ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিভিন্ন এলাকায় ঝড়-শিলাবৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতি

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩১ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিভিন্ন এলাকায় ঝড়-শিলাবৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতি

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক এলাকায় এত শিলা পড়েছে, যাতে ঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। আমের কুঁড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ঝড়ো বাতাসে বহু গাছপালা উপড়ে গেছে।

ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবার সকালে লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী; দুপুরে দিনাজপুর, বিকেলে ঢাকা, পাবনা, গাইবান্ধা, সিলেট এবং সন্ধ্যায় ঢাকা, যশোর ও মাগুরায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। হালকা বৃষ্টিতে অস্বস্তিকর গরমের রেশ কাটলেও কয়েক দিন পর ফের তাপমাত্রা বাড়বে।

সিলেটে ঝড়ের মধ্যে টিনের চালের আঘাতে এক পথচারী নিহত হয়েছে। শিলার আঘাতে মাগুরার একজনের এবং দিনাজপুরে একজনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
 


যশোরের অভয়নগরে ঝড়ে ছিঁড়েপড়া বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে এক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অপর এক কলেজ ছাত্রী।

উত্তরের জেলায় ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়া ছাড়াও কোনো কোনো এলাকায় শিলার আঘাতে ঘরের টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসলের ক্ষেত, ঝড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি-গাছপালা।

মাগুরা : শিলার আঘাতে মাগুরায় সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের ডহরসিংড়া গ্রামের বদন মোল্লার ছেলে আকরাম হোসেন (৪৫) নিহত হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, এমন শিলাবৃষ্টি তারা কখনো দেখেননি। শিলা পড়ে পথঘাট, মাঠ সাদা হয়ে যায়। শিলাবৃষ্টি ১০ থেকে ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়। কোথাও কোথাও ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়েছে, ঘরের চাল উড়ে গেছে। এতে আম, লিচু, বোরো ধান এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
 


দিনাজপুর : দিনাজপুরের পার্বতীপুরে শিলাবৃষ্টিতে কৃষক সৈয়দ আলী (৫৫) নিহত হয়েছে। শিলার আঘাতে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। তাদের কয়েকজন উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শিলার আঘাতে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরো ধানের ক্ষতি না হলেও সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ৩৩৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস জানিয়েছে। পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ছোট ও মাঝারি প্রায় এক হাজার গাছপালা ভেঙে গেছে। জেলা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।

নীলফামারী : নীলফামারীর ডোমার ও ডিমলা উপজেলার দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কয়েক হাজার টিনের ঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
 


সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচু, মরিচ, তামাক, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে আহত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। 

ডোমার উপজেলার কেতকীবাড়ী ইউনিয়নের ঠাটারীপাড়া এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী রবিউল আলম ও আবু আহমেদ জানান, শিলাবৃষ্টিতে তাদের এলাকার অধিকাংশ ঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। শিলার আঘাতে ১০-১৫ জন আহত হয়েছে।

আহত ষাটোর্ধ্ব সাইফুন নাহার বলেন, তার জীবনে এত শিলাবৃষ্টি দেখেননি।

কেতকীবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুদ্দৌলা চৌধুরী জানান, শিলাবৃষ্টির কবলে তাদের বিদ্যালয়ের টিনের চালা ফুটো হয়ে ক্লাসের ভিতরে পানি প্রবেশ করে। নিরূপায় হয়ে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়।
 


ভোগাডাবুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক জানান, শিলার আঘাতে তার ইউনিয়নে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টিনের ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে। কেতকীবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হক দিপু বলেন, তার ইউনিয়নের কমপক্ষে আড়াই হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যশোর : যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো তিনজন। আহত তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, শুক্রবার রাতে ঝড় বয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের পাশে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়লে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়া থামলে ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ামাত্র তারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গাছের ডাল বিদ্যুতায়িত হয়। ভেঙে পড়া ওই ডালের স্পর্শে লাইজু (১৯) মারা যায়।

অভয়নগর থানার এএসআই শামসুজ্জামান জানান, লাইজু ছাড়াও একই স্থানে ফাতেমা বেগম (৪৫), ঐশী (১৯) এবং লাবিবা (১২) বিদ্যুতায়িত হয়। লাইজুকে বাঁচাতে গিয়ে ফাতেমা বেগম আহত হয়।

নিহত লাইজু স্থানীয় প্রেমবাগ গ্রামের মুস্তাহার আলীর মেয়ে। তিনি স্থানীয় কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়তেন। ফাতেমা বেগম নওয়াপাড়ার নিজামউদ্দিনের স্ত্রী। ঐশী প্রেমবাগ গ্রামের ফরহাদ হোসেনের এবং লাবিবা একই গ্রামের শামসুর রহমানের মেয়ে।

পাবনা : পাবনার চাটমোহর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে ঘর-বাড়ি, গাছ, ফসল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। শিলার আঘাতে এক গৃহবধূ নিহত ও নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

বিকেলে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি বয়ে যায় চাটমোহর পৌর সদর, উপজেলার মথুরাপুর, হরিপুর, বিলচলন, পার্শ্বডাঙ্গা, হান্ডিয়াল, নিমাইচড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের উপর দিয়ে। ৩০ মিনিটব্যাপী ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে মানুষ। ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়।

সন্ধ্যায় শিলাবৃষ্টি হয় ঈশ্বরদী উপজেলায়। শিলাবৃষ্টির সময় লিচু গাছের নিচে ডাল, পাতা কুড়ানোর সময় মাথায় শিলার আঘাতে গৃহবধূ জমেলা খাতুন (৫০) মারা যায়। তিনি উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা গ্রামের দেলবার প্রামাণিকের স্ত্রী।

লিচু প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিতি এই উপজেলায় লিচুর গুটির ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

চাটমোহর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক জানান, বড় বড় শিলার আঘাতে বেশিরভাগ টিনের ঘরের চাল ঝাঝরা হয়ে গেছে। বহু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

একই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি জনাব আলী ও রিয়াজ উদ্দিন মোল্লা জানান, তাদের জীবনে এত বড় শিলা কখনো দেখেননি। এক একটা শিলার ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

চাটমোহরে শিলার আঘাতে আহত হয়ে নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে। ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জমি থেকে তোলা রসুন অনেকে বাড়িতে নিতে পারেননি। বৃষ্টিতে তা ভিজে গেছে।
 


চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী, কাতুলী গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, রসুন তুলে জমিতে রেখেছিলাম বাড়িতে নেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই সময়টুকু পেলাম না। দুই বিঘা জমির রসুন শেষ হয়ে গেছে।

কৃষক চাঁদ আলী জানান, গম-ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে গম গাছ  মাটিতে পড়ে গেছে। ক্ষতবিক্ষত হয়েছে ভুট্টার গাছ। গুটি আম ও লিচুর কুঁড়ির  ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের উঠতি ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন শনিবার দুপুরে চাটমোহর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণ করেন।  



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মার্চ ২০১৮/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়