমে আবারো নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিংয়ের সামনে ধুঁকল বাংলাদেশের ব্যাটিং। সতীর্থদের ব্যর্থতায় আরেকবার ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন মোহাম্মদ মিথুন। সংগ্রহটা পেরোলো দুইশ। বাংলাদেশের বোলারদের নির্বিষ বোলিংয়ে মার্টিন গাপটিল করলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ড পেল আরেকটি বড় জয়।

নেপিয়ারে প্রথম ওয়ানডে ৮ উইকেটে হারের পর শনিবার ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ওয়ানডেও ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজ নিউজিল্যান্ড জিতল এক ম্যাচ হাতে রেখেই। নিউজিল্যান্ডে এখনো পর্যন্ত স্বাগতিকদের হারাতে না পারা বাংলাদেশের সামনে আগামী বুধবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ।

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় শুরু হওয়া ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২ বল বাকি থাকতে ২২৬ রানে অলআউট হয়েছিল সফরকারীরা। নিউজিল্যান্ড সেটি পেরিয়ে যায় ৮৩ বল বাকি থাকতেই।

প্রথম দুই ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য শুধু একটা জায়গায়। প্রথম ম্যাচে টস জিতেছিল বাংলাদেশ, এবার নিউজিল্যান্ড। সকালের এক পশলা বৃষ্টির পর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। প্রথম ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রেখে খেলতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা এবারও ভালো হয়নি। সাত ওভারের মধ্যেই হারিয়ে ফেলে দুই ওপেনারকে।

ট্রেন্ট বোল্টকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে লোকি ফার্গুসনের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরেন লিটন দাস (৪ বলে ১)। এরপর বৃষ্টিতে কয়েক মিনিটের জন্য খেলা বন্ধ থাকে। খেলা শুরু হওয়ার পরই ফেরেন তামিম ইকবাল। ম্যাট হেনরির বলে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান (২৮ বলে ৫)।

১৬ রানেই দুই ওপেনারকে হারানোর পর প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন সৌম্য সরকার ও মিথুন। কিন্তু প্রথম ম্যাচের মতো ভালো শুরুর পর এদিনও ইনিংস বড় করতে পারেননি সৌম্য। দলীয় ৪৮ রানে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে সৌম্য ক্যাচ দেন স্লিপে রস টেলরের হাতে। ২৩ বলে ৩টি চারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান করেন ২২ রান।

মাশরাফি বিন মুর্তজার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামার উপলক্ষটা রাঙাতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। দুবার জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম ম্যাচের মতো আবারো অফ স্টাম্পের বল টেনে বোল্ড হন উইকেটকিপার এই ব্যাটসম্যান (৩৬ বলে ২৪)।

মুশফিকের পর মাহমুদউল্লাহ ফেরেন দ্রতই। টড অ্যাস্টলের শর্ট বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যান ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে (৮ বলে ৭)। তখন ৯৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ বিপদে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন মিথুন। ষষ্ঠ উইকেটে সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গড়েন ইনিংস সর্বোচ্চ ৭৫ রানের জুটি।



ব্যক্তিগত ৪৭ থেকে অ্যাস্টলকে পরপর ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে মিথুন তুলে নেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি, ৬৫ বলে। ফিফটির আগেই হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় ইনিংসটা আর বড় করতে পারেননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। অ্যাস্টলের পরের ওভারেই বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৬৯ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় মিথুন করেন ৫৭ রান। অবশ্য ইনিংসটি খেলতে ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন। ৫ রানে স্লিপে তার ক্যাচ ফেলেছিলেন টেলর।

১৬৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর দলের স্কোর দুইশ পার হয়েছে মূলত সাব্বিরের কল্যাণে। সপ্তম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের (১৬) সঙ্গে ২২ ও অষ্টম উইকেটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের (১০) সঙ্গে ১৬ রানের দুটি জুটি গড়েন সাব্বির। কিন্তু সাব্বিরের ৪৩ রানের ইনিংসটা শেষ হয় জেমস নিশামকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে। ৬৫ বলে ৭ চারে ইনিংসটি সাজান ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

মাশরাফি ও মুস্তাফিজুর রহমান শেষ উইকেটে ১৫ রানের জুটি গড়লেও পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেননি। দুই বল বাকি থাকতে নিশামের বলে বোল্টের দারুণ ক্যাচে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মাশরাফি (১৮ বলে ১৩)। ১২ বলে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মুস্তাফিজ।

১০ ওভারে ৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সেরা বোলার ফার্গুসন। নিশাম ও অ্যাস্টল নেন ২টি করে উইকেট। হেনরি, বোল্ট ও ডি গ্র্যান্ডহোমের শিকার একটি করে উইকেট।

লক্ষ্য তাড়ায় ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে ভালো সূচনা এনে দেন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। নিজের প্রথম ওভারে নিকোলসকে (২৩ বলে ১৪) ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ।

এরপর দ্বিতীয় উইকেটে কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে গাপটিলের ১৪৩ রানের বড় জুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। এ জুটি গড়ার পথেই গাপটিল তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৬তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা ডানহাতি ব্যাটসম্যান ফিফটি ছুঁয়েছিলেন ৩৩ বলে, পরের পঞ্চাশ করতে লেগেছে ৪৩ বল। দুটি মাইলফলকই ছুঁয়েছেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে।  

জয় থেকে ৩৯ রান দূরে থাকতে গাপটিলকে থামান মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের বাউন্সার পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে লিটনকে ক্যাচ দেন গাপটিল। ৮৮ বলে ১৪ চার ও ৪ ছক্কায় ১১৮ রানের ইনিংসটি সাজান ম্যাচসেরা হওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

টেলরকে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ফিফটি করে উইলিয়ামসন ৬৫ ও টেলর ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়