ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘরে স্মৃতি নেই

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫০, ১১ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘরে স্মৃতি নেই

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতি তরুণ প্রজম্মের কাছে তুলে ধরতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তেমনি একটি উদ্যোগ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নোয়খালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় রুহুল আমিনের নিজ গ্রাম বাগপাচরায় স্মৃতি জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে। বীরশ্রেষ্ঠের পারিবারিক ২০ শতক ভূমিতে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়।

 



গ্রন্থাগারে রয়েছে সাড়ে তিন হাজার বই ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন সাময়িকী। অন্যদিকে স্মৃতি জাদুঘর অংশে রয়েছে বিভিন্ন সময়ে তার পরিবারকে দেওয়া বীরশ্রেষ্ঠ পদকসহ ১৬টি পদক, সরকারি-বেসরকারি সম্মাননা স্মারক, আছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১৫৭টি আলোকচিত্র, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন নমুনা জাহাজ স্মারক। তবে স্মৃতি জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতি বিজড়িত কোনো স্মৃতিই নেই।

সারাদেশ থেকে দর্শনার্থীরা ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্মৃতি জাদুঘর দেখার জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে আসে, কিন্তু বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতি বিজোড়িত কোনো স্মৃতি না দেখে হতাশ হয়ে ফিরেন। তেমনি এক দর্শনার্থী নোয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এম ইলিয়াছ উদ্দিন। তিনি তার চার বন্ধুসহ দেখতে এসেছেন রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার ভেবেছি স্মৃতি জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখতে পাবো। আসলে স্মৃতি জাদুঘরটিতে দেখার মতো রুহুল আমিনের কোনো স্মৃতিই নেই।

এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে একটি সুপরিসর এবং সু-সজ্জিত পাঠ-কক্ষ ছাড়াও অভ্যর্থনা কক্ষ, কেয়ারটেকার ও লাইব্রেরিয়ানের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। জাদুঘরটিতে লাইব্রেরিয়ান, কেয়ারটেকার, মালি ও গার্ড থাকার কথা থাকলে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোয়ারটেকার ছাড়া বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে।

 



বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছোট বোন জাহানারা বেগমের মেয়ে শারমিন আক্তার লাবন্য অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও, এ জাদুঘরে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। জেলা পরিষদের আওতায় একজন কেয়ারটেকার দিয়ে যেন-তেন ভাবে জাদুঘরটির কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। কোনো গার্ড নেই, অধিকাকাংশ সময় জাদুঘরটি তালা মারা থাকে।

গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের কেয়ারটেকার স্থানীয় আলাউদ্দিন। ২০০৮ সালে জেলা পরিষদ দৈনিক বেতনে তাকে মাস্টার রোলে চাকরি দেয়। আলাউদ্দিন রাইজিংবিডিকে জানান, অন্য পদগুলো খালি থাকায় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে তার। আর তিনি বেতনও পাচ্ছেন খুব কম।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিক ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নোয়াখালী প্রতিনিধি আবু নাসের মঞ্জু রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতিষ্ঠার নয় বছরেও পূর্ণতা পায়নি এই স্মৃতি কমপ্লেক্সটি। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘরকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

 



জাদুঘরের সময়সূচি ও বাৎসরিক কর্মসূচি

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আয়োজন করে পালন করা হয় রুহুল আমিনের মৃত্যুবার্ষিকী।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি সোনাইমুড়ী অথবা নোয়াখালী মাইজদী থেকে সোনাইমুড়ী উপজেলার কলেজ গেট যেতে হবে। কলেজ গেট থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় সি.এন.জি অথবা অটো-রিক্সায় রুহুল আমিন সড়ক দিয়ে যেতে হবে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নান্দিয়াপাড়া বাজারে। নান্দিয়াপাড়া বাজার থেকে দক্ষিণে তাকালেই ২০০ গজ দূরে দেখা যায় বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতি জাদুঘর। পাশেই রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠের বাড়ি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়